নজমুল কবিরঃ
ঢাকায় জন্ম। সেন্ট জোসেফ হাই স্কুল, নটরডেম কলেজ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইবিএ, এমবিএ। এরপর ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকার মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় এমবিএ। দেশে ফিরে এসে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র লেকচারার। এমন উজ্জ্বল মেধার মানুষটিকে তার এই পরিচয়ে বাংলাদেশের অনেকেই হয়তো চিনবে না। কিন্তু সংগীতশিল্পী ‘তাহসান’! একবাক্যে সকলেই চিনে। তাহসান নামের এই মেধাবী শিক্ষার্থী, শিক্ষকের ভেতরকার প্রতিভাটি ছাপিয়ে কন্ঠশিল্পী কিম্বা নাট্যাভিনেতার শিল্পীসত্তাটি বেশি আলো ছড়িয়েছে। এই স্মার্ট এবং শিক্ষিত রুচিশীল শিল্পীকে একেবারে অন্যভাবে সকলের কাছে পরিচিত করে তুলেছে এক নারীর অরুচিকর ভূমিকার মাধ্যমে। সেটিতে শিল্পী তাহসানের কোন ভূমিকা নেই। আর সেটি তার শিল্পীসত্তাকে হত্যা করতে পারেনি। প্রতিভাকে স্তব্ধ করতে পারেনি। বরং শ্রোতাসমাজে কিম্বা শিক্ষায়তনে তার দৃঢ়চেতা ভূমিকার মাধ্যমে শ্রোদ্ধাবোধকে আরো শক্তিশালী এবং বিস্তৃত করে তুলেছে। এই প্রবাসে সংগীত পাগল শ্রোতাদের কাছে শিল্পী তাহসানের গানের কথা, সুর আর গায়ন ভঙ্গি ‘এক ভাঙা মনের আকুতি’ হয়ে ধরা দেয়। উন্মাতাল হয়ে তাহসানের কন্ঠে কন্ঠ মেলায়! এমনই এক মোহময় আবহ তৈরি করার সুযোগ করে দিয়েছে ‘ফঁসে আভেক রাব্বানী’র সহযোগী সংস্থা ‘ওফিওরা’। প্যারিসের অন্যতম এবং ঐতিহ্যমন্ডিত Casino de Paris এর অভিজাত মিলনায়তনে গত ২৬ ডিসেম্বর সোমবার ‘উইন্টার ফেস্ট’ শিরোনামে বাংলাদেশ থেকে আসা ব্যান্ড সংগীত শিল্পী তাহসান, ব্যান্ড দল Ashes আর প্যারিসের ‘অসমাপ্ত’ Maxel, VAI’S আর র্যাপ শিল্পী শান্ত – সম্মিলিত সকলের পারফরম্যান্স ‘উইন্টার ফেস্ট’ কে সামারের আমেজে নিয়ে এসেছে।
আমার কল্পনা জুড়ে, তুমি আর তো কারো নও শুধু আমার, আমি আবার তোমার কাছে ফিরে যেতে চাই, স্বপ্নের বালুকায়, কেউ কি পা লুকায়, ফেরাতে পারিনি আমি…… এমন অসংখ্য গাওয়া গানের ভেতর তাহসান যেমন তার প্রিয়তমাকে খোঁজে, অনুভবে কাছে টানে তেমনি শ্রোতা-দর্শকেরাও এই দূর প্রবাসে থেকে তার প্রিয়জনকে অনুভবে ছুঁয়ে ফেলে। তাহসানের প্রতিটি গানের ভেতরই এক-ধরনের বিচ্ছেদের হাহাকার, বন্ধন ছেঁড়া বেদনার বালুচরে ভেসে আসা নিঃশব্দ চিৎকার। মাত্র কয়েকটি গানে মঞ্চ মাতিয়ে রাখা তাহসান ফ্রান্সপ্রবাসী বাংলাদেশীদের মনে এক গভীর দাগ কেটে গেলেন। তাহসানের আগেই
ব্যান্ডদল Ashes তাদের পরিবেশনা দিয়ে শ্রোতা-দর্শকের মন ভরিয়ে দেয়।
তার সাথে সাথে প্যারিসের স্থানীয় শিল্পী এবং তাদের ব্যান্ডদল বিভিন্ন গান গেয়ে মাতিয়ে রাখে।
এই আয়োজনে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠান উপভোগ করে। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা অনুষ্ঠানটিকে সুচারুভাবে সম্পন্ন করবার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
সফল এই অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্দেশ্য ও সাফল্যের ব্যাপারে ‘ফ্রান্স দর্পণ’ পত্রিকার প্রতিবেদক উদ্যোক্তা অফিওরা’র কর্নধার রাব্বানী খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমরা যান্ত্রিক জীবন যাপন করি। এই ধরণের উদ্যেগের মাধ্যমে ছোট্ট একটা ব্র্যাক এবং নিজের জন্য কিছু মেমোরি তৈরী করার সুযোগ করে দেয়া। তাছাড়া বাংলা ব্যান্ড মিউজিক আমাদের ছোটবেলার সকল মধুর স্মৃতির সাথে মিশে আছে। অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকায় এই ধরণের ইভেন্ট প্রায় সময় হয়ে থাকে। আমরা সেগুলো নিয়ে আলোচনা করি। আমাদের উদ্যেশ্য যেন আমরা এমন ইভেন্ট করি যাতে পুরো ইউরোপে বাংলা সংগীত প্রসারে আমরা পথ প্রদর্শক হতে পারি। তিনি আরো জানান, ‘আমরা সফল কেননা ২০২২ সালেই আমরা দুটো বিশাল ইভেন্ট সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি এবং আমাদের ডাকে সারা দিয়েছে হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী।’
অনুষ্ঠানে আগত দর্শক-শ্রোতাদের অনেকেই বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের পাশাপাশি ফ্রান্সপ্রবাসী শিল্পীদের পারফর্ম করার সুযোগকে স্বাগত এবং সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা এমন একটি অভিজাত মিলনায়তনে দেশীয় শিল্পীদের পরিবেশনার আয়োজনকেও সাধুবাদ জানিয়েছে।
অনুষ্ঠানে সংস্থার প্রধান রাব্বানী খান ‘অফিওরা’য় সার্ভিস প্রদানকারী টীমকে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি ঘোষণা করেন যে, সামার ফেস্ট – ২০২৩ অনুষ্ঠিত হবে ২৫ জুন।