ঢাকা ০৮:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
কাজের আওতায় অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বৈধতার শর্ত শিথিল করল স্পেন শহীদ আবু সাঈদসহ সবার প্রতি সালাম জানালেন বিলেতের প্রধান কবি আহমেদ ময়েজ বালাগঞ্জে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যেগে মানববন্ধন প্যারিসে খিয়াং নয়ন রচিত মোটিভেশনাল বিষয়ক ‘Impression de vie’ জীবনের ছাপ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন বালাগঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে- নবাগত ওসি নির্মল দেব এর মতবিনিময় ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নামে প্যারিসে রাস্তার নামকরণ: একটি গৌরবময় মুহূর্ত বাংলাদেশে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ফ্রান্সের তুলুজে বিশাল সমাবেশ প্যারিসের ঐতিহাসিক রিপাবলিক চত্বরজুড়ে বিক্ষুব্ধ বাংলাদেশ বালাগঞ্জের হাফিজ মাওলানা সামসুল ইসলাম লন্ডনের university of central Lancashire থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করলেন বালাগঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হাজী রফিক আহমদ এর মতবিনিময়

ক্রোয়েশিয়ার রাজনৈতিক ও ভৌগলিক প্রেক্ষাপট জেনে নিন

  • আপডেট সময় ১০:০৫:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুলাই ২০১৮
  • ৩৬৬ বার পড়া হয়েছে

সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। আজ মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে চলতি আসরের ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া।

ফরাসিরা পুরো টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেললেও একের পর এক চমক দেখিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ক্রোয়েটরা। সেই সাথে লুকা মদ্রিচদের ছন্দময় ফুটবলের উল্লাসে মেতেছে পুরো ফুটবল জগত।
প্রসঙ্গত, ২০ বছর আগে ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে এসেছিল ছোট্ট এই দেশটি। সেইবার ফ্রান্সের কাছেই সেমিফাইনালে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। ফুটবলের জাদুতে বর্তমানে ক্রোয়েশিয়া গোটা বিশ্বের নজর কাড়লেও দেশটির রাজনৈতিক ও ভৌগলিক ইতিহাসটা মোটেও সরল না। মাত্র ৪৫ লাখ জনসংখ্যার এই দেশটি ১৯৯১ স্বাধীনতা পায়।
১৯১৮ সালে দক্ষিণ ইউরোপে সার্বিয়া, মন্টেনিগ্রো, স্লোভানিয়া, মেসিডোনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা মিলে গঠিত হয়েছিল যুগোস্লাভিয়া। যুগোস্লাভিয়া নামের অর্থ দক্ষিণ স্লাভদের দেশ। পূর্ব ইউরোপের বাসিন্দাদের বেশির ভাগই নৃতাত্ত্বিক দিক দিয়ে বৃহত্তর স্লাভ জাতির অংশ।

নাৎসি জার্মানি যুগোশ্লাভিয়ার ওপর ১৯৪১ সালে হামলা চালায়। যুগোশ্লাভিয়ার সর্বোচ্চ সামরিক নেতারা জার্মানির কাছে পরাজয় বরণ করেন। যুগোশ্লাভিয়ার রাজা তখন বিদেশে তার সরকার স্থাপন করেন।
যুগোশ্লাভিয়ায় সেই সময় জার্মানির সামরিক দখল কায়েম হয়েছিল। আবার যুগোশ্লাভিয়ার অনেক ভূখন্ড দখল করে নিয়েছিল বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি ও ইতালি। যুদ্ধের পরে মার্শাল টিটোর নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি ঝুঁকে এই দেশটি।
যুগোশ্লাভিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টি মার্শাল টিটোর নেতৃত্বে বিদেশী আগ্রাসনকারীদের প্রতিরোধ করে এবং সারাদেশের জনগণকে নিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করার লক্ষ্যে এগোতে থাকে। সেই সময় যুগোশ্লাভিয়া কমিউনিস্ট পার্টি যুগোশ্লাভিয়া জাতীয় মুক্তি আন্দোলন গঠন করেছিল। ১৯৪৩ সালে মার্শাল টিটোর নেতৃত্বে যুগোশ্লাভিয়া জাতীয় মুক্তি মোর্চা প্রতিষ্ঠা করে অস্থায়ী সরকারের দায়িত্ব নেয়। যুগোশ্লাভিয়ার জাতীয় বাহিনী ৭ বার জার্মানির আক্রমণ প্রতিরোধ এবং ১৯৪৪ সালের যুদ্ধ করে দেশের প্রায় অধিকাংশ এলাকাই মুক্ত করে। পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের বাহিনী আর যুগোশ্লাভিয়ার যৌথ বাহিনী সম্মিলিতভাবে যুগোশ্লাভিয়াকে মুক্ত করার যুদ্ধে নামে। রাজধানী বেলগ্রেড মুক্ত হয়, যুদ্ধে মোট ১৫ হাজার জার্মান সেনা মারা যায় এবং ৯ হাজার জনকে আটক করা হয়।

১৯৪৫ সালে যুগোশ্লাভিয়া গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের অস্থায়ী সরকার স্থাপন করেন। সোভিয়েট ইউনিয়ন আর যুগোশ্লাভিয়ার যৌথবাহিনী সারা দেশকে মুক্ত করে। পরে নব্বইয়ের দশকে একে একে চারটি যুদ্ধের মাধ্যমে ক্রোয়েশিয়া, মেসিডোনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা আর স্লোভেনিয়া স্বাধীন হয়ে যায়। সার্বিয়া আর মন্টেনিগ্রো ‘ফেডারেল রিপাবলিক অব যুগোস্লাভিয়া’ নাম নিয়ে কিছুকাল টিকে থাকলেও ২০০৬ সালে মন্টেনিগ্রো স্বাধীন হয়ে গেলে ইতিহাসে বিলীন হয়ে যায় যুগোস্লাভিয়া নামের দেশটি। পরবর্তীতে সার্বিয়া ভেঙে দু’টি রাষ্ট্র হয়। একটি সার্বিয়া অপরটি কসোভো।

১৯৩০ সালে যখন ফিফা বিশ্বকাপের প্রথম আসর বসেছিল তখন তৎকালীন যুগোস্লাভিয়া উঠেছিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। সেবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরে চতুর্থস্থান পেয়েছিল মধ্য ইউরোপের দেশটির। প্রথম বিশ্বকাপের আসরের ১৭ সদস্যের এই দলে অধিকাংশই ছিলেন বর্তমান সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রোর খেলোয়াড়। সেবার অবশ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে দেওয়া হয়নি ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়দের। পরবর্তীকালে যুগোস্লাভিয়া ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছে। নতুন নতুন দেশের যেমন জন্ম নিয়েছে তেমনই গঠিত হয়েছিল তাদের নিজস্ব ফুটবল ফেডারেশন।

গৃহযুদ্ধের আর ভাঙনের মধ্যে দিয়ে ছোট ছোট দেশের জন্ম হলেও ফুটবলকে এরা সকলেই গুরুত্ব দিয়েছে। তাই ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, স্লোভানিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা মতো দেশগুলোকে বিশ্বকাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্যায় অংশ নিতে দেখা যায়। এদের মধ্যে অবশ্যই সবেচেয়ে ভাল পার্ফরমেন্স হল ক্রোয়েশিয়ার। ১৯৯৮, ২০০২, ২০০৬, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপে অংশ নিতে পেরেছে। তবে ১৯৯৩ সালে ফিফা ও উয়েফা’র সদস্যপদ লাভ করে ক্রোয়েশিয়া ফুটবল দল। প্রথমবারের মতো বড় ধরনের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশ নিয়ে তারা তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন করে ১৯৯৬ সালের উয়েফা ইউরো কাপে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
১৯৮০ সালে টিটোর মৃত্যুর পর থেকেই যুগোস্লাভিয়ায় রাজনৈতিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে, বাড়তে থাকে রাজনৈতিক হানাহানি। কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন থেকে ক্রমশ জাতীয়তাবাদীর দিকে ঝুঁকতে থাকে ক্রোয়োশিয়া অঞ্চলের মানুষ। ১৯৯০ সালে কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে জাতীয়তাবাদীদের উত্থান দেখা যায়। সেবারই প্রথম একাধিক রাজনৈতিক দলের নির্বাচন হয়। ক্রোয়েশিয়ার মানুষ স্বাধীন আলাদা রাষ্ট্রের দাবি তোলে। তারপরে গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে নতুন রাষ্ট্র ক্রোয়েশিয়ার জন্ম।

ওই সময়টায় গোটা বিশ্বজুড়েই কমিউনিস্ট বিরোধী হাওয়া বইতে থাকে। পৃথিবীর রাজনীতির মানচিত্রটা ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে। স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বার্লিন দেয়াল ভেঙে এক হয়েছিল দুই জার্মানি। কিন্তু সমাজতন্ত্রের ধ্বজাধারী সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুগোস্লাভিয়া এবং চেকোস্লোভাকিয়া ভেঙে টুকরো টুকরো হল। সোভিয়েত ভেঙে ১৫ টুকরো হলো। যুগোস্লাভিয়া প্রথমবার ভাঙার পরও কয়েকবার ভাঙনের শিকার হয়েছিল।

এই ছোট্ট দেশটির বর্তমান সংবিধান ১৯৯০ সালের ২২শে ডিসেম্বর গৃহীত হয়েছিল আর ১৯৯১ সালের ২৫ জুন যুগোস্লাভিয়া থেকে একেবারে বিছিন্ন হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ক্রোয়েশিয়ার রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোতে পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী একটি বহুদলীয় ব্যবস্থাতে সরকারের প্রধান। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে এবং আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ক্রোয়েশীয় সংসদ বা সাবর’র হাতে ন্যস্ত। বিচার ভাগ নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন বিভাগ হতে স্বাধীন।

সূত্র: কলকাতা টুয়েন্টিফোর

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

লক ডাউন পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফ্রান্সে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি

যুক্তরাজ্যে করোনার মধ্যেই শিশুদের মাঝে নতুন রোগের হানা

কাজের আওতায় অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বৈধতার শর্ত শিথিল করল স্পেন

ক্রোয়েশিয়ার রাজনৈতিক ও ভৌগলিক প্রেক্ষাপট জেনে নিন

আপডেট সময় ১০:০৫:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুলাই ২০১৮

সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। আজ মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে চলতি আসরের ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া।

ফরাসিরা পুরো টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেললেও একের পর এক চমক দেখিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ক্রোয়েটরা। সেই সাথে লুকা মদ্রিচদের ছন্দময় ফুটবলের উল্লাসে মেতেছে পুরো ফুটবল জগত।
প্রসঙ্গত, ২০ বছর আগে ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে এসেছিল ছোট্ট এই দেশটি। সেইবার ফ্রান্সের কাছেই সেমিফাইনালে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। ফুটবলের জাদুতে বর্তমানে ক্রোয়েশিয়া গোটা বিশ্বের নজর কাড়লেও দেশটির রাজনৈতিক ও ভৌগলিক ইতিহাসটা মোটেও সরল না। মাত্র ৪৫ লাখ জনসংখ্যার এই দেশটি ১৯৯১ স্বাধীনতা পায়।
১৯১৮ সালে দক্ষিণ ইউরোপে সার্বিয়া, মন্টেনিগ্রো, স্লোভানিয়া, মেসিডোনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা মিলে গঠিত হয়েছিল যুগোস্লাভিয়া। যুগোস্লাভিয়া নামের অর্থ দক্ষিণ স্লাভদের দেশ। পূর্ব ইউরোপের বাসিন্দাদের বেশির ভাগই নৃতাত্ত্বিক দিক দিয়ে বৃহত্তর স্লাভ জাতির অংশ।

নাৎসি জার্মানি যুগোশ্লাভিয়ার ওপর ১৯৪১ সালে হামলা চালায়। যুগোশ্লাভিয়ার সর্বোচ্চ সামরিক নেতারা জার্মানির কাছে পরাজয় বরণ করেন। যুগোশ্লাভিয়ার রাজা তখন বিদেশে তার সরকার স্থাপন করেন।
যুগোশ্লাভিয়ায় সেই সময় জার্মানির সামরিক দখল কায়েম হয়েছিল। আবার যুগোশ্লাভিয়ার অনেক ভূখন্ড দখল করে নিয়েছিল বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি ও ইতালি। যুদ্ধের পরে মার্শাল টিটোর নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি ঝুঁকে এই দেশটি।
যুগোশ্লাভিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টি মার্শাল টিটোর নেতৃত্বে বিদেশী আগ্রাসনকারীদের প্রতিরোধ করে এবং সারাদেশের জনগণকে নিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করার লক্ষ্যে এগোতে থাকে। সেই সময় যুগোশ্লাভিয়া কমিউনিস্ট পার্টি যুগোশ্লাভিয়া জাতীয় মুক্তি আন্দোলন গঠন করেছিল। ১৯৪৩ সালে মার্শাল টিটোর নেতৃত্বে যুগোশ্লাভিয়া জাতীয় মুক্তি মোর্চা প্রতিষ্ঠা করে অস্থায়ী সরকারের দায়িত্ব নেয়। যুগোশ্লাভিয়ার জাতীয় বাহিনী ৭ বার জার্মানির আক্রমণ প্রতিরোধ এবং ১৯৪৪ সালের যুদ্ধ করে দেশের প্রায় অধিকাংশ এলাকাই মুক্ত করে। পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের বাহিনী আর যুগোশ্লাভিয়ার যৌথ বাহিনী সম্মিলিতভাবে যুগোশ্লাভিয়াকে মুক্ত করার যুদ্ধে নামে। রাজধানী বেলগ্রেড মুক্ত হয়, যুদ্ধে মোট ১৫ হাজার জার্মান সেনা মারা যায় এবং ৯ হাজার জনকে আটক করা হয়।

১৯৪৫ সালে যুগোশ্লাভিয়া গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের অস্থায়ী সরকার স্থাপন করেন। সোভিয়েট ইউনিয়ন আর যুগোশ্লাভিয়ার যৌথবাহিনী সারা দেশকে মুক্ত করে। পরে নব্বইয়ের দশকে একে একে চারটি যুদ্ধের মাধ্যমে ক্রোয়েশিয়া, মেসিডোনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা আর স্লোভেনিয়া স্বাধীন হয়ে যায়। সার্বিয়া আর মন্টেনিগ্রো ‘ফেডারেল রিপাবলিক অব যুগোস্লাভিয়া’ নাম নিয়ে কিছুকাল টিকে থাকলেও ২০০৬ সালে মন্টেনিগ্রো স্বাধীন হয়ে গেলে ইতিহাসে বিলীন হয়ে যায় যুগোস্লাভিয়া নামের দেশটি। পরবর্তীতে সার্বিয়া ভেঙে দু’টি রাষ্ট্র হয়। একটি সার্বিয়া অপরটি কসোভো।

১৯৩০ সালে যখন ফিফা বিশ্বকাপের প্রথম আসর বসেছিল তখন তৎকালীন যুগোস্লাভিয়া উঠেছিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। সেবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরে চতুর্থস্থান পেয়েছিল মধ্য ইউরোপের দেশটির। প্রথম বিশ্বকাপের আসরের ১৭ সদস্যের এই দলে অধিকাংশই ছিলেন বর্তমান সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রোর খেলোয়াড়। সেবার অবশ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে দেওয়া হয়নি ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়দের। পরবর্তীকালে যুগোস্লাভিয়া ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছে। নতুন নতুন দেশের যেমন জন্ম নিয়েছে তেমনই গঠিত হয়েছিল তাদের নিজস্ব ফুটবল ফেডারেশন।

গৃহযুদ্ধের আর ভাঙনের মধ্যে দিয়ে ছোট ছোট দেশের জন্ম হলেও ফুটবলকে এরা সকলেই গুরুত্ব দিয়েছে। তাই ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, স্লোভানিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা মতো দেশগুলোকে বিশ্বকাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্যায় অংশ নিতে দেখা যায়। এদের মধ্যে অবশ্যই সবেচেয়ে ভাল পার্ফরমেন্স হল ক্রোয়েশিয়ার। ১৯৯৮, ২০০২, ২০০৬, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপে অংশ নিতে পেরেছে। তবে ১৯৯৩ সালে ফিফা ও উয়েফা’র সদস্যপদ লাভ করে ক্রোয়েশিয়া ফুটবল দল। প্রথমবারের মতো বড় ধরনের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশ নিয়ে তারা তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন করে ১৯৯৬ সালের উয়েফা ইউরো কাপে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
১৯৮০ সালে টিটোর মৃত্যুর পর থেকেই যুগোস্লাভিয়ায় রাজনৈতিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে, বাড়তে থাকে রাজনৈতিক হানাহানি। কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন থেকে ক্রমশ জাতীয়তাবাদীর দিকে ঝুঁকতে থাকে ক্রোয়োশিয়া অঞ্চলের মানুষ। ১৯৯০ সালে কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে জাতীয়তাবাদীদের উত্থান দেখা যায়। সেবারই প্রথম একাধিক রাজনৈতিক দলের নির্বাচন হয়। ক্রোয়েশিয়ার মানুষ স্বাধীন আলাদা রাষ্ট্রের দাবি তোলে। তারপরে গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে নতুন রাষ্ট্র ক্রোয়েশিয়ার জন্ম।

ওই সময়টায় গোটা বিশ্বজুড়েই কমিউনিস্ট বিরোধী হাওয়া বইতে থাকে। পৃথিবীর রাজনীতির মানচিত্রটা ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে। স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বার্লিন দেয়াল ভেঙে এক হয়েছিল দুই জার্মানি। কিন্তু সমাজতন্ত্রের ধ্বজাধারী সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুগোস্লাভিয়া এবং চেকোস্লোভাকিয়া ভেঙে টুকরো টুকরো হল। সোভিয়েত ভেঙে ১৫ টুকরো হলো। যুগোস্লাভিয়া প্রথমবার ভাঙার পরও কয়েকবার ভাঙনের শিকার হয়েছিল।

এই ছোট্ট দেশটির বর্তমান সংবিধান ১৯৯০ সালের ২২শে ডিসেম্বর গৃহীত হয়েছিল আর ১৯৯১ সালের ২৫ জুন যুগোস্লাভিয়া থেকে একেবারে বিছিন্ন হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ক্রোয়েশিয়ার রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোতে পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী একটি বহুদলীয় ব্যবস্থাতে সরকারের প্রধান। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে এবং আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ক্রোয়েশীয় সংসদ বা সাবর’র হাতে ন্যস্ত। বিচার ভাগ নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন বিভাগ হতে স্বাধীন।

সূত্র: কলকাতা টুয়েন্টিফোর