পাকিস্তান দাবি করেছে, বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) তাদের আকাশসীমায় ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে আজাদ-কাশ্মিরে ভারতীয় বিমান হামলার একদিনের মাথায় এ ঘটনা ঘটলো। ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করার খবর নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারবোধ থেকেই নিজেদের আকাশসীমায় ভারতীয় বিমান প্রতিহত করা হয়েছে। বিমানে থাকা ভারতের দুই পাইলটকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। এদিকে ভারতীয় পুলিশ রয়টার্স ও আলজাজিরাকে বলেছে, এদিন ‘কাশ্মিরের বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে’ তাদের একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে দুই পাইলট ও এক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। তবে পাকিস্তানি আক্রমণে ওই বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত করেনি তারা। এদিকে নিউজ এইটিন জানিয়েছে, পাকিস্তানের হাতে পাইলট গ্রেফতার হওয়ার দাবি নাকচ করে দিয়েছে ভারতের সেনাসূত্র।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় আধা সামরিক বাহিনীর ৪৪ সদস্য নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করে। মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তান নিয়ন্ত্ররিত কাশ্মিরে হামলা শেষে দাবি করে, ওই জইশ-এর ঘাঁটিই ছিল তাদের লক্ষ্য। তাদের আকাশসীমায় ঢুকে বোমাবর্ষণ করতে পারার ভারতীয় দাবিকে অস্বীকার করলেও পাকিস্তান বলেছিল, তারা ‘যথাসময়ে, যথাস্থানে’ ভারতীয় হামলার জবাব দেবে। বুধবার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আসিফ গফুর টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে দাবি করেন, বুধবার সকালে নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে ভারতে বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান।
আন্তবাহিনী গণসংযোগ পরিদফতরের মহাপরিচালক আসিফ গফুর টুইটারে জানান, দুই ভারতীয় বিমানের একটি নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন করে পাকিস্তানি সীমান্তের অংশে আর অপরটি আজাদ কাশ্মিরে ঢোকার পর ভূপাতিত করা হয়েছে। টুইটারে এক পাইলট গ্রেফতার হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। পরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, দুই পাইলটকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে কাশ্মিরের পাকিস্তান অংশে ভারতীয় বাহিনীর হামলার খবরে ভারতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। দেশটিতে একদিকে বইছে উৎসবের আমেজ, অন্যদিকে পাকিস্তানের পাল্টা হামলার ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের। হামলা থেকে বাঁচতে বাংকার খুঁড়ছেন তারা। বাংকার তৈরির পর সেখান থেকে পানি নিষ্কাশন করছেন জম্মু-কাশ্মিরের কিছু গ্রামবাসী। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এমন ছবিই বলে দেয় কতটা আতঙ্কে রয়েছেন সীমান্তের মানুষ।
সীমান্তে আতঙ্ক থাকলেও পাকিস্তানে হামলার খবরে রীতিমতো উদযাপনে মেতেছে ভারতের অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারা। কোথাও লোকজন রাস্তায় নেমে এসে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। কোথাও আনন্দ মিছিল আবার কোথাও মিষ্টি বিতরণ। সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বিভিন্ন স্থানে বাজি পুড়িয়ে উল্লাস প্রকাশ করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামাতে ‘সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের’ গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বাহিনীটির অন্তত ৪০ জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের ভেতরে বোমাবর্ষণ করে। সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স।