বাংলাদেশ এখন স্বৈরশাসনের অধীন এবং সেখানে এখন গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদণ্ড পর্যন্ত মানা হছে না বলে মন্তব্য করেছে একটি জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের ১২৯টি দেশে গণতন্ত্র, বাজার অর্থনীতি এবং সুশাসনের অবস্থা নিয়ে এক সমীক্ষার পর জার্মান প্রতিষ্ঠান ‘বেরটেলসম্যান স্টিফটুং’ তাদের রিপোর্টে এই মন্তব্য করে। রিপোর্টটি শুক্রবার প্রকাশ করা হয়েছে।
রিপোর্টে ১২৯টি দেশের মধ্যে ৫৮টি দেশ এখন স্বৈরশাসনের অধীন এবং ৭১টি দেশকে গণতান্ত্রিক বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ২০১৬ সালে তাদের আগের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বিশ্বের ৭৪টি দেশে গণতান্ত্রিক এবং ৫৫টি দেশে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন চলছে। একশো উনত্রিশটি দেশের গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে যে সূচক এই সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০ নম্বরে। একই অবস্থানে আছে রাশিয়া। উরুগুয়ে, এস্তোনিয়া এবং তাইওয়ান আছে এই সূচকের শীর্ষে। আর একেবারে তলায় রয়েছে সোমালিয়া, ইয়েমেন এবং সিরিয়া। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের অবস্থান অবশ্য বাংলাদেশের নীচে – ৯৮ নম্বরে। মিয়ানমারের অবস্থান ১০৪ নম্বরে। অন্যদিকে ভারত আছে বেশ উপরের দিকে – ২৪ নম্বরে। শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৪১ নম্বরে।
‘বেরটেলসম্যান স্টিফটুং’ ২০০৬ সাল থেকে নিয়মিতভাবে এ ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছে। তবে তাদের এই সমীক্ষায় উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ পরিণত গণতন্ত্রের দেশগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বে গত ১২ বছরের মধ্যে গণতন্ত্র এবং সুশাসনের অবস্থা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এক সময় বিশ্বের যেসব দেশকে মুক্ত বলে ভাবা হতো, সেসব দেশের সরকারও ক্রমশ কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠছে।
রিপোর্টে বলা হয়, বিশ্বে যে স্বৈরতান্ত্রিক দেশের সংখ্যা সামান্য বেড়েছে, সেটার চাইতে বেশি উদ্বেগের বিষয় হছে গণতান্ত্রিক দেশিগুলিতেও এখন নাগরিক অধিকার ক্রমশ খর্ব করা হছে এবং আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত হছে। ব্রাজিল, পোল্যান্ড এবং তুরস্কের মতো দেশ, যাদেরকে গণতন্ত্রায়নের আলোকবর্তিকা হিসেবে দেখা হচ্ছিল, তাদেরই সবচেয়ে বেশি অবনতি ঘটেছে।
এই রিপোর্টে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তুরস্কের কথা। এতে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে তাদের সর্বশেষ রিপোর্টের পর তুরস্কেই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বেশি অধোগতি দেখা গেছে। প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়িব এরদোয়ান সেখানে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর মত প্রকাশ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সভা-সমাবেশ করার অধিকার ব্যাপকভাবে খর্ব করেছেন বলে মন্তব্য করা হয়।
‘বাংলাদেশ আর গণতান্ত্রিক নয়’
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে এই সমীক্ষা চালানো হয় যেসব দেশের ওপর, তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে পাঁচটি দেশের কথা, বাংলাদেশ, লেবানন, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া এবং উগান্ডা।
রিপোর্টে বলা হছে, এই পাঁচটি দেশ এখন আর গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদণ্ড পর্যন্ত মানছে না। এসব দেশে বহু বছর ধরেই গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছিল। এসব দেশের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থার কারণেই এটা ঘটেছে বলে মন্তব্য করা হয় রিপোর্টে।
এই পাঁচটি নতুন স্বৈরতান্ত্রিক দেশ এমন একটা পর্যায় অতিক্রম করেছে, যেদিকে যাছে আরও কিছু ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের দেশ – হন্ডুরাস, হাঙ্গেরি, মলডোভা, নিজার, ফিলিপাইন এবং তুরস্ক।
তবে রিপোর্টে কিছু কিছু দেশে গণতান্ত্রিক অগ্রগতির প্রশংসা করা হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা, মরিশাস এবং উরুগুয়ে। ২০১৬ সালের রিপোর্টে বার্কিনা ফাসো এবং শ্রীলঙ্কাকে মধ্যম মাত্রার স্বৈরতন্ত্র বলে বর্ণনা করা হয়েছিল। এই দুটি দেশকে এবারের রিপোর্টে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র বলা হয়েছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা অনলাইন।