এসএম হেলাল: আজ এক জ্ঞানতাপস, এক আদর্শ শিক্ষক, এক আলোকিত মানুষ – অধ্যাপক মুহাম্মদ বদরুজ্জামান’র জন্মদিন। তিনি শুধু একজন শিক্ষক নন, তিনি একজন পথপ্রদর্শক, একজন সফল অভিভাবক, একজন আলোর দিশারী। তাঁর জ্ঞান, শিক্ষা আর জীবনদর্শন অসংখ্য শিক্ষার্থী ও মানুষের জীবনে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে কাজ করে। ১৯৬৮সালের ১২ মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন এক শিক্ষিত ও সম্মানিত পরিবারে। তাঁর জন্ম বালাগঞ্জের দেওয়ানবাজার ইউনিয়নের বশিরপুর মাষ্টার বাড়ি পৈতৃক নিবাসে। সিলেট শহরের মেজরটিলা শ্যামলী আবাসিক এলাকায় বর্তমানে তাঁর বসবাস।
পিতা মরহুম জহুর উদ্দিন আহমদ ও মাতা মরহুমা বেগম হুসনে আরা চৌধুরীর আদর্শ ও স্নেহের ছায়ায় তিনি বড় হয়েছেন। ওসমানীনগরের বেরাখাল গ্রামে তাঁর মায়ের পরিবার ও শিক্ষাদীক্ষায় অগ্রসর এক পরিবার। সুপ্রীম কোর্টের বর্তমান বিচারপতি খিজির আহমদ চৌধুরী তাঁর মামা। প্রবাসে ছড়িয়েছিটিয়ে আছেন তাঁর বাবার পরিবারের আলোকিত মানুষজন। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন সিঙ্গাপুরের আদালতে একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত সাবেক বিচারপতি আনোয়ারুল হক। যিনি তাঁর বাবার আপন চাচাত ভাই।
ভাই-বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ভাইদের মধ্যে বড়। পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বড় হওয়া মানুষদের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস আর দৃঢ়তা থাকে, তাঁর মধ্যেও তা প্রবলভাবে উপস্থিত। তিনিসহ তিন ভাইয়ের মধ্যে দুইজন যুক্তরাজ্যে প্রবাসী। মেঝ ভাই লেখক ও সাংবাদিক মুহাম্মাদ শরীফুজ্জামান, আর কনিষ্ঠ ভাই মুহাম্মদ সাইফুজ্জামান একজন প্রতিভাবান ব্যবসায়ী।
মুহাম্মদ বদরুজ্জামান স্থানীয় বশিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাঠশালা, নবগ্রাম হাজী মো. ছাইম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, তাজপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, এমসি কলেজ থেকে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞান বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী, পরিশ্রমী ও একাগ্রচিত্ত। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন কেবল নিজের জন্য শেখা ছিল না—তিনি চেয়েছিলেন শেখার আলো অন্যদের মধ্যে ও ছড়িয়ে দিতে। তাই উচ্চশিক্ষা শেষে তিনি শিক্ষাকেই জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। পারিবারিক উদ্যোগে নিজ বাড়িতেও চালু করেছেন মক্তব শিক্ষা।স্থানীয় একটি স্কুলের দাতা সদস্য ও তাঁর পরিবার।
বর্তমানে তিনি সিলেটের গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। কিন্তু তাঁর ভূমিকা শুধুই একজন শিক্ষকের নয়—তিনি ছাত্রদের জীবন গড়ার কারিগর, যিনি ক্লাসরুমের গণ্ডি পেরিয়ে তাদের মনন গঠনের কাজে নিবেদিত।
তাঁর পড়ানোর ধরণ, তাঁর কথাবার্তা, তাঁর জীবনদর্শন ছাত্রদের কাছে এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। তিনি বিশ্বাস করেন, শিক্ষা মানে শুধু বই মুখস্থ করা নয়; চিন্তার গভীরতা বাড়ানো, আত্মবিশ্বাস তৈরি করা এবং নৈতিকতার ভিত্তি গড়ে তোলা। তাঁর শিক্ষাদানের ফলে বহু শিক্ষার্থী শুধু ভালো ফলাফল করেনি, তারা জীবনের প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করেছে।
তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে যেমন শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলেন, তেমনি একজন আদর্শ বাবা হিসেবে সন্তানদের সফলতার মূল ভিত্তি তৈরি করেছেন। তাঁর জীবনসঙ্গীনী মোর্শেদা খানম চৌধুরী সন্তানদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ও রাখছেন অসামান্য ভূমিকা।
তাঁদের চার সন্তানই শিক্ষা ও সাফল্যের পথে এগিয়ে চলেছে। একমাত্র ছেলে টিএম জামান মাহী সিলেট এমসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইংরেজী স্নাতক (সম্মান) বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। বড় মেয়ে তাহরিমা জামান আজহা সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় মেয়ে সাবরিনা জামান ফাবিহা ঢাকা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এবং ছোট মেয়ে ওয়াজিহা জামান ফাতিহা সিলেট আল-আমিন জামেয়া ইসলামিয়া হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর কৃতি শিক্ষার্থী। সন্তানদের শিক্ষার প্রতি ভালোবাসা ও কঠোর পরিশ্রমের শিক্ষা তিনি নিজেই তাঁদের মধ্যে বপন করেছেন। বাবা হিসেবে তিনি শুধু দায়িত্ব পালন করেননি, বরং তাঁদের জীবনের প্রতিটি ধাপে পাশে থেকেছেন, অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন।
নির্দ্বিধায় বলা যায়, অধ্যাপক বদরুজ্জামান শুধু একজন শিক্ষক নন—তিনি একজন চিন্তাবিদ, একজন সৎ ও আদর্শবান মানুষ। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রকৃত শিক্ষা কেবল ডিগ্রি অর্জনের জন্য নয়; এটি মানুষের মন ও মানস গঠনের জন্য, জীবনকে সুন্দর ও মহৎ করার জন্য। তাঁর শিক্ষাদানের ধরণ, তাঁর জীবনবোধ, তাঁর আন্তরিকতা তাঁকে শিক্ষার্থীদের কাছে একজন শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত করেছে। ক্লাসের ভেতরে-বাইরে সবার প্রিয়, একজন উন্নত মনের মানুষ তিনি। তাঁর ব্যক্তিত্বের ছায়ায় বহু শিক্ষার্থী জীবনের পথ খুঁজে পেয়েছে। আজ তাঁর জন্মদিনে তাঁকে জানাই অন্তরের গভীর থেকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা।
অধ্যাপক মুহাম্মদ বদরুজ্জামান, আপনি শুধু একজন শিক্ষক নন, আপনি এক প্রতিষ্ঠান, এক প্রেরণার নাম। আপনার শিক্ষা, জীবনদর্শন ও মানবিকতা আমাদের পথ দেখাক আরও অনেক বছর। শুভ জন্মদিন!