অভিবাসীদের উদ্ধারকারী জাহাজ ইতালির বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ায় দেশটির সমালোচনা করেছে ফ্রান্স। প্রতিবাদ জানাতে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইতালি। অভিভাবকহীন ১২৩ জন শিশু থাকা অভিবাসীদের উদ্ধারকারী ওই জাহাজকে বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেছিলেন, ইতালির আচরণ ‘পাগলামিপূর্ণ ও দায়িত্বজ্ঞানহীন।’ জবাবে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি বলেছেন, ‘কারও কাছ থেকে আমাদের দানশীলতা, স্বেচ্ছাসেবিতা, উদার হওয়া ও ঐক্যের ধারণা’ শিখতে হবে না। সালভিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি একই সঙ্গে ইতালির উপপ্রধানমন্ত্রীও। তিনি অভিবাসীবিরোধী ‘অ্যান্টি ইমিগ্র্যান্ট লিগেরও’ প্রধান। ইতালির সমালোচনা করার জন্য ফ্রান্সকে ক্ষমা প্রার্থনার পরামর্শ দিয়েছেন সালভিনি। তার ভাষ্য, যে দেশ নিজেদের সীমান্তে নিয়মিত অভিবাসীদের আটক করে, সেই দেশের কাছ থেকে সমালোচনা শুনতে প্রস্তুত নয় ইতালি। বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ফ্রান্সের মন্তব্যের পর ইতালির অর্থমন্ত্রী জিওভানি ট্রিয়া ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠক বাতিল করে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট জাহাজাটিকেও ইতালীয় বন্দরের আশা বাদ দিয়ে স্পেনের দিকে রওনা হতে হয়েছে।
ইতালির রক্ষণশীল সরকারের সিদ্ধান্তে দেশটির ‘মেরিটাইম রেসকিউ কোঅর্ডিনেশন সেন্টার’ উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের নিয়ে ইতালির বন্দরে নোঙর করতে চাওয়া জাহাজটিকে ভূমধ্যসাগরেই স্থির থাকার আদেশ দিয়েছিল। অ্যাকুরিয়াস নামের জাহাজটিতে ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ ছিলেন, যাদের লিবিয়া উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতায় ইতালির নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডও অংশ নিয়েছিল। ভিন্ন ভিন্ন উদ্ধার তৎপরতায় উদ্ধারকৃতদের অ্যাকুরিয়াসে তুলে দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইতালির সমালোচনা করেন। আর তাতেই ইতালি ফ্রান্সের কূটনৈতিক সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
ক্ষুব্ধ ইতালির পাল্টা বক্তব্যের পর বুধবার সুর নরম করেছে ফ্রান্স। ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অ্যাগনেস ভন দের মুল বলেছেন, ‘অভিবাসীদের কারণে যে ইতালির ওপর চাপ পড়ছে তা আমরা বুঝি।’ তারা অভিবাসীদের বিষয়ে ইতালি সরকারকে সহায়তা করারও আশ্বাস দেন। কিন্তু তাতেও ইতালির ক্ষোভ কমেনি। ফ্রান্সের মুখপাত্রের বক্তব্যের পরেও ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এনজো মোয়াভেরো বলেছেন, ‘ফরাসি প্রেসিডেন্ট যে মন্তব্য করেছিলেন তা অগ্রহণযোগ্য।’
এর আগে ইতালি মাল্টাকে ওই অভিবাসীদের গ্রহণ করার আহ্বান জানালেও মাল্টা সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সালভেনির দল নির্বাচনের আগে ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, নির্বাচিত হলে তারা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠিন ভূমিকা গ্রহণ করবে। শনিবার তিনি বলেছেন, মানব পাচার বন্ধ করতে হবে। আর যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনুমোদনহীন অভিবাসীদের দিয়ে কাজ করায় তাদেরকেও না বলে দিতে হবে। তার ভাষ্য, ‘মাল্টা কাউকে নেয় না। ফ্রান্স অভিবাসীদের সীমানা থেকেই বের করে দেয়। আর স্পেন তো সীমান্তে গুলি চালায়।’ তিনি আরও বলেছেন, যেসব সংগঠন সমুদ্র থেকে ডুবন্ত অভিবাসীদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন তিনি। তিনি মনে করেন, এসব সংগঠন মানব পাচারকারীদের সহযোগী।
ওই জাহাজে থাকা মানুষেরা বেশিরভাগই সাব-সাহারান এলাকার বাসিন্দা। এদের মধ্যে প্রায় ৪০০ জনকে উদ্ধার করেছে ইতালির নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বাণিজ্যিক জাহাজ। উদ্ধারকৃতদের ১২৩ জন এমন শিশু যাদের সঙ্গে কোনও অভিভাবক নেই। ১১ জন খুবই ছোট শিশু ও ৭ জন গর্ভবতী নারী রয়েছেন ওই জাহাজে। শিশুগুলোর বেশিরভাগই ইরিত্রিয়া, ঘানা, নাইজেরিয়া ও সুদানের বাসিন্দা।
শেষ পর্যন্ত অভিবাসীদের নিয়ে অ্যাকুরিয়াস জাহাজটিকে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে স্পেনের ভ্যালেনসিয়া বন্দরের দিকে যাত্রা করতে হয়েছে। বুধবার ভ্যালেনসিয়ার দিকে যাত্রা করা অ্যাকুরিইয়াসের সেখানে পৌঁছানোর কথা আগামী শনিবার।