ঢাকা ১২:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪, ৯ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নামে প্যারিসে রাস্তার নামকরণ: একটি গৌরবময় মুহূর্ত বাংলাদেশে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ফ্রান্সের তুলুজে বিশাল সমাবেশ প্যারিসের ঐতিহাসিক রিপাবলিক চত্বরজুড়ে বিক্ষুব্ধ বাংলাদেশ বালাগঞ্জের হাফিজ মাওলানা সামসুল ইসলাম লন্ডনের university of central Lancashire থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করলেন বালাগঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হাজী রফিক আহমদ এর মতবিনিময় দেওয়ানবাজার ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল আলমের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মাঝে খাবার বিতরণ জনকল্যাণ ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন ইউকের পক্ষ থেকে উপহার সামগ্রী বিতরণ প্যারিসে অনুষ্ঠিত হলো, ‘রৌদ্র ছায়ায় কবি কন্ঠে কাব্য কথা’ শীর্ষক কবিতায় আড্ডা ফ্রান্স দর্পণ – কমিউনিটি-সংবেদনশীল মুখপত্র এম সি ইন্সটিটিউট ফ্রান্সের সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশের বেকার সমস্যা, সমাধানে কারিগরি-কর্মমুখী শিক্ষা

  • আপডেট সময় ১১:০০:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ জুন ২০১৮
  • ৩৩৯২ বার পড়া হয়েছে

লেখকের ফাইল ছবি

মোঃ মুখলিছর রহমান- সুজলা-সুফলা, শষ্য-শ্যামলা, ছায়াঢাকা-পাখিডাকা খাল বিল নদী সাগর পরিবেষ্টিত প্রকৃতির উদার হস্তে সাজানো চির সবুজের দেশ আমাদের বাংলাদেশ। ১৯৭১ সনে ত্রিশ লক্ষ প্রাণ আর দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জ্বতের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন এই দেশ। দীর্ঘ চার যুগে পদার্পন করছি আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে। স্বাধীনতার এতদিন পরও দেশ নি¤œ আয়ের, দেশের যুবরা আজও বেকারত্বের গ্লানিতে জর্জরিত। হতাশায় নিমজ্জ্বিত জাতীকে আশাম্বিত করার জন্য কি আমাদের কিছুই করার নেই। বিদেশীরা আমাদের দেশে এসে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে কারণ যেদিকেই তাকায় সেদিকেই তারা দেখে দেশের অপরূপ সৌন্দর্য্য। আল্লহ প্রদত্ত এত সুন্দর দেশ কেন এত দরিদ্র। কেন প্রতিনিয়ত দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করতে হচ্ছে আমাদেরকে।

উত্তরণের পথ হিসেবে আমার মতে বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকারদের চাকুরী দেওয়া তাদেরকে কাজে লাগানো অত্যন্ত জরুরী। দ্বিতীয়তঃ ঝরেপড়া শিক্ষার্থী আর যারা শিক্ষা গ্রহনের উপায় থেকে বঞ্চিত তাদেরকে কিংবা যারা অর্থের অভাবে লেখাপড়া থেকে দুরে তাদের কিভাবে শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করা যায় সে উপায় খুজে বের করা আমাদের কর্তব্য। আমাদের দেশের মত তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের দারিদ্র্য, দুর্নীতি, নিরক্ষতা, পশ্চাদপদতার অবসান ঘটিয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মানসম্মত শিক্ষা ও দক্ষ জনসম্পদ গড়ার প্রধান কারিগর বল্লেই একজন শিক্ষককে বুঝায়। একজন আদর্শ শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতা সর্বোপরি বাস্তবধর্মী বিষয়ভিত্তিক উদাহরণ ও দৃশ্যকল্প সংযোজন, শিক্ষার মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে যোগ করতে পারে একটি নতুন মাত্রা। যা একমাত্র তথ্য-প্রযুক্তির জন্য নির্ধারিত সিলেবাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ কথা আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, প্রযুক্তি আধুনিক যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে, বিশেষ করে কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি আধুনিক যুগের এক অপরিহার্য উপাদান এবং সারা বিশ্বে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এর গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ উল্লিখিত তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে:
১. “[শিক্ষানীতিতে উল্লিখিত] কর্মযজ্ঞের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় আন্তর্জাতিক মান ও গুণ সম্পন্ন শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির প্রচেষ্টা চালানো।
২. তথ্যপ্রযুক্তিকে শুধুমাত্র কমপিউটার বিজ্ঞানের মাঝে সীমিত না রেখে মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন, নেটওয়ার্কিং কিংবা সকল তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ।” (-জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০১০, পৃ ৩১)

জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে কিছু কথা:
জাতীয় শিক্ষানীতিতে উল্লিখিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ধাপ হিসেবে বাধ্যতামূলক তথ্যপ্রযুক্তির দ্বার উন্মুক্ত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এ পদক্ষেপ প্রশংসনীয়, কিন্তু একইসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে যথার্থ ফলাফল লাভের পথে তৈরি করে নানাবিধ সমস্যা। ঢাকা শহরের তিনটি স্বনামধন্য স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের উপর জরিপ চালিয়ে লক্ষ্য করা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের চেয়ে বাণিজ্যের শিক্ষার্থীরা কম্পিউটারকে চতুর্থ বিষয় হিসেবে কোর্স গ্রহণে আগ্রহী। স্বচ্ছন্দে নম্বর তোলাই এ বিষয় নির্বাচনে প্রধানতম উদ্দেশ্য। বিজ্ঞানের যে সকল শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার কোর্স গ্রহণের প্রতি অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে, তাদের মতামত অনুযায়ী কম্পিউটারে বর্তমান সিলেবাসের বিষয়গুলো বেশিরভাগই তত্ত্বীয়। এখানে আবার অপ্রতুল কম্পিউটার, দক্ষ শিক্ষকের অভাব, তত্ত্বীয় ক্লাসের সাথে ব্যবহারিক ক্লাসের অসংগতি, তথ্যপ্রযুক্তির বাস্তব-প্রয়োগ বিষয়ে শিক্ষকদের অজ্ঞতা ও সর্বোপরি ব্যবহারিক নয় তত্ত্বীয় জ্ঞান-নির্ভর সিলেবাস অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার কোর্স নির্ধারণে অনাগ্রহী করে তোলে।
চিত্রশিল্পী ও লেখিকা ফারহানা মান্নান বলেছেন, ২০১০ শিক্ষানীতিতে বর্তমানের অনেক সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে বেশ কিছু যুগোপযোগী উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যার আলোকে সুচিন্তিত কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে এরকম অনেক সমস্যারই বাস্তব সমাধান মিলবে, আশা করা যায়। কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘন্টি দেবে কে? লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলা এক কথা, কিন্তু তার বাস্তবায়নের কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন আরেক কথা যা লেখা হয়েছে সেটা করে দেখানোর গ্যারান্টি কি আছে?

বেনবেইস এর ২০০৯ সালের তথ্য অনুসারে বর্তমানে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩১টি এবং পাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫১টি। অন্য সব জায়গাতে বলা হয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বলা হয়েছে ২২টি এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বলা হয়েছে ৪৯টি। বর্তমানে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত পাঁচ ধরনের। ১. সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) ২. বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (৫টি-দিনাজপুর, পটুয়াখালি, নোয়াখালি, সিলেট, টাঙ্গাইল) ৩. ইঞ্জিনিয়ারিং এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (৫টি-বুয়েট, ডুয়েট, কুয়েট, চুয়েট, রুয়েট) ৪. কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (৩টি) ৫. টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (১টি) এইচএসসি পাশের পর একজন শিক্ষার্থী এমন রেজাল্ট করলো যার কারণে সে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করলো। (এখন হয়তো সে সংখ্যা আরোও বেশী) একজন শিক্ষার্থী যদি ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবলিক) ভর্তি পরীক্ষা দিতে চায় তাহলে তার খরচ কেমন হতে পারে? এমনেষ্টি, টিআইবি, বেলা, সুজন ও অধিকার এই পাঁচটি দেশী ও আর্ন্তজাতিক সংস্থা বাংলাদেশের ৬০টি জেলার ৪২টি পাবলিক ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে জরিপ চালিয়ে তারা নিশ্চিত হয়েছেন একজন হতদরিদ্র পিতা তাঁর সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় সন্তানের লেখাপড়ার পিছনে ব্যয় করেন ছয় লক্ষাধিক টাকা। এর বাইরেও আরোও খরচ আছে এখানে মোটামুটি একটি খরচ দাঁড় করানোর চেষ্টা করি যেমন- বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি; আমরা জানি বেশিরভাগ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি ঢাকায় অবস্থিত- ঢাকায় যাতায়াতের পরিবহন খরচ, সাথে ভ্রমণ জনিত নৈত্য নৈমিত্তিক দুর্ভোগের কষ্ট, থাকা ও খাওয়ার খরচ সহ সব মিলিয়ে ছয়লক্ষের উপরে টাকা খরচ করেন একজন হত দরিদ্র পিতা তাঁর সন্তানের পিছনে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তিনি কি পান সন্তানকে এত টাকা খরচ করে এত লেখা পড়া করিয়ে। হতদরিদ্র বাবার কাষ্টার্জিত অর্থে অর্জিত উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষিত সন্তানটি আজ বেকার। সন্তানের উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পর দু’টি মানুষ হতাশ হয়, নিরাশ হয়। তাদের স্বপ্ন ভাঙ্গে, পাজর ভাঙ্গে। ভেঙ্গে যায় বেঁচে থাকার আশা। তারা হলেন- একজন হতদরিদ্র সেই বাবা আরেকজন সেই বাবার হতভাগ্য তথাকথিত শিক্ষিত সন্তান। সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে আমরা একটি পরিসংখ্যান পেলাম বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কত। USAID, UN, UNESCO, UNICEF, UNDP, Transparency International Bangladesh (TIB), Amnesty International এর মত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় সংস্থাগুলি সমগ্র বাংলাদেশে খানা জরিপ চালিয়ে যে ফলাফল পেয়েছেন তা গত বছর ২০১৭ এর সেপ্টেম্বর মাসে তারা বলে দিয়েছেন বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকার যুব পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা ৬ (ছয়) কোটি’র বেশী। দেখুন কি ভয়াবহ অবস্থা !

ডিভিডেন্ট পিরিওড:
ডিভিডেন্ট পিরিওড একটা দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কবি বলেছেন, ‘এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ বাংলাদেশের এখন যুব পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা বেশী। অন্যদিকে বেকারত্বের দিক থেকে তাদের সংখ্যাই বেশী। তাদেরকে এখনই কাজে লাগানো না হলে এ ক্ষতি পূরণ করে নেয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে দেশ তাদের সেই সময়কে কাজে লাগাতে পেরেছে সে দেশ তত দ্রুত উন্নতির শিখরে পৌছে গেছে। মনে রাখতে হবে এখন আমরা আমাদের দেশের সেই সময় বা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। অনেকে বলতে পারেন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট একটা টেকনিক্যাল বিষয়। কারণ আধুনিক বিশ্বে শারীরিক ক্ষমতা কোনো ক্ষমতা না। এই ব্যারোমিটারটা ৬০ বছর পূর্বে ঠিক ছিল। কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কারণ, এখন শারীরিক শক্তির জায়গাতে টেকনোলজি জায়গা করে নিয়েছে। মানুষ এখন কাপড় কাঁচে মেশিনে, ঘর মুছে মেশিনে, ক্রেন দিয়ে ভারি জিনিস তোলে। ফলে আমরা যেটা নিয়ে গর্ব করছি সেটা প্রকৃত অর্থে ৬০ বছর পূর্বে হলে ঠিক ছিল। যখন টেকনলজি ছিল না। এখন বরং জনসংখ্যা আমাদের এখানে একটা সমস্যা মনে করছি কিন্তু এটাকে সম্পদে রূপান্তরের কোন চেষ্টাই করছি না আর করলেও তার সুফল পাচ্ছি না, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহন না করতে পারার কারণে। জনসম্পদের কথা বলে বলে আবার দেশের জনসংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। মানুষ কয়েক বছর আগে পরিবার পরিকল্পনার প্রতি ঝুঁকে গেলেও এখন আবার বহু সন্তানের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। বহির্বিশ্ব টেকনোলজিকে গুরুত্ব দিয়েছে। যে কারণে তারা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। তারা মানুষের আয়ুস্কাল বাড়িয়েছে। উন্নত দেশে মানুষ ১২০ বছরে বৃদ্ধ হয়। আর আমাদের দেশে ৬০ পেরুতেই বৃদ্ধ হয়ে পড়ি। মৃর্ত্যুকে আলিঙ্গন করার প্রতিক্ষায় থাকি জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্খায়। তাই বাংলাদেশের উচিত হবে এদেশের যুবশক্তি বা শ্রমঘণ্টা কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে বহির্বিশ্বের সহযোগিতা কাজে লাগানো যায় কি না সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে। অতি দ্রুত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো তা না হলে গায়ের শক্তি দিয়ে কিছু হবে না। বোঝা-ই বাড়বে। আবারো বলছি, মনে রাখতে হবে এখন আমরা আমাদের দেশের ডিভিডেন্ট পিরিওড বা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময় বা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি।

যুবশক্তিকে দেশের কাজে লাগানোর এখনই সময়:
জাতিসংঘের গবেষনায় যুব বলতে সাধারণত কৈশোর থেকে যৌবনে উত্তরণের মধ্যবর্তী সময়কে বুঝায়। এ সময় তারা কৈশোরের চেয়ে অধিক সুযোগ সুবিধা পেলেও তাদেরকে ঠিক প্রাপ্ত বয়স্ক হিসাবে গন্য করা হয় না। ‘‘জাতিসংঘের’’ হিসাব মতে, ১৫-২৪ বছর বয়সি নর-নারীকে যুব বলে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশে এ সময়সীমা ১৮-৩৫ বছর। যেভাবেই সংজ্ঞায়িত করা হোক না কেন, এ কথা বিশ^ব্যাপী স্বীকৃত যে, যুবদের ক্ষমতায়ন এর সাথে যে কোন দেশের বর্ধিত দরিদ্র জনগোষ্টির সাথে একটা যুগসূত্র রয়েছে। কারণ এটা জীবনের এমন একটি পর্যায়, যখন তারা ব্যক্তি অধিকার, সুযোগ সুবিধা ও অধিকার পেতে চায়, তারা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাঠামো ও প্রেক্ষাপঠকে প্রভাবিত করে এবং এর দ্বারা প্রভাবিতও হয়। দেশের এক -তৃতিয়াংশ যুব পুরুষ ও যুব মহিলা। বিশে^ এই মুহুর্তে যুব পুরুষ ও যুব মহিলার সংখ্যা সব চেয়ে বেশী। এদের অর্ধেকেরও বেশি এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে রয়েছে। বাংলাদেশে এখন ৬ (ছয়) কোটিরও বেশী যুব পুরুষ ও যুব মহিলা রয়েছে। বিশে^র তরুন সমাজের অর্ধেকের বেশী দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে। বাংলাদেশে এর সংখ্যা আরোও বেশী। অথচ – আজকের যুব সমাজ ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ বাংলাদেশের নির্মাতা। এটা হওয়া উচিৎ ছিল। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ যুব সমাজ। এরাই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নির্মাতা। এই যুব সমাজকে উন্নয়নের মূল ধারায় আরোও বেশী সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের একার পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়। সরকারের পাশাপাশি ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে যুব সমাজকে উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে।

ব্যবস্থাপনা ও কর্মপরিকল্পনায় পরিবর্তন আনয়ন জরুরী:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক, লেখক ও প্রাবন্ধিক ড. সৌমিত্র শেখরের কথায় উঠে এসেছে, একাডেমিক শিক্ষার সর্বোচ্চ সনদ নিয়েও বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছে দেশের অসংখ্য শিক্ষার্থী, চাকরি মিলছে না। স্নাতকোত্তর পাশের পর ৩ থেকে ৪ বছর আবার চাকরির জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। সর্বোচ্চ সনদ নিয়ে করতে হচ্ছে কোচিংও। তাতেও অনেকের চাকরি মিলছে না। আবার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কোটার মারপ্যাঁচে ধুঁকছে মেধাবীরা। কোটা সুবিধা নিয়ে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা ক্ষেত্রবিশেষে মেধাহীনরাও চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে পাবলিক পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরি পরীক্ষা সর্বত্র দেদারসে চলছে প্রশ্নফাঁস। এতে লেখাপড়া না করেও ফাঁকফোকরে সনদ পেয়ে যাচ্ছে মেধাহীনরা। দুর করতে হবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গলদ। প্রশ্নফাঁস, কোচিং বাণিজ্য, কোটা পদ্ধতির সংস্কার, শিক্ষার্থীদের চাকরির সমস্যাসহ শিক্ষাব্যবস্থার নানা অসঙ্গতি নিয়ে ভাবতে হবে নতুন করে।

সমাধান আসবে কিভাবে ?
অঙ্কুর আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা এর শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, আকলিমা শরমিন বলেছেন, অনেক গবেষনা করে দেখা গেছে এর সমাধান হতে পারে, আত্মকর্মসংস্থান মূলক কারিগরি-কর্মমুখী ও কর্মসংস্থান মূলক শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় চালু করা হয় এবং তা প্রতিপালনে সরকারী ও বেসরকরী ভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করা হয়, তা’হলেই বাংলাদেশ বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে। আর কোন ভাবে যদি শিক্ষিত যুবদের কর্মস্থান হয়, নিশ্চিত ভাবে পাল্টে যাবে দেশের চিত্র। দেশকে নিয়ে যারা ভাবেন তাদের আরো কিছু প্রস্তাবনা-

শিক্ষা ব্যবস্থায় আইসিটি, কারিগরি বা কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবহার:
কর্মমুখী শিক্ষা এমন এক ধরণের শিক্ষাব্যবস্থা, যা গ্রহণ করলে শিক্ষার্থীরা ঘরে-বাইরে, ক্ষেতে-খামারে, কলে-কারখানায় যেকোনো কাজে বা পেশায় অতি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার যোগ্যতা লাভ করে। কর্মমুখী শিক্ষার ধারণা মূলত পেশাগত কর্মের সাথে সম্পৃক্ত। এই শিক্ষা এক ধরণের বিশেষায়িত শিক্ষা, যা শিক্ষার্থীর কর্মদক্ষতা সৃষ্টি করে এবং শিক্ষার্থীকে সৃজনশীল ও উৎপাদনমুখী করে তোলে। সুতরাং, কর্মমুখী শিক্ষা যান্ত্রিক শিক্ষা নয়। এর কাজ জনশক্তিকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজ ও দেশের শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। গবেষনায় দেখা গেছে কর্মমুখী শিক্ষা মূলত চতুর্মুখী নীতি নিয়ে আবির্ভূত হয়। এগুলো হলো- (১) জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে শিক্ষার্থীকে পরিচয় করানো এবং তার সুপ্ত গুণাবলীকে জাগ্রত করা। (২) শিক্ষার্থীকে নৈতিক, সামাজিক এবং মানবিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত করে। (৩) গণতন্ত্রমনা, যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক নাগরিক হিসেবে তাকে গড়ে তোলে। (৪) কর্মক্ষমতা সৃষ্টি করে তাকে কর্মমুখী ও উপার্জনমূলক জনশক্তিতে রূপান্তর করে। কর্মমুখী ও ব্যবহারিক শিক্ষার শক্তিই হচ্ছে উন্নয়ন ও জাতি গঠনের আসল শিক্ষা। জাতীয় জীবনে অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি এই শিক্ষা। হাতে-কলমে শিক্ষাই হচ্ছে একটা জাতির উন্নতির চাবিকাঠি। শিক্ষা যেমন ব্যক্তিজীবনকে আলোকিত এবং উন্নত করে, তেমনি জাতি দেশকে সমৃদ্ধ ও সমুন্নত করে। শিক্ষাব্যবস্থায় আইসিটির ব্যবহার দিনদিন বেড়েই চলছে। তারপরেও কিছু বিষয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়িত করতে যেমন- আইসিটি ইন এডুকেশন মাস্টার প্ল্যান (২০১২-২০২১) প্রস্তুুত করেছেন সরকার। এছাড়াও ই-লার্নিং কার্যক্রমকে বেগবান করতে হবে দ্রুতগতিতে। শিক্ষা বোর্ডগুলোর আওতায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওয়েবসাইট তৈরি করাতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি স¤পৃক্ত করে একটি দক্ষ ও যুযোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে শিক্ষার সকল স্তরকে সম্পৃক্ত করে দক্ষ আইসিটি ইন এডুকেশন মাস্টার প্লান প্রণয়ন করতে হবে। ডিজিটাল কনটেন্ট বিষয়ে বেশী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, তাদের আইসিটি’র উপর উচ্চতর ট্রেনিং দিতে হবে, সারাদেশে দক্ষ আইসিটি ফর অ্যাডুকেশন ইন সেকেন্ডারি অ্যান্ড হায়ার সেকেন্ডারি লেভেল প্রকল্পের মাধ্যমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করতে হবে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ, স্পিকার, ইন্টারনেট, মডেম ও প্রজেক্টর বিতরণ করতে হবে। প্রশিক্ষককে ডিজিটাল কনটেন্ট ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া খুবই প্রয়োজন। এটুআই ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় শিক্ষকদের তৈরি ডিজিটাল কন্টেন্ট শেয়ারিংয়ের জন্য শিক্ষা বাতায়ন নামে একটি কন্টেন্ট পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে এটা কাজে লাগানো হচ্ছে কি- না সেটা সার্বক্ষনিক মনিটরিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।

দেশী-বিদেশী চাকুরীর চাহিদা মাথায় রেখে কর্মমুখী যুগোপযোগী শিক্ষার ব্যবস্থা করা:
কর্মমুখী শিক্ষার উপকারিতা অনেক এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১. কর্মমুখী শিক্ষার ফলে বেকারত্ব লাঘব হয়। ২.আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। ৩. ব্যক্তিস্বাধীনতা অক্ষুন্ন থাকে। ৪.সাধারণ শিক্ষার প্রতি চাপ কমে। ৫. জীবনে হতাশা, শূন্যতা ও ব্যর্থতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ৬. নতুন নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ৭. ব্যাক্তি, সমাজ ও দেশ সুখি, সমৃদ্ধ ও উন্নতি লাভ করে। ৮. মানুষের আয়ু বেড়ে যায়। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পিপিআরসি-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার নিশ্চয়তায় এখন কী ধরনের শিক্ষা প্রয়োজন সেদিকে নজর দেয়ার সময় এসেছে। কর্মসংস্থানের চাহিদা মাতায় রেখে ও শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে একটি জাতীয় সমন্বয় প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সমন্বিত একটি নীতিমালার আলোকে নতুন নতুন শিক্ষালয় স্থাপনের অনুমোদন ও তা সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখা জরুরি। সেই সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগতমান নিশ্চিত করতে হবে। দেশীয় কর্মমুখী শিক্ষা নানা ধরনের হতে পারে। প্রথমতঃ- ডাক্তার, প্রকৌশলী এবং কৃষিবিদ প্রভৃতি যারা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে কাজ করেন। তারা তাদের ইচ্ছামতো স্বাধীন পেশায় নিয়োজিত হন। দ্বিতীয়তঃ- কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা। এখানে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক শিক্ষাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এ জাতীয় শিক্ষার মধ্যে হাঁস-মুরগী পালন, কুটির শিল্প, মৎস্য চাষ, নার্সারি, ধাত্রীবিদ্যা, কাঠমিস্ত্রির কাজ, সেলাই কাজ, ছাপাখানার কাজ, দর্জির কাজ, শ্রমিকের কাজ, বিদ্যুতের কাজ, বই বাঁধাই, ওয়েলডিং এর কাজ, টেলিভিশন- বেতার- মোটর মেরামতের কাজ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
আন্তর্জাতিক চাহিদা মাথায় রেখে কারিগরি কর্মমুখী যুগোপযোগী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। যে সকল সরকারী বে-সরকারী, ব্যাক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলির জন্য সুনির্দিষ্ট নিতীমালা, তাদেরকে মনিটরিং ও পৃষ্টপোষকতা করা হলে বেকার যুবদের মধ্যে আশার সঞ্চার হবে, তারা প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী হবে। ধীরে ধীরে বাড়বে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আর অন্যদিকে কমবে বেকারত্ব। দেশ হবে বেকারমুক্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবানের জন্য এটাই হবে কার্যকরী ও উত্তম পদক্ষেপ। এ বিষয়ে আমি বেশী গুরুত্ব দিতে বলবো বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চাকরির বাজারে চাহিদা ও সামঞ্জস্য রেখে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে প্রচলিত কারিকুলাম আধুনিক ও যুগোপযোগী করা একান্তই জরুরী। কারিগরি বোর্ডকে আরো ঢেলে সাজাতে হতে, করতে হবে আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী কারিগরি বোর্ডের মাধ্যমে চালু করতে হবে ইমার্জিং ট্রেড ও টেকনোলজি। যেমন টেলিকমিউনিকেশন টেকনোলজি, মাইনিং অ্যান্ড মাইন সার্ভে টেকনোলজি, ইলেকট্রো-মেডিকেল টেকনোলজি, গার্মেন্টস ডিজাইন অ্যান্ড প্যাটার্ন মেকিং টেকনোলজি, এনভায়রনমেন্টাল টেকনোলজি ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলেই গড়ে উঠবে স্বপ্নের সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ।

অদম্য মনোবল যাদের তাদের নিয়ে গল্প লিখে উৎসাহ প্রদান:
এবারের এসএসসির ফল বেরোলো রোববার (৬ মে ২০১৮)। এ নিয়ে সোমবারের সংবাদপত্র যতটা সরব ছিল, মঙ্গলবার ততটা দেখা যায়নি। সম্পাদকীয়, একাদশ শ্রেণির ভর্তি ও অন্যান্য সংবাদ প্রকাশ হলেও আগের মতো অদম্য মেধাবীদের নিয়ে তেমন খবর চোখে পড়েনি। নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে যারা জীবনের অন্যতম পর্যায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, ভালো ফল করে, তাদের গল্প সংবাদপত্রে আগে কয়েক দিন ধরে প্রকাশ হতো। এখন তা কমে গেছে। তার পরও অনেকের খবর আসছে, অনলাইনে নানা মাধ্যমেও আমরা তাদের গল্প জানতে পারছি। পা দিয়ে লিখে জিপিএ-৫, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা জয় করে উত্তীর্ণ, দারিদ্র্য জয় করে ভালো ফল, মা-ছেলে একসঙ্গে পাস সহ- এমন অনেক শারীরিক, আর্থিক ও বয়সের প্রতিবন্ধকতা জয় করে উত্তীর্ণ হওয়ার খবর আমাদের প্রেরণা জোগায়। এভাবে পড়াশোনা করে অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত। যুগ যুগ ধরে এটাই চলে আসছে। সমাজে সহৃদয় মানুষ যেমন আছেন, একই সঙ্গে নানা প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসছে। প্রতি বছর দরিদ্র-মেধাবীদের শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের সহায়তায় পড়াশোনা চালিয়ে নেন অনেকে। এভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। দিন দিন শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। শিক্ষার বাইরে যাতে কেউ না থাকে সে জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগ। শিক্ষা ও শিক্ষাহীনতার পার্থক্য মানুষ বুঝছে। ফলে আমরা দেখছি, শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণও অনেক বেড়েছে। দরিদ্র কিংবা স্বল্পশিক্ষিত অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেন। সবকিছুর ঊর্ধ্বে অদম্য মনোবল। মানুষের আগ্রহ ও ইচ্ছা থাকলে কোনো প্রতিবন্ধকতাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। জীবনের সর্বক্ষেত্রেই তা প্রয়োজন। যে মনোবল একবার আপনাকে এগিয়ে নিয়েছে, যে মনোবলে আপনি মাধ্যমিকের চৌকাঠ পেরিয়েছেন, তা অটুট থাকলে পরবর্তী পড়াশোনাও সহজ হয়ে যায়। বড় বড় মানুষের গল্প এমনই। পা দিয়ে লিখে যে ছেলেটি পঞ্চম শ্রেণির সমাপনীতে সর্বোচ্চ গ্রেড পেল, এবারের এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেল; তার অদম্য মনোবল আর এই ফলের প্রেরণা নিশ্চয়ই তাকে এগিয়ে নেবে। এভাবেই একদিন বাংলাদেশ তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

আশার বাণী:
আমার লেখার বিষয়গুলি যদি ভুল হয়, আমি পাঠক সহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে সবিনয়ে আন্তরিক ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। আর যদি সঠিক হয় তা’হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সরকারের যারা নীতিনির্ধারক তাদের কাছে বিনীত অনুরোধ করবো বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করবেন এই আমার সবিনয় অনুরোধ। আমি আশাবাদী সব সময় বাংলাদেশকে নিয়ে। এই দেশ স্বল্প আয়, মধ্য আয় কিংবা উন্নয়নশীল দেশ নয়, একদিন এই দেশ উন্নত দেশের স্বীকৃতি পাবে সেদিন বেশী দুরে নয়- সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার একসময় বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলেছিলেন। কারণ বাংলাদেশ সে সময় প্রচুর বৈদেশিক অর্থ সহযোগিতা ও ঋণ পেত; কিন্তু তা ঠিকমতো কাজে লাগানো যেত না। ‘বাস্কেট কেস’ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচয় ছিল দীর্ঘদিন ধরে। সেই বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে এখন বলা হচ্ছে অমীমাংসিত রহস্য। বিশ্বব্যাংকের বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘দিস ইজ দ্য ক্রাক্স অব দ্য সারপ্রাইজ’। বিশ্বে এখন ধনী দেশগুলোর বাইরে অগ্রসরমাণ বড় অর্থনীতি হিসেবে তারা চারটি দেশের নাম বলছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন। সংক্ষেপে এদের বলা হয় ব্রিকস। বিশ্বখ্যাত মার্কিন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাচ বলছে, এর পরই রয়েছে ‘নেক্সট ইলেভেন’। এই ১১ দেশের একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। আরেক মার্কিন প্রতিষ্ঠান জেপি মরগান বলছে, অগ্রসরমাণ পাঁচ দেশের একটি এখন বাংলাদেশ।

পরিশেষে শেষ করছি একটি উদাহরণ টেনে। ফরাসি দার্শনিক ‘জোসেফ প্রধো’ রচনা করেছিলেন একটি গ্রন্থ, নাম ‘দারিদ্র্যের দর্শন’। গ্রন্থের নামে আগ্রহী হয়ে মহামতি ‘কার্ল মার্কস’ আদ্যোপান্ত পাঠ করলেন গ্রন্থটি। আশানুরূপ তৃপ্ত না হতে পেরে মার্কস নিজেই লিখে ফেলেন একটি গ্রন্থ- ‘দর্শনের দারিদ্র্য’। এত কথার পরও যদি কেউ কর্মমুখী শিক্ষার বিষয়ে একমত না থাকতে পারেন, তবে তার জন্য প্রয়োজন হবে নতুন কোন গ্রন্থের, যে গ্রন্থের নাম হতে পারে ‘চিন্তার দারিদ্র্য’। অথবা আওড়াতে হবে জীবনানন্দ দাশ: ‘অদ্ভুত আঁধার এক আসিয়াছে পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা’।

লেখক: সমাজকর্মী, বিভাগীয় ইনচার্জ সিলেট, যুবউন্নয়ন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
তারিখঃ ০১-০৫-২০১৮ইং

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

লক ডাউন পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফ্রান্সে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি

যুক্তরাজ্যে করোনার মধ্যেই শিশুদের মাঝে নতুন রোগের হানা

ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নামে প্যারিসে রাস্তার নামকরণ: একটি গৌরবময় মুহূর্ত

বাংলাদেশের বেকার সমস্যা, সমাধানে কারিগরি-কর্মমুখী শিক্ষা

আপডেট সময় ১১:০০:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ জুন ২০১৮

মোঃ মুখলিছর রহমান- সুজলা-সুফলা, শষ্য-শ্যামলা, ছায়াঢাকা-পাখিডাকা খাল বিল নদী সাগর পরিবেষ্টিত প্রকৃতির উদার হস্তে সাজানো চির সবুজের দেশ আমাদের বাংলাদেশ। ১৯৭১ সনে ত্রিশ লক্ষ প্রাণ আর দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জ্বতের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন এই দেশ। দীর্ঘ চার যুগে পদার্পন করছি আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে। স্বাধীনতার এতদিন পরও দেশ নি¤œ আয়ের, দেশের যুবরা আজও বেকারত্বের গ্লানিতে জর্জরিত। হতাশায় নিমজ্জ্বিত জাতীকে আশাম্বিত করার জন্য কি আমাদের কিছুই করার নেই। বিদেশীরা আমাদের দেশে এসে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে কারণ যেদিকেই তাকায় সেদিকেই তারা দেখে দেশের অপরূপ সৌন্দর্য্য। আল্লহ প্রদত্ত এত সুন্দর দেশ কেন এত দরিদ্র। কেন প্রতিনিয়ত দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করতে হচ্ছে আমাদেরকে।

উত্তরণের পথ হিসেবে আমার মতে বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকারদের চাকুরী দেওয়া তাদেরকে কাজে লাগানো অত্যন্ত জরুরী। দ্বিতীয়তঃ ঝরেপড়া শিক্ষার্থী আর যারা শিক্ষা গ্রহনের উপায় থেকে বঞ্চিত তাদেরকে কিংবা যারা অর্থের অভাবে লেখাপড়া থেকে দুরে তাদের কিভাবে শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করা যায় সে উপায় খুজে বের করা আমাদের কর্তব্য। আমাদের দেশের মত তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের দারিদ্র্য, দুর্নীতি, নিরক্ষতা, পশ্চাদপদতার অবসান ঘটিয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মানসম্মত শিক্ষা ও দক্ষ জনসম্পদ গড়ার প্রধান কারিগর বল্লেই একজন শিক্ষককে বুঝায়। একজন আদর্শ শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতা সর্বোপরি বাস্তবধর্মী বিষয়ভিত্তিক উদাহরণ ও দৃশ্যকল্প সংযোজন, শিক্ষার মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে যোগ করতে পারে একটি নতুন মাত্রা। যা একমাত্র তথ্য-প্রযুক্তির জন্য নির্ধারিত সিলেবাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ কথা আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, প্রযুক্তি আধুনিক যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে, বিশেষ করে কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি আধুনিক যুগের এক অপরিহার্য উপাদান এবং সারা বিশ্বে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এর গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ উল্লিখিত তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে:
১. “[শিক্ষানীতিতে উল্লিখিত] কর্মযজ্ঞের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় আন্তর্জাতিক মান ও গুণ সম্পন্ন শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির প্রচেষ্টা চালানো।
২. তথ্যপ্রযুক্তিকে শুধুমাত্র কমপিউটার বিজ্ঞানের মাঝে সীমিত না রেখে মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন, নেটওয়ার্কিং কিংবা সকল তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ।” (-জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০১০, পৃ ৩১)

জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে কিছু কথা:
জাতীয় শিক্ষানীতিতে উল্লিখিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ধাপ হিসেবে বাধ্যতামূলক তথ্যপ্রযুক্তির দ্বার উন্মুক্ত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এ পদক্ষেপ প্রশংসনীয়, কিন্তু একইসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে যথার্থ ফলাফল লাভের পথে তৈরি করে নানাবিধ সমস্যা। ঢাকা শহরের তিনটি স্বনামধন্য স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের উপর জরিপ চালিয়ে লক্ষ্য করা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের চেয়ে বাণিজ্যের শিক্ষার্থীরা কম্পিউটারকে চতুর্থ বিষয় হিসেবে কোর্স গ্রহণে আগ্রহী। স্বচ্ছন্দে নম্বর তোলাই এ বিষয় নির্বাচনে প্রধানতম উদ্দেশ্য। বিজ্ঞানের যে সকল শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার কোর্স গ্রহণের প্রতি অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে, তাদের মতামত অনুযায়ী কম্পিউটারে বর্তমান সিলেবাসের বিষয়গুলো বেশিরভাগই তত্ত্বীয়। এখানে আবার অপ্রতুল কম্পিউটার, দক্ষ শিক্ষকের অভাব, তত্ত্বীয় ক্লাসের সাথে ব্যবহারিক ক্লাসের অসংগতি, তথ্যপ্রযুক্তির বাস্তব-প্রয়োগ বিষয়ে শিক্ষকদের অজ্ঞতা ও সর্বোপরি ব্যবহারিক নয় তত্ত্বীয় জ্ঞান-নির্ভর সিলেবাস অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার কোর্স নির্ধারণে অনাগ্রহী করে তোলে।
চিত্রশিল্পী ও লেখিকা ফারহানা মান্নান বলেছেন, ২০১০ শিক্ষানীতিতে বর্তমানের অনেক সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে বেশ কিছু যুগোপযোগী উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যার আলোকে সুচিন্তিত কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে এরকম অনেক সমস্যারই বাস্তব সমাধান মিলবে, আশা করা যায়। কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘন্টি দেবে কে? লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলা এক কথা, কিন্তু তার বাস্তবায়নের কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন আরেক কথা যা লেখা হয়েছে সেটা করে দেখানোর গ্যারান্টি কি আছে?

বেনবেইস এর ২০০৯ সালের তথ্য অনুসারে বর্তমানে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩১টি এবং পাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫১টি। অন্য সব জায়গাতে বলা হয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বলা হয়েছে ২২টি এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বলা হয়েছে ৪৯টি। বর্তমানে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত পাঁচ ধরনের। ১. সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) ২. বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (৫টি-দিনাজপুর, পটুয়াখালি, নোয়াখালি, সিলেট, টাঙ্গাইল) ৩. ইঞ্জিনিয়ারিং এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (৫টি-বুয়েট, ডুয়েট, কুয়েট, চুয়েট, রুয়েট) ৪. কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (৩টি) ৫. টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (১টি) এইচএসসি পাশের পর একজন শিক্ষার্থী এমন রেজাল্ট করলো যার কারণে সে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করলো। (এখন হয়তো সে সংখ্যা আরোও বেশী) একজন শিক্ষার্থী যদি ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবলিক) ভর্তি পরীক্ষা দিতে চায় তাহলে তার খরচ কেমন হতে পারে? এমনেষ্টি, টিআইবি, বেলা, সুজন ও অধিকার এই পাঁচটি দেশী ও আর্ন্তজাতিক সংস্থা বাংলাদেশের ৬০টি জেলার ৪২টি পাবলিক ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে জরিপ চালিয়ে তারা নিশ্চিত হয়েছেন একজন হতদরিদ্র পিতা তাঁর সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় সন্তানের লেখাপড়ার পিছনে ব্যয় করেন ছয় লক্ষাধিক টাকা। এর বাইরেও আরোও খরচ আছে এখানে মোটামুটি একটি খরচ দাঁড় করানোর চেষ্টা করি যেমন- বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি; আমরা জানি বেশিরভাগ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি ঢাকায় অবস্থিত- ঢাকায় যাতায়াতের পরিবহন খরচ, সাথে ভ্রমণ জনিত নৈত্য নৈমিত্তিক দুর্ভোগের কষ্ট, থাকা ও খাওয়ার খরচ সহ সব মিলিয়ে ছয়লক্ষের উপরে টাকা খরচ করেন একজন হত দরিদ্র পিতা তাঁর সন্তানের পিছনে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তিনি কি পান সন্তানকে এত টাকা খরচ করে এত লেখা পড়া করিয়ে। হতদরিদ্র বাবার কাষ্টার্জিত অর্থে অর্জিত উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষিত সন্তানটি আজ বেকার। সন্তানের উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পর দু’টি মানুষ হতাশ হয়, নিরাশ হয়। তাদের স্বপ্ন ভাঙ্গে, পাজর ভাঙ্গে। ভেঙ্গে যায় বেঁচে থাকার আশা। তারা হলেন- একজন হতদরিদ্র সেই বাবা আরেকজন সেই বাবার হতভাগ্য তথাকথিত শিক্ষিত সন্তান। সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে আমরা একটি পরিসংখ্যান পেলাম বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কত। USAID, UN, UNESCO, UNICEF, UNDP, Transparency International Bangladesh (TIB), Amnesty International এর মত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় সংস্থাগুলি সমগ্র বাংলাদেশে খানা জরিপ চালিয়ে যে ফলাফল পেয়েছেন তা গত বছর ২০১৭ এর সেপ্টেম্বর মাসে তারা বলে দিয়েছেন বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকার যুব পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা ৬ (ছয়) কোটি’র বেশী। দেখুন কি ভয়াবহ অবস্থা !

ডিভিডেন্ট পিরিওড:
ডিভিডেন্ট পিরিওড একটা দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কবি বলেছেন, ‘এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ বাংলাদেশের এখন যুব পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা বেশী। অন্যদিকে বেকারত্বের দিক থেকে তাদের সংখ্যাই বেশী। তাদেরকে এখনই কাজে লাগানো না হলে এ ক্ষতি পূরণ করে নেয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে দেশ তাদের সেই সময়কে কাজে লাগাতে পেরেছে সে দেশ তত দ্রুত উন্নতির শিখরে পৌছে গেছে। মনে রাখতে হবে এখন আমরা আমাদের দেশের সেই সময় বা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। অনেকে বলতে পারেন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট একটা টেকনিক্যাল বিষয়। কারণ আধুনিক বিশ্বে শারীরিক ক্ষমতা কোনো ক্ষমতা না। এই ব্যারোমিটারটা ৬০ বছর পূর্বে ঠিক ছিল। কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কারণ, এখন শারীরিক শক্তির জায়গাতে টেকনোলজি জায়গা করে নিয়েছে। মানুষ এখন কাপড় কাঁচে মেশিনে, ঘর মুছে মেশিনে, ক্রেন দিয়ে ভারি জিনিস তোলে। ফলে আমরা যেটা নিয়ে গর্ব করছি সেটা প্রকৃত অর্থে ৬০ বছর পূর্বে হলে ঠিক ছিল। যখন টেকনলজি ছিল না। এখন বরং জনসংখ্যা আমাদের এখানে একটা সমস্যা মনে করছি কিন্তু এটাকে সম্পদে রূপান্তরের কোন চেষ্টাই করছি না আর করলেও তার সুফল পাচ্ছি না, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহন না করতে পারার কারণে। জনসম্পদের কথা বলে বলে আবার দেশের জনসংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। মানুষ কয়েক বছর আগে পরিবার পরিকল্পনার প্রতি ঝুঁকে গেলেও এখন আবার বহু সন্তানের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। বহির্বিশ্ব টেকনোলজিকে গুরুত্ব দিয়েছে। যে কারণে তারা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। তারা মানুষের আয়ুস্কাল বাড়িয়েছে। উন্নত দেশে মানুষ ১২০ বছরে বৃদ্ধ হয়। আর আমাদের দেশে ৬০ পেরুতেই বৃদ্ধ হয়ে পড়ি। মৃর্ত্যুকে আলিঙ্গন করার প্রতিক্ষায় থাকি জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্খায়। তাই বাংলাদেশের উচিত হবে এদেশের যুবশক্তি বা শ্রমঘণ্টা কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে বহির্বিশ্বের সহযোগিতা কাজে লাগানো যায় কি না সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে। অতি দ্রুত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো তা না হলে গায়ের শক্তি দিয়ে কিছু হবে না। বোঝা-ই বাড়বে। আবারো বলছি, মনে রাখতে হবে এখন আমরা আমাদের দেশের ডিভিডেন্ট পিরিওড বা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময় বা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি।

যুবশক্তিকে দেশের কাজে লাগানোর এখনই সময়:
জাতিসংঘের গবেষনায় যুব বলতে সাধারণত কৈশোর থেকে যৌবনে উত্তরণের মধ্যবর্তী সময়কে বুঝায়। এ সময় তারা কৈশোরের চেয়ে অধিক সুযোগ সুবিধা পেলেও তাদেরকে ঠিক প্রাপ্ত বয়স্ক হিসাবে গন্য করা হয় না। ‘‘জাতিসংঘের’’ হিসাব মতে, ১৫-২৪ বছর বয়সি নর-নারীকে যুব বলে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশে এ সময়সীমা ১৮-৩৫ বছর। যেভাবেই সংজ্ঞায়িত করা হোক না কেন, এ কথা বিশ^ব্যাপী স্বীকৃত যে, যুবদের ক্ষমতায়ন এর সাথে যে কোন দেশের বর্ধিত দরিদ্র জনগোষ্টির সাথে একটা যুগসূত্র রয়েছে। কারণ এটা জীবনের এমন একটি পর্যায়, যখন তারা ব্যক্তি অধিকার, সুযোগ সুবিধা ও অধিকার পেতে চায়, তারা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাঠামো ও প্রেক্ষাপঠকে প্রভাবিত করে এবং এর দ্বারা প্রভাবিতও হয়। দেশের এক -তৃতিয়াংশ যুব পুরুষ ও যুব মহিলা। বিশে^ এই মুহুর্তে যুব পুরুষ ও যুব মহিলার সংখ্যা সব চেয়ে বেশী। এদের অর্ধেকেরও বেশি এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে রয়েছে। বাংলাদেশে এখন ৬ (ছয়) কোটিরও বেশী যুব পুরুষ ও যুব মহিলা রয়েছে। বিশে^র তরুন সমাজের অর্ধেকের বেশী দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে। বাংলাদেশে এর সংখ্যা আরোও বেশী। অথচ – আজকের যুব সমাজ ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ বাংলাদেশের নির্মাতা। এটা হওয়া উচিৎ ছিল। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ যুব সমাজ। এরাই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নির্মাতা। এই যুব সমাজকে উন্নয়নের মূল ধারায় আরোও বেশী সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের একার পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়। সরকারের পাশাপাশি ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে যুব সমাজকে উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে।

ব্যবস্থাপনা ও কর্মপরিকল্পনায় পরিবর্তন আনয়ন জরুরী:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক, লেখক ও প্রাবন্ধিক ড. সৌমিত্র শেখরের কথায় উঠে এসেছে, একাডেমিক শিক্ষার সর্বোচ্চ সনদ নিয়েও বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছে দেশের অসংখ্য শিক্ষার্থী, চাকরি মিলছে না। স্নাতকোত্তর পাশের পর ৩ থেকে ৪ বছর আবার চাকরির জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। সর্বোচ্চ সনদ নিয়ে করতে হচ্ছে কোচিংও। তাতেও অনেকের চাকরি মিলছে না। আবার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কোটার মারপ্যাঁচে ধুঁকছে মেধাবীরা। কোটা সুবিধা নিয়ে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা ক্ষেত্রবিশেষে মেধাহীনরাও চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে পাবলিক পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরি পরীক্ষা সর্বত্র দেদারসে চলছে প্রশ্নফাঁস। এতে লেখাপড়া না করেও ফাঁকফোকরে সনদ পেয়ে যাচ্ছে মেধাহীনরা। দুর করতে হবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গলদ। প্রশ্নফাঁস, কোচিং বাণিজ্য, কোটা পদ্ধতির সংস্কার, শিক্ষার্থীদের চাকরির সমস্যাসহ শিক্ষাব্যবস্থার নানা অসঙ্গতি নিয়ে ভাবতে হবে নতুন করে।

সমাধান আসবে কিভাবে ?
অঙ্কুর আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা এর শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, আকলিমা শরমিন বলেছেন, অনেক গবেষনা করে দেখা গেছে এর সমাধান হতে পারে, আত্মকর্মসংস্থান মূলক কারিগরি-কর্মমুখী ও কর্মসংস্থান মূলক শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় চালু করা হয় এবং তা প্রতিপালনে সরকারী ও বেসরকরী ভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করা হয়, তা’হলেই বাংলাদেশ বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে। আর কোন ভাবে যদি শিক্ষিত যুবদের কর্মস্থান হয়, নিশ্চিত ভাবে পাল্টে যাবে দেশের চিত্র। দেশকে নিয়ে যারা ভাবেন তাদের আরো কিছু প্রস্তাবনা-

শিক্ষা ব্যবস্থায় আইসিটি, কারিগরি বা কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবহার:
কর্মমুখী শিক্ষা এমন এক ধরণের শিক্ষাব্যবস্থা, যা গ্রহণ করলে শিক্ষার্থীরা ঘরে-বাইরে, ক্ষেতে-খামারে, কলে-কারখানায় যেকোনো কাজে বা পেশায় অতি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার যোগ্যতা লাভ করে। কর্মমুখী শিক্ষার ধারণা মূলত পেশাগত কর্মের সাথে সম্পৃক্ত। এই শিক্ষা এক ধরণের বিশেষায়িত শিক্ষা, যা শিক্ষার্থীর কর্মদক্ষতা সৃষ্টি করে এবং শিক্ষার্থীকে সৃজনশীল ও উৎপাদনমুখী করে তোলে। সুতরাং, কর্মমুখী শিক্ষা যান্ত্রিক শিক্ষা নয়। এর কাজ জনশক্তিকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজ ও দেশের শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। গবেষনায় দেখা গেছে কর্মমুখী শিক্ষা মূলত চতুর্মুখী নীতি নিয়ে আবির্ভূত হয়। এগুলো হলো- (১) জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে শিক্ষার্থীকে পরিচয় করানো এবং তার সুপ্ত গুণাবলীকে জাগ্রত করা। (২) শিক্ষার্থীকে নৈতিক, সামাজিক এবং মানবিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত করে। (৩) গণতন্ত্রমনা, যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক নাগরিক হিসেবে তাকে গড়ে তোলে। (৪) কর্মক্ষমতা সৃষ্টি করে তাকে কর্মমুখী ও উপার্জনমূলক জনশক্তিতে রূপান্তর করে। কর্মমুখী ও ব্যবহারিক শিক্ষার শক্তিই হচ্ছে উন্নয়ন ও জাতি গঠনের আসল শিক্ষা। জাতীয় জীবনে অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি এই শিক্ষা। হাতে-কলমে শিক্ষাই হচ্ছে একটা জাতির উন্নতির চাবিকাঠি। শিক্ষা যেমন ব্যক্তিজীবনকে আলোকিত এবং উন্নত করে, তেমনি জাতি দেশকে সমৃদ্ধ ও সমুন্নত করে। শিক্ষাব্যবস্থায় আইসিটির ব্যবহার দিনদিন বেড়েই চলছে। তারপরেও কিছু বিষয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়িত করতে যেমন- আইসিটি ইন এডুকেশন মাস্টার প্ল্যান (২০১২-২০২১) প্রস্তুুত করেছেন সরকার। এছাড়াও ই-লার্নিং কার্যক্রমকে বেগবান করতে হবে দ্রুতগতিতে। শিক্ষা বোর্ডগুলোর আওতায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওয়েবসাইট তৈরি করাতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি স¤পৃক্ত করে একটি দক্ষ ও যুযোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে শিক্ষার সকল স্তরকে সম্পৃক্ত করে দক্ষ আইসিটি ইন এডুকেশন মাস্টার প্লান প্রণয়ন করতে হবে। ডিজিটাল কনটেন্ট বিষয়ে বেশী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, তাদের আইসিটি’র উপর উচ্চতর ট্রেনিং দিতে হবে, সারাদেশে দক্ষ আইসিটি ফর অ্যাডুকেশন ইন সেকেন্ডারি অ্যান্ড হায়ার সেকেন্ডারি লেভেল প্রকল্পের মাধ্যমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করতে হবে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ, স্পিকার, ইন্টারনেট, মডেম ও প্রজেক্টর বিতরণ করতে হবে। প্রশিক্ষককে ডিজিটাল কনটেন্ট ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া খুবই প্রয়োজন। এটুআই ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় শিক্ষকদের তৈরি ডিজিটাল কন্টেন্ট শেয়ারিংয়ের জন্য শিক্ষা বাতায়ন নামে একটি কন্টেন্ট পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে এটা কাজে লাগানো হচ্ছে কি- না সেটা সার্বক্ষনিক মনিটরিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।

দেশী-বিদেশী চাকুরীর চাহিদা মাথায় রেখে কর্মমুখী যুগোপযোগী শিক্ষার ব্যবস্থা করা:
কর্মমুখী শিক্ষার উপকারিতা অনেক এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১. কর্মমুখী শিক্ষার ফলে বেকারত্ব লাঘব হয়। ২.আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। ৩. ব্যক্তিস্বাধীনতা অক্ষুন্ন থাকে। ৪.সাধারণ শিক্ষার প্রতি চাপ কমে। ৫. জীবনে হতাশা, শূন্যতা ও ব্যর্থতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ৬. নতুন নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ৭. ব্যাক্তি, সমাজ ও দেশ সুখি, সমৃদ্ধ ও উন্নতি লাভ করে। ৮. মানুষের আয়ু বেড়ে যায়। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পিপিআরসি-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার নিশ্চয়তায় এখন কী ধরনের শিক্ষা প্রয়োজন সেদিকে নজর দেয়ার সময় এসেছে। কর্মসংস্থানের চাহিদা মাতায় রেখে ও শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে একটি জাতীয় সমন্বয় প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সমন্বিত একটি নীতিমালার আলোকে নতুন নতুন শিক্ষালয় স্থাপনের অনুমোদন ও তা সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখা জরুরি। সেই সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগতমান নিশ্চিত করতে হবে। দেশীয় কর্মমুখী শিক্ষা নানা ধরনের হতে পারে। প্রথমতঃ- ডাক্তার, প্রকৌশলী এবং কৃষিবিদ প্রভৃতি যারা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে কাজ করেন। তারা তাদের ইচ্ছামতো স্বাধীন পেশায় নিয়োজিত হন। দ্বিতীয়তঃ- কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা। এখানে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক শিক্ষাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এ জাতীয় শিক্ষার মধ্যে হাঁস-মুরগী পালন, কুটির শিল্প, মৎস্য চাষ, নার্সারি, ধাত্রীবিদ্যা, কাঠমিস্ত্রির কাজ, সেলাই কাজ, ছাপাখানার কাজ, দর্জির কাজ, শ্রমিকের কাজ, বিদ্যুতের কাজ, বই বাঁধাই, ওয়েলডিং এর কাজ, টেলিভিশন- বেতার- মোটর মেরামতের কাজ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
আন্তর্জাতিক চাহিদা মাথায় রেখে কারিগরি কর্মমুখী যুগোপযোগী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। যে সকল সরকারী বে-সরকারী, ব্যাক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলির জন্য সুনির্দিষ্ট নিতীমালা, তাদেরকে মনিটরিং ও পৃষ্টপোষকতা করা হলে বেকার যুবদের মধ্যে আশার সঞ্চার হবে, তারা প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী হবে। ধীরে ধীরে বাড়বে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আর অন্যদিকে কমবে বেকারত্ব। দেশ হবে বেকারমুক্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবানের জন্য এটাই হবে কার্যকরী ও উত্তম পদক্ষেপ। এ বিষয়ে আমি বেশী গুরুত্ব দিতে বলবো বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চাকরির বাজারে চাহিদা ও সামঞ্জস্য রেখে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে প্রচলিত কারিকুলাম আধুনিক ও যুগোপযোগী করা একান্তই জরুরী। কারিগরি বোর্ডকে আরো ঢেলে সাজাতে হতে, করতে হবে আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী কারিগরি বোর্ডের মাধ্যমে চালু করতে হবে ইমার্জিং ট্রেড ও টেকনোলজি। যেমন টেলিকমিউনিকেশন টেকনোলজি, মাইনিং অ্যান্ড মাইন সার্ভে টেকনোলজি, ইলেকট্রো-মেডিকেল টেকনোলজি, গার্মেন্টস ডিজাইন অ্যান্ড প্যাটার্ন মেকিং টেকনোলজি, এনভায়রনমেন্টাল টেকনোলজি ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলেই গড়ে উঠবে স্বপ্নের সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ।

অদম্য মনোবল যাদের তাদের নিয়ে গল্প লিখে উৎসাহ প্রদান:
এবারের এসএসসির ফল বেরোলো রোববার (৬ মে ২০১৮)। এ নিয়ে সোমবারের সংবাদপত্র যতটা সরব ছিল, মঙ্গলবার ততটা দেখা যায়নি। সম্পাদকীয়, একাদশ শ্রেণির ভর্তি ও অন্যান্য সংবাদ প্রকাশ হলেও আগের মতো অদম্য মেধাবীদের নিয়ে তেমন খবর চোখে পড়েনি। নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে যারা জীবনের অন্যতম পর্যায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, ভালো ফল করে, তাদের গল্প সংবাদপত্রে আগে কয়েক দিন ধরে প্রকাশ হতো। এখন তা কমে গেছে। তার পরও অনেকের খবর আসছে, অনলাইনে নানা মাধ্যমেও আমরা তাদের গল্প জানতে পারছি। পা দিয়ে লিখে জিপিএ-৫, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা জয় করে উত্তীর্ণ, দারিদ্র্য জয় করে ভালো ফল, মা-ছেলে একসঙ্গে পাস সহ- এমন অনেক শারীরিক, আর্থিক ও বয়সের প্রতিবন্ধকতা জয় করে উত্তীর্ণ হওয়ার খবর আমাদের প্রেরণা জোগায়। এভাবে পড়াশোনা করে অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত। যুগ যুগ ধরে এটাই চলে আসছে। সমাজে সহৃদয় মানুষ যেমন আছেন, একই সঙ্গে নানা প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসছে। প্রতি বছর দরিদ্র-মেধাবীদের শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের সহায়তায় পড়াশোনা চালিয়ে নেন অনেকে। এভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। দিন দিন শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। শিক্ষার বাইরে যাতে কেউ না থাকে সে জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগ। শিক্ষা ও শিক্ষাহীনতার পার্থক্য মানুষ বুঝছে। ফলে আমরা দেখছি, শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণও অনেক বেড়েছে। দরিদ্র কিংবা স্বল্পশিক্ষিত অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেন। সবকিছুর ঊর্ধ্বে অদম্য মনোবল। মানুষের আগ্রহ ও ইচ্ছা থাকলে কোনো প্রতিবন্ধকতাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। জীবনের সর্বক্ষেত্রেই তা প্রয়োজন। যে মনোবল একবার আপনাকে এগিয়ে নিয়েছে, যে মনোবলে আপনি মাধ্যমিকের চৌকাঠ পেরিয়েছেন, তা অটুট থাকলে পরবর্তী পড়াশোনাও সহজ হয়ে যায়। বড় বড় মানুষের গল্প এমনই। পা দিয়ে লিখে যে ছেলেটি পঞ্চম শ্রেণির সমাপনীতে সর্বোচ্চ গ্রেড পেল, এবারের এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেল; তার অদম্য মনোবল আর এই ফলের প্রেরণা নিশ্চয়ই তাকে এগিয়ে নেবে। এভাবেই একদিন বাংলাদেশ তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

আশার বাণী:
আমার লেখার বিষয়গুলি যদি ভুল হয়, আমি পাঠক সহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে সবিনয়ে আন্তরিক ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। আর যদি সঠিক হয় তা’হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সরকারের যারা নীতিনির্ধারক তাদের কাছে বিনীত অনুরোধ করবো বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করবেন এই আমার সবিনয় অনুরোধ। আমি আশাবাদী সব সময় বাংলাদেশকে নিয়ে। এই দেশ স্বল্প আয়, মধ্য আয় কিংবা উন্নয়নশীল দেশ নয়, একদিন এই দেশ উন্নত দেশের স্বীকৃতি পাবে সেদিন বেশী দুরে নয়- সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার একসময় বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলেছিলেন। কারণ বাংলাদেশ সে সময় প্রচুর বৈদেশিক অর্থ সহযোগিতা ও ঋণ পেত; কিন্তু তা ঠিকমতো কাজে লাগানো যেত না। ‘বাস্কেট কেস’ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচয় ছিল দীর্ঘদিন ধরে। সেই বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে এখন বলা হচ্ছে অমীমাংসিত রহস্য। বিশ্বব্যাংকের বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘দিস ইজ দ্য ক্রাক্স অব দ্য সারপ্রাইজ’। বিশ্বে এখন ধনী দেশগুলোর বাইরে অগ্রসরমাণ বড় অর্থনীতি হিসেবে তারা চারটি দেশের নাম বলছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন। সংক্ষেপে এদের বলা হয় ব্রিকস। বিশ্বখ্যাত মার্কিন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাচ বলছে, এর পরই রয়েছে ‘নেক্সট ইলেভেন’। এই ১১ দেশের একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। আরেক মার্কিন প্রতিষ্ঠান জেপি মরগান বলছে, অগ্রসরমাণ পাঁচ দেশের একটি এখন বাংলাদেশ।

পরিশেষে শেষ করছি একটি উদাহরণ টেনে। ফরাসি দার্শনিক ‘জোসেফ প্রধো’ রচনা করেছিলেন একটি গ্রন্থ, নাম ‘দারিদ্র্যের দর্শন’। গ্রন্থের নামে আগ্রহী হয়ে মহামতি ‘কার্ল মার্কস’ আদ্যোপান্ত পাঠ করলেন গ্রন্থটি। আশানুরূপ তৃপ্ত না হতে পেরে মার্কস নিজেই লিখে ফেলেন একটি গ্রন্থ- ‘দর্শনের দারিদ্র্য’। এত কথার পরও যদি কেউ কর্মমুখী শিক্ষার বিষয়ে একমত না থাকতে পারেন, তবে তার জন্য প্রয়োজন হবে নতুন কোন গ্রন্থের, যে গ্রন্থের নাম হতে পারে ‘চিন্তার দারিদ্র্য’। অথবা আওড়াতে হবে জীবনানন্দ দাশ: ‘অদ্ভুত আঁধার এক আসিয়াছে পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা’।

লেখক: সমাজকর্মী, বিভাগীয় ইনচার্জ সিলেট, যুবউন্নয়ন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
তারিখঃ ০১-০৫-২০১৮ইং