ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী- ব্রিটেনে অবৈধ ইম্মিগ্রান্টদের বৈধতাদানের বিষয়টি অনেক দিনের দাবি।
সমসাময়িক কালের ইমিগ্রেশনের নথি খুঁজলে দেখা যায় ২০০০ সালে “অবার স্টেয়ার রেগুলেশন ২০০০” নামে আইন করে হোম অফিস কিছু নীতি মালার মধ্যে অবৈধ ভাবে বসবাসকারীদের ব্রিটেনে বসবাসের সুযোগ দিয়েছিলো।
তারপর জুলাই ২০০৬ সালে হোম অফিসে আটকে পড়া ৪৫০,০০০ (চারশত পঞ্চাশ হাজার) ফাইলের (কেইসের) উপর ৫ বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা হোম অফিস গ্রহণ করেছিলো, যা বহুল ভাবে লিগেসি হিসাবে পরিচিত।
যার মধ্যে ১৬১,০০০ (একশত একষট্টি হাজার) মানুষকে বিভিন্ন ভাবে বসবাস করার সুযোগ দেয়া হয় এবং ফাইলগুলো বিভিন্ন জটিলতার কারনে প্রত্যাখান করে ২০১১ সালে লিগেসির পরিসমাপ্তি ঘটে।
এর মধ্যে ২০১০ সালের ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান (ব্রিটেনের তৃতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক দল) নিক ক্লেগ ব্রিটেনে অবৈধ ভাবে বসবাসকারীদের বিভিন্ন শর্তের মাধ্যমে বৈধতা প্রদানের প্রস্তাব করেছিলেন, যার নাম ছিলো ” রুট টু সিটিজেনশিপ”
উনার প্রস্তাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো নিম্নরূপ:
■ আবেদনকারীকে ব্রিটেনে মিনিমাম ১০ বছর কিংবা তার অধিক সময় ব্রিটেনে বসবাসের প্রমান থাকতে হবে।
■ আবেদনকারী কোন ক্রিমিনাল রেকর্ড থাকবেনা।
■ আবেদনকারীকে অবশ্যই ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হতে হবে।
■ আবেদনকারীকে একটি নির্ধারিত পদ্বতিতে নাগরিকত্ব অর্জনের নীতিমালা প্রদান করা হবে যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে থাকে সেটা পূরণ করতে হবে।
নিকক্লেগের যুক্তি ছিলো ৯০০,০০০ (নয়শত হাজার) অবৈধ অভিবাসীদের জোরকরে ফেরত পাঠানো খুবই কঠিন। সুতরাং তাদের আইনের মাধ্যমে বৈধতা দানই হলো উত্তম পন্থা।
২০০৯ সাল তৎকালীন লন্ডন মেয়র এবং বর্তমান বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী বরিস জনসন, নিক ক্লেগের উপরের প্রস্তাবের মতোই একটি প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দিয়ে আসছেন। উনার দাবি হলো ১০ বছরের অধিক সময় ধরে যারা ব্রিটেনে অবৈধভাবে বসবাস করছেন তাদের বৈধতা দিয়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসা।
উনার যুক্তি হলো এতে একদিকে বৈধ শ্রমিক সংকটের সুরাহা হবে অপরদিকে তাদের আয় থেকে সরকারি কোষাগারে কর আসবে আর এতে দুই পক্ষই লাভবান হবেন।
রক্ষণশীল দল টোরি পার্টি আর উদারপন্থী দল লিবারেল ডেমোক্রেটের নিকক্লেগ ২০১০ সালে সরকার গঠন করেন। তখন শুনা গিয়েছিলো নিকক্লেগের দাবি ডেভিড কেমেরুন গ্রহণ করেছেন।
কিন্তূ বিধিবাম কেমেরুন কিন্তু পরে তার এই কথা শুধু রাখেনইনি বরং কেমেরুন সরকারের সময় অবৈধ অভিবাসীরা সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত হয়েছেন।
ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন কঠিন আইন একের পর এক তৈরী হতে থাকে। অবৈধদের কাজে রাখলে জরিমানা, বসত ঘরে ভাড়া দিলে কিংবা আশ্রয় দিলে জরিমানা, ডাক্তারের লিস্ট থেকে নাম কর্তন, ব্যংক একাউন্ট জব্দ ইত্যাদি। শুধু তাই নয় টেলিফোনে টেক্সট মেসেজ অথবা চিঠি লিখে দেশ ত্যাগের নির্দেশনা কিংবা গাড়ির (ভ্যানের) সাইন টানিয়ে দেশ ছাড়ার নির্দেশনা আরো কতোকি।
আর এর শুরুটা হয়েছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে যিনি তখন ছিলেন হোম সেক্রেটারি।
উনার বিরুদ্বে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো উনি হোম সেক্রেটারি থাকাকালীন সময়ে প্রায় ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) ছাত্র-ছাত্রীদের অন্যায় ভাবে অনুমান নির্ভর অভিযোগের ভিত্তিতে ডিপোর্ট করেছিলেন।
যার মধ্যে অনেকেই সঠিক ভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়নাই।
আর তাই স্বভাবতই অবৈধদের বৈধতাদানের বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।
তবে এই শত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে ও বরিস জনসনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে দলের ভিতরে ও বাহিরে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দানের বিষয় নিয়ে যুক্তি উপস্থাপন অব্যাহত ছিলো।
যদি ও সাবেক হোক সেক্রেটারি এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কখনোই দাবির প্রতি কর্ণপাত করেননি।
ব্রেক্সিটের দখল সামাল দেয়ার জন্য যখন ব্রিটেন কমনওয়েলথ দেশ গুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বর্তমানে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে বেশ কিছু সেক্টরে কর্মী সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। কঠিন আইনের জটিলতায় ছাত্ররাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
ছাত্র বান্দ্বব এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য ব্রিটেনের যে সুনাম ছিলো তা আজ একদম ফিকে হয়েগেছে।
সম্প্রতি ব্রিটিশ হোম সেক্রেটারি আম্বার রুড “উইন্ড রাশ” জেনারেশন কেলেঙ্কারি মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হোন। আর এই সব কিছুর পেছনে টোরি পার্টি একক ভাবে দায়ী। এক কথায় ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটির কাছে টোরি পার্টি এখন একটি আতংক।
টোরি পার্টির এই বিতর্কিত অবস্থান থেকে সরাতে এবং পুরো মাইগ্রেশন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে ব্রিটেনে এই প্রথম বারের মতো নিয়োগ দেয়া হয়েছে মাইনোরিটি কমিউনিটি থেকে সাজিদ জাবিদকে।
সাজিদ জাবিদের নিয়োগ নিয়ে শুরুতে ব্রিটেনে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিলো। তবে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে উনি বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় নিয়ে এগুচ্ছেন।
উনি ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি ছাত্ৰ ভিসার পদ্দ্বতি শিথিল করবেন।
যার উদ্দেশ্য হলো ব্রিটেনের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা এবং ছাত্র বান্দব পরিবেশ তৈরী করা।
দক্ষ ইমিগ্রান্টদের ভিসার পদ্বতি শিথিল করা যাতে কর্মী সংকট দূর করা। আর এই সব কিছুর মুলে রয়েছে ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির কাছে টোরি পার্টিকে জনপ্রিয় করা এবং ভোটারদের আকৃষ্ট করা।
দেরিতে হলেও মনে হচ্ছে টোরি পার্টি বর্তমানে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়ে এগুচ্ছে।
আর এই সব কিছু বিবেচনা করলে অদূর ভবিষ্যতে শর্ত স্বাপেক্ষে এমিনেস্টি দেয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায়না।
লেখক: ব্যরিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী,
কন্ট্রিবিউটর ব্রিটবাংলা
সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সহসভাপতি দি সোসাইটি অব ব্রিটিশ- বাংলাদেশী সলিসিটিরস,
প্রিন্সিপাল কেসি সলিসিটর্স