ঢাকা ০৪:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
ফ্রান্সে এফএফবিএ সম্মাননায় ভূষিত হলেন বাংলাদেশি নয়ন এনকে ফ্রান্স- বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা ফ্রান্সে বিএনপির ৩১ দফা নিয়ে কর্মশালা ও লিফলেট বিতরণ প্যারিসে বাংলাদেশী মালিকানাধীন রেস্টুরেন্ট উদ্বোধন ফ্রান্সের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলর রাব্বানী খানের ফ্রান্স সিনেটের ‘মেডেল ড’অনার’ লাভ “অধিকার, স্বাধীনতা এবং সমাজের দ্বৈত মানসিকতা* ফ্রান্সে লায়েক আহমদ তালুকদারের পিতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলনের প্রধান হাসনাত আরিয়ান খানকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ফ্রান্সে বিশ্ব স্বজন ফাউন্ডেশনের ১ যুগপূর্তি উদযাপন বালাগঞ্জে জামালপুর তোহফা ফাউন্ডেশনের ২০২৫ সালের ক্যালেন্ডার উন্মোচন

ক্ষমা করবেন প্রিয় মানিক ভাই: ফারুক নেওয়াজ খান

  • আপডেট সময় ১২:৩৬:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
  • ২৭৮ বার পড়া হয়েছে

সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় জাতীয় সংস্কৃতির প্রতি ভালবাসা ও দেশপ্রেম থেকে প্যারিসের সর্বাধিক পরিচিত স্থাপনা আইফেল টাওয়ারের পাশে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারী আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ফ্রান্স প্রবাসী সকল বাংলাদেশী দলমত নির্বিশেষে অপেক্ষা করতো এই একটি দিনের জন্য। বাঙ্গালীর স্বাধীনতার পর বৃহৎ অর্জনের তালিকায় ভাষার জন্য সংগ্রাম ঐতিহাসিকভাবেই স্বীকৃত।
বিশ্বের প্রথম জাতি হিসেবে আমরাই প্রথম মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছিলাম। ইউনেস্কো আমাদের এ আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারীকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।ইউনেস্কোর সদস্যরাষ্ট্ররা এ দিনটি পালন করে।
প্যারিসে অবস্থানরত বাংলাদেশীকে এক ছায়াতলে এনে প্যারিস বন্ধূখ্যাত অকাল প্রয়াত শহীদুল আলম মানিক ভাই সম্পুর্ন নিজ উদ্যোগে আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে অস্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপন করে ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতেন।
২১ ফেব্রুয়ারী মুল অনুষ্ঠান হলেও মরহুম মানিক ভাই এর মাসখানেক আগে থেকেই ফ্রান্সের সকল বাংলাদেশী সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতেন। প্যারিসে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের পরিচিত এলাকা গার দু নর্দের একটি বাঙ্গালী চা দোকানে প্রায় প্রতি রোববারেই এ বিষয় নিয়ে একাধিক সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করতেন তিনি। অনুষ্ঠানকে কিভাবে সাফল্যমন্ডিত করা যায়। কিভাবে সকলের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা যায় এসব নিয়েই মুলত আলোচনা চলতো।
২০০১ সালে প্যারিসে আসার পর থেকে মানিক ভাইয়ের মৃত্যুর বছর অর্থাৎ ২০১৩ পর্যন্ত প্রতিটি আলোচনা সভায় অংশগ্রহনের সুযোগ হয়েছিলো। মানিক ভাইয়ের মৃত্যু পরবর্তী এ বিষয়ে দায়িত্বগ্রহনের মতো যোগ্য কেউ না থাকায় কোন সভা হয়েছে কিনা সে তথ্য না থাকায় এর অধিক কিছূ জানিনা।
শুনেছি ২০১৪, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে দায়সারাভাবে অনুষ্ঠঅন হয়েছিলো। ২০১৬ সালে আয়োজকদের একগুয়েমীর কারনে প্যারিসের রিপাবলিক চত্বরে অপর একটি সংগঠন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়। একই বছরে আইফেল টাওয়ারে অস্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয় না অপর উদ্যোক্তাদের। এর পিছনে প্রশাসনিক যোগাযোগের ব্যর্থতা মোটাদাগে অনুভুত হয়।
মানিক ভাই যে ভাবে ফরাসী প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন উনার অবর্তমানে যারা দায়িত্ব নিয়েছিলেন তাদের সে রকম যোগাযো্গ ছিলোনা। এ কারনেই আইফেল টাওয়ার চত্বরে অস্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপনের অনুমতি লাভে ব্যর্থ হয়।
এ বছরও (২০১৮) একই স্থানে অস্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপনের অনুমতি লাভে ব্যর্থ হয়েছে আয়োজকরা। পাশাপাশি সকল সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে নিবিড় আলোচনা না করায় আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে ফ্রান্সে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের অংশগ্রনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে।
এ বছরও রিপাবলিক চত্বরে ২১ ফেব্রুয়ারী আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে বাংলাদেশীদের স্বতস্ফুর্তভাবে অংশ নিতে দেখা গেছে। প্রায় ৬৫ টি সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পদচারনায় সরগরম ছিলো রিপাবলিক চত্বর।
মানিক ভাইয়ের মৃত্যু পরবর্তী প্রকৃত সংগঠকের অনুপস্থিতির কারনেই আইফেল টাওয়ার চত্বরে একুশ উদযাপনের বিদায় ঘন্টা বাজতে যাচ্ছে। প্রশাসনিক ও সামাজিক যোগাযোগ না করার ফল যে কতোটা মর্মান্তিক হতে পারে এটাই তার প্রমান।
মানিক ভাই আপনি আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেছেন কিন্তু আমরা এতোটাই অযোগ্য যে আপনার হাতে গড়ে তোলা একটি স্বপ্নের মৃত্যু ঘটাচ্ছি। আমাদের এ ব্যর্থতা ক্ষমা করবেন প্রিয় মানিক ভাই।

লেখক- সম্পাদক, ইউরো বার্তা ২৪.কম

 

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

লক ডাউন পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফ্রান্সে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি

যুক্তরাজ্যে করোনার মধ্যেই শিশুদের মাঝে নতুন রোগের হানা

ফ্রান্সে এফএফবিএ সম্মাননায় ভূষিত হলেন বাংলাদেশি নয়ন এনকে

ক্ষমা করবেন প্রিয় মানিক ভাই: ফারুক নেওয়াজ খান

আপডেট সময় ১২:৩৬:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় জাতীয় সংস্কৃতির প্রতি ভালবাসা ও দেশপ্রেম থেকে প্যারিসের সর্বাধিক পরিচিত স্থাপনা আইফেল টাওয়ারের পাশে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারী আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ফ্রান্স প্রবাসী সকল বাংলাদেশী দলমত নির্বিশেষে অপেক্ষা করতো এই একটি দিনের জন্য। বাঙ্গালীর স্বাধীনতার পর বৃহৎ অর্জনের তালিকায় ভাষার জন্য সংগ্রাম ঐতিহাসিকভাবেই স্বীকৃত।
বিশ্বের প্রথম জাতি হিসেবে আমরাই প্রথম মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছিলাম। ইউনেস্কো আমাদের এ আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারীকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।ইউনেস্কোর সদস্যরাষ্ট্ররা এ দিনটি পালন করে।
প্যারিসে অবস্থানরত বাংলাদেশীকে এক ছায়াতলে এনে প্যারিস বন্ধূখ্যাত অকাল প্রয়াত শহীদুল আলম মানিক ভাই সম্পুর্ন নিজ উদ্যোগে আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে অস্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপন করে ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতেন।
২১ ফেব্রুয়ারী মুল অনুষ্ঠান হলেও মরহুম মানিক ভাই এর মাসখানেক আগে থেকেই ফ্রান্সের সকল বাংলাদেশী সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতেন। প্যারিসে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের পরিচিত এলাকা গার দু নর্দের একটি বাঙ্গালী চা দোকানে প্রায় প্রতি রোববারেই এ বিষয় নিয়ে একাধিক সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করতেন তিনি। অনুষ্ঠানকে কিভাবে সাফল্যমন্ডিত করা যায়। কিভাবে সকলের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা যায় এসব নিয়েই মুলত আলোচনা চলতো।
২০০১ সালে প্যারিসে আসার পর থেকে মানিক ভাইয়ের মৃত্যুর বছর অর্থাৎ ২০১৩ পর্যন্ত প্রতিটি আলোচনা সভায় অংশগ্রহনের সুযোগ হয়েছিলো। মানিক ভাইয়ের মৃত্যু পরবর্তী এ বিষয়ে দায়িত্বগ্রহনের মতো যোগ্য কেউ না থাকায় কোন সভা হয়েছে কিনা সে তথ্য না থাকায় এর অধিক কিছূ জানিনা।
শুনেছি ২০১৪, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে দায়সারাভাবে অনুষ্ঠঅন হয়েছিলো। ২০১৬ সালে আয়োজকদের একগুয়েমীর কারনে প্যারিসের রিপাবলিক চত্বরে অপর একটি সংগঠন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়। একই বছরে আইফেল টাওয়ারে অস্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয় না অপর উদ্যোক্তাদের। এর পিছনে প্রশাসনিক যোগাযোগের ব্যর্থতা মোটাদাগে অনুভুত হয়।
মানিক ভাই যে ভাবে ফরাসী প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন উনার অবর্তমানে যারা দায়িত্ব নিয়েছিলেন তাদের সে রকম যোগাযো্গ ছিলোনা। এ কারনেই আইফেল টাওয়ার চত্বরে অস্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপনের অনুমতি লাভে ব্যর্থ হয়।
এ বছরও (২০১৮) একই স্থানে অস্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপনের অনুমতি লাভে ব্যর্থ হয়েছে আয়োজকরা। পাশাপাশি সকল সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে নিবিড় আলোচনা না করায় আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে ফ্রান্সে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের অংশগ্রনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে।
এ বছরও রিপাবলিক চত্বরে ২১ ফেব্রুয়ারী আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে বাংলাদেশীদের স্বতস্ফুর্তভাবে অংশ নিতে দেখা গেছে। প্রায় ৬৫ টি সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পদচারনায় সরগরম ছিলো রিপাবলিক চত্বর।
মানিক ভাইয়ের মৃত্যু পরবর্তী প্রকৃত সংগঠকের অনুপস্থিতির কারনেই আইফেল টাওয়ার চত্বরে একুশ উদযাপনের বিদায় ঘন্টা বাজতে যাচ্ছে। প্রশাসনিক ও সামাজিক যোগাযোগ না করার ফল যে কতোটা মর্মান্তিক হতে পারে এটাই তার প্রমান।
মানিক ভাই আপনি আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেছেন কিন্তু আমরা এতোটাই অযোগ্য যে আপনার হাতে গড়ে তোলা একটি স্বপ্নের মৃত্যু ঘটাচ্ছি। আমাদের এ ব্যর্থতা ক্ষমা করবেন প্রিয় মানিক ভাই।

লেখক- সম্পাদক, ইউরো বার্তা ২৪.কম