ঢাকা ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
বিমানের প্যারিস-ঢাকা ফ্লাইট পুনরায় চালুর জোরালো দাবী প্রবাসীদের বালাগঞ্জে ছাত্রদল নেতা সায়েম আহমদ হত্যা মামলার অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা খলকু মিয়া আটক গহরপুর ছাত্রকল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণদেরকে সংবর্ধনা ও শিক্ষা সেমিনার অন্তর্বর্তীকালীন সকল সিদ্ধান্ত জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই নেওয়া উচিত- বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদিক সম্মেলন করলেন সিলোট জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য লোকন মিয়া বালাগঞ্জে চলন্ত ফ্যান খুলে গিয়ে ৩ শিক্ষার্থী আহত জমকালো আয়োজনে সিলেটে “কালবেলা”র দ্বিতীয় প্রতিবার্ষিকী পালিত সামাজিক সংস্থা ‘সাফ’ এর নতুন কমিটি গঠন : নয়ন সভাপতি, আকাশ হেলাল সহসভাপতি, রুবেল সাধারন সম্পাদক পাথর ও মানুষ – শ্যামল বণিক অঞ্জন

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট লক্ষ্য করে ১৭ মাসে ৬ হামলা : এবারের হামলাকারী সুদানী বংশোদ্ভুত

  • আপডেট সময় ০৩:৫০:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অগাস্ট ২০১৮
  • ১৬৯ বার পড়া হয়েছে

ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা হতে চলেছে। গত ১৪ আগস্ট (মঙ্গলবার) পার্লামেন্টের নিরাপত্তাবেষ্টনীতে গাড়ি দিয়ে যে হামলার ঘটনা ঘটে, এতে কয়েকজন আহত হন। এনিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্লামেন্ট এলাকায় গত ১৭ মাসে ৬টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটলো। দ্যা ইনডিপেণ্ডেন্টের সংবাদ অনুযায়ী গত বছরের মার্চে ওয়েস্টমিনস্টারে পুলিশ অফিসারসহ চারজন নিহত হওয়ার পর চারটি হামলার টার্গেট করা হয়। এর মধ্যে একটি ছিলো উগ্র-ডানপন্থীদের। এই হিসেবে মঙ্গলবারের হামলাটি ষষ্ঠতম। পুলিশ কর্তৃক প্রকাশিত পরিচয় ও ছবি থেকে জানা গেছে, ঐ সন্ত্রাসী হামলাকারী ২৯ বছর বয়সী একজন কৃষ্ণাঙ্গ ও সুদানী বংশোদ্ভুত, নাম সালিহ খাতের। তাকে সাউথ লন্ডনের একটি পুলিশ স্টেশনে রেখে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করে যাচ্ছে স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডের সন্ত্রাসবিরোধী কমান্ড। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে আরো জানা যায়, ১৫ সাইকেল আরোহীকে হামলার পরিকল্পনাও তার ছিলো বলে সে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।

মঙ্গলবারের হামলা নিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, তারা বিষয়টি নিয়ে মুক্তমনা চিন্তা করছেন। হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনই কিছু বলছেন না। ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ জানায়, তারা ইংল্যাণ্ড, স্কটল্যাণ্ড ও ওয়েলসে টহল পুলিশ বাড়াচ্ছেন। ব্যস্ততম সময়েই এই ঘটনাটি ঘটে।

লণ্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার নিল বাসু এই ঘটনার তদন্ত করছেন। তিনি বলেন, আটককৃত ব্যক্তি পুলিশকে সহায়তা করছে না। তিনি বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে হামলাকারীর পরিচয় ও উদ্দেশ্য খুঁজে বের করা। তবে তিনি এ বিষয়ে আমাদের সহায়তা করছে না। বাসু বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের কাছে কোনও গোয়েন্দা তথ্য নেই। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এটা ইচ্ছাকৃত হামলা মনে হচ্ছে।

হামলার পর ব্রিটিশ সরকারের কোবরা এমারজেন্সি কমিটি বৈঠকে বসে। ঘটনার পরপর প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে হতাহতদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে বলেছেন, আমি তাদের সঙ্গে আছি। একইসঙ্গে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান তিনি। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ ও লণ্ডনের মেয়র সাদিক খানও জরুরি সার্ভিসের প্রশংসা করেছেন।

ডেইলি মেইলের সংবাদে হামলাকারীর বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে বলা হয়েছে, সালিহ খাতের প্রায় ৫ বছর আগে বৃটেনে আসে। এদেশে তার আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই। বার্মিংহামের কভেণ্ট্রিতে ছিলো তার একাকী বসবাস। সম্ভবত সে একজন এসাইলাম সিকার বা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রর্থী। ব্রিটিশ সিটিজেনশীপের জন্য তার দেয়া ডক্যুমেণ্টে বেশ গরমিল পাওয়ার পর তা তদন্ত করে দেখছে হোম অফিস। একাউন্টেসির ছাত্র হলেও প্রথম বর্ষের ব্যর্থতার কারণে তাকে ইউনিভার্সিটি থেকেও সম্প্রতি বের করে দেয়া হয়েছে। প্রায় এক মাস আগে সে তার বাবা ও ভাইকে হারিয়েছে। বার্মিংহামে তাকে যারা চেনেন তাদের ভাষ্যমতে, অনেকটা নিঃসঙ্গতায় কাটতো সালিহ খাতেরের সময়। তবে সে ছিলো কানাডিয়ান সঙ্গীতশিল্পী সিলিয়ন ডিওনের ভক্ত। ফ্ল্যাটের নীচের ইণ্টারনেট ক্যাফেতে শীশা পান করে বেশীরভাগ সময় কাটতো তার। ইতোপূর্বে পার্লামেণ্টের সামনে গাড়ি চাপিয়ে পথচারী ও ছুরিকাঘাতে পুলিশ হত্যাকারী সন্ত্রাসী খালেদ মাসুদের ফ্ল্যাট থেকে মাত্র ১০ মিনিটের দূরত্বে সালিহ খাতেরের কাউন্সিল ফ্ল্যাট। খালিদ মাসুদের সাথে তার কোনো যোগাযোগ ছিলো কিনা বা তার কাছ থেকে সে উৎসাহিত হলো কিনা সেটিও এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত বছর লণ্ডনে সিরিজ সন্ত্রাসী হামলার পর এই ঘটনাকে বড় ধরনের হুমকি বিবেচেনা করা হচ্ছে। গত বছর মার্চে ওয়েস্টমিনস্টারে এক গাড়ি হামলায় এক পুলিশ অফিসারসহ চারজন প্রাণ হারিয়েছিলেন। ওই হামলা চালিয়েছিলেন আইএস অনুপ্রাণিত খালিদ মাসুদ নামে এক ব্রিটিশ। ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজে পথচারীদের উপর গাড়ি উঠিয়ে হামলার পর পার্লামেণ্টে সামনে দায়িত্বরত একজন পুলিশ অফিসারকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন তিনি। এর কিছুদিন পর লণ্ডন ব্রিজে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে পার্লামেণ্ট এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর পাশাপাশি পথচারীদের নিরাপত্তার জন্য সবগুলো ব্রিজের ফুটপাত শক্ত ডিভাইডার দিয়ে পৃথক করা হয়।

তাছাড়া, ২০১৭ সালে পার্লামেন্টের সামনে হামলার পরই লণ্ডনে সতর্কাবস্থা জারি হয়। মার্চে ওয়েস্টমিনিস্টারে হামলার পর মে মাসে ম্যানচেস্টারের আরিয়ানা গ্রাণ্ডের কনসার্টে হামলায় নিহত হয় ২২ জন। এছাড়া জুনে লণ্ডন ব্রিজের কাছে গাড়ি হামলাতেও প্রাণ হারান আটজন।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

লক ডাউন পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফ্রান্সে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি

যুক্তরাজ্যে করোনার মধ্যেই শিশুদের মাঝে নতুন রোগের হানা

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট লক্ষ্য করে ১৭ মাসে ৬ হামলা : এবারের হামলাকারী সুদানী বংশোদ্ভুত

আপডেট সময় ০৩:৫০:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অগাস্ট ২০১৮

ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা হতে চলেছে। গত ১৪ আগস্ট (মঙ্গলবার) পার্লামেন্টের নিরাপত্তাবেষ্টনীতে গাড়ি দিয়ে যে হামলার ঘটনা ঘটে, এতে কয়েকজন আহত হন। এনিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্লামেন্ট এলাকায় গত ১৭ মাসে ৬টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটলো। দ্যা ইনডিপেণ্ডেন্টের সংবাদ অনুযায়ী গত বছরের মার্চে ওয়েস্টমিনস্টারে পুলিশ অফিসারসহ চারজন নিহত হওয়ার পর চারটি হামলার টার্গেট করা হয়। এর মধ্যে একটি ছিলো উগ্র-ডানপন্থীদের। এই হিসেবে মঙ্গলবারের হামলাটি ষষ্ঠতম। পুলিশ কর্তৃক প্রকাশিত পরিচয় ও ছবি থেকে জানা গেছে, ঐ সন্ত্রাসী হামলাকারী ২৯ বছর বয়সী একজন কৃষ্ণাঙ্গ ও সুদানী বংশোদ্ভুত, নাম সালিহ খাতের। তাকে সাউথ লন্ডনের একটি পুলিশ স্টেশনে রেখে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করে যাচ্ছে স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডের সন্ত্রাসবিরোধী কমান্ড। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে আরো জানা যায়, ১৫ সাইকেল আরোহীকে হামলার পরিকল্পনাও তার ছিলো বলে সে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।

মঙ্গলবারের হামলা নিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, তারা বিষয়টি নিয়ে মুক্তমনা চিন্তা করছেন। হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনই কিছু বলছেন না। ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ জানায়, তারা ইংল্যাণ্ড, স্কটল্যাণ্ড ও ওয়েলসে টহল পুলিশ বাড়াচ্ছেন। ব্যস্ততম সময়েই এই ঘটনাটি ঘটে।

লণ্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার নিল বাসু এই ঘটনার তদন্ত করছেন। তিনি বলেন, আটককৃত ব্যক্তি পুলিশকে সহায়তা করছে না। তিনি বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে হামলাকারীর পরিচয় ও উদ্দেশ্য খুঁজে বের করা। তবে তিনি এ বিষয়ে আমাদের সহায়তা করছে না। বাসু বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের কাছে কোনও গোয়েন্দা তথ্য নেই। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এটা ইচ্ছাকৃত হামলা মনে হচ্ছে।

হামলার পর ব্রিটিশ সরকারের কোবরা এমারজেন্সি কমিটি বৈঠকে বসে। ঘটনার পরপর প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে হতাহতদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে বলেছেন, আমি তাদের সঙ্গে আছি। একইসঙ্গে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান তিনি। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ ও লণ্ডনের মেয়র সাদিক খানও জরুরি সার্ভিসের প্রশংসা করেছেন।

ডেইলি মেইলের সংবাদে হামলাকারীর বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে বলা হয়েছে, সালিহ খাতের প্রায় ৫ বছর আগে বৃটেনে আসে। এদেশে তার আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই। বার্মিংহামের কভেণ্ট্রিতে ছিলো তার একাকী বসবাস। সম্ভবত সে একজন এসাইলাম সিকার বা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রর্থী। ব্রিটিশ সিটিজেনশীপের জন্য তার দেয়া ডক্যুমেণ্টে বেশ গরমিল পাওয়ার পর তা তদন্ত করে দেখছে হোম অফিস। একাউন্টেসির ছাত্র হলেও প্রথম বর্ষের ব্যর্থতার কারণে তাকে ইউনিভার্সিটি থেকেও সম্প্রতি বের করে দেয়া হয়েছে। প্রায় এক মাস আগে সে তার বাবা ও ভাইকে হারিয়েছে। বার্মিংহামে তাকে যারা চেনেন তাদের ভাষ্যমতে, অনেকটা নিঃসঙ্গতায় কাটতো সালিহ খাতেরের সময়। তবে সে ছিলো কানাডিয়ান সঙ্গীতশিল্পী সিলিয়ন ডিওনের ভক্ত। ফ্ল্যাটের নীচের ইণ্টারনেট ক্যাফেতে শীশা পান করে বেশীরভাগ সময় কাটতো তার। ইতোপূর্বে পার্লামেণ্টের সামনে গাড়ি চাপিয়ে পথচারী ও ছুরিকাঘাতে পুলিশ হত্যাকারী সন্ত্রাসী খালেদ মাসুদের ফ্ল্যাট থেকে মাত্র ১০ মিনিটের দূরত্বে সালিহ খাতেরের কাউন্সিল ফ্ল্যাট। খালিদ মাসুদের সাথে তার কোনো যোগাযোগ ছিলো কিনা বা তার কাছ থেকে সে উৎসাহিত হলো কিনা সেটিও এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত বছর লণ্ডনে সিরিজ সন্ত্রাসী হামলার পর এই ঘটনাকে বড় ধরনের হুমকি বিবেচেনা করা হচ্ছে। গত বছর মার্চে ওয়েস্টমিনস্টারে এক গাড়ি হামলায় এক পুলিশ অফিসারসহ চারজন প্রাণ হারিয়েছিলেন। ওই হামলা চালিয়েছিলেন আইএস অনুপ্রাণিত খালিদ মাসুদ নামে এক ব্রিটিশ। ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজে পথচারীদের উপর গাড়ি উঠিয়ে হামলার পর পার্লামেণ্টে সামনে দায়িত্বরত একজন পুলিশ অফিসারকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন তিনি। এর কিছুদিন পর লণ্ডন ব্রিজে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে পার্লামেণ্ট এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর পাশাপাশি পথচারীদের নিরাপত্তার জন্য সবগুলো ব্রিজের ফুটপাত শক্ত ডিভাইডার দিয়ে পৃথক করা হয়।

তাছাড়া, ২০১৭ সালে পার্লামেন্টের সামনে হামলার পরই লণ্ডনে সতর্কাবস্থা জারি হয়। মার্চে ওয়েস্টমিনিস্টারে হামলার পর মে মাসে ম্যানচেস্টারের আরিয়ানা গ্রাণ্ডের কনসার্টে হামলায় নিহত হয় ২২ জন। এছাড়া জুনে লণ্ডন ব্রিজের কাছে গাড়ি হামলাতেও প্রাণ হারান আটজন।