ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) প্রক্রিয়ার অন্তর্বর্তী সময়ের বিভিন্ন শর্তে সমঝোতায় পৌঁছানোর ঘোষণা দিয়েছে দুইপক্ষ। সোমবার ২১ মাসের এই অন্তর্বর্তী সময়ের বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছায় তারা। ইইউ’র প্রধান ব্রেক্সিট মধ্যস্থতাকারী মাইকেল বারনিয়ার ও যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিটমন্ত্রী ডেভিড ডেভিস একত্রে এই ‘নিষ্পত্তিমূলক পদক্ষেপে’র ঘোষণা দেন।
সোমবার (১৯ মার্চ) বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে ঘোষণায় বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই রুপান্তরের সময় ধরা হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে যু্ক্তরাজ্যের ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়া সহজ করতে এবং ভবিষ্যতে যুক্তরাজ্য ও ইইউ’র মধ্যে স্থায়ী সম্পর্কের পথ পরিষ্কার করতে এই সময় নেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন বিষয়ে একমত হলেও উত্তর আয়ারল্যান্ডের সীমান্তসহ কয়েকটি বিষয় এখনও সমাধান হয়নি। তারপরও সোমবারের এই সমঝোতা চুক্তিকে উভয়পক্ষই ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। এর মাধ্যমে বৈধ কাঠামোর মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যের ইউরোপ ত্যাগের কাজটি সহজ হবে।
মাইকেল বারনিয়ার বলেন, ‘আজ আপনারা যা দেখছেন তা যৌথ বৈধ চুক্তি। এটা আমার কাছে একটি নিষ্পত্তিমূলক পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে। কারণ আজ সকালে আমরা আলোচনার বড় অংশে একমত হয়েছি। এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক চুক্তি হবে’। তিনি আরও বলেন, তবে এটা সবকিছুর শেষ নয়।
এই চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী ৪৫ লাখ ইইউ নাগরিক ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ১২ লাখ ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকারের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ইইউ নাগরিকরা এই অন্তর্বর্তী সময়েও আগের মতো করেই যুক্তরাজ্যে যেতে পারবেন।
ডেভিড ডেভিস তার বক্তব্যে বলেন, ‘চুক্তির পরবর্তী ধাপের সমঝোতায় পৌঁছানোর মাধ্যমে আমরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি। সীমীত সময়ের অন্তর্বর্তী সময়ে বিভিন্ন শর্তাবলি নিরাপদ করার জন্য আমাদের দল কঠোর পরিশ্রম করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ী ও নাগরিকরা এই সময়ের দাবি জানিয়েছিলেন’।
প্রস্তাবিত চুক্তিতে উত্তর আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত নিয়ে একটি জরুরি ‘ব্যাকস্টপ’ বিকল্প রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে উত্তর আয়ারল্যান্ড ইইউ’র একক বাজার ও শুল্ক ব্যবস্থার আওতায় থাকবে। যুক্তরাজ্য বিষয়টির বিরোধিতা করে আসছে। এনিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে আগামী সপ্তাহে শুধু ওই বিষয়েই কয়েক দফা সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে।
চুক্তির আওতায় অন্তর্বর্তী সময়ে যু্ক্তরাজ্য যে কারও সঙ্গে সমঝোতা ও বাণিজ্যিক চুক্তি করতে পারবে। এটা যুক্তরাজ্যের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল। এই সপ্তাহের পরে ইউরোপীয়ার কাউন্সিলের বৈঠকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ও ইউরোপীয় নেতারা চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, উভয়পক্ষের স্বদিচ্ছা, কঠোর পরিশ্রমের কারণেই আজ আমরা এটা দেখতে পাচ্ছি। আমরা ভবিষ্যতের জন্য একটি চুক্তি পেতে যাচ্ছি যার মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বার্থ রক্ষা হবে। আর এটা যুক্তরাজ্যের সব অংশের জন্যই ভাল হবে।’
তার ব্রেক্সিট মন্ত্রী ডেভিডে ডেভিস আশাপ্রকাশ করেন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যু্ক্তরাজ্যের ভবিষ্যত সম্পর্ক যত দ্রুত সম্ভব শুরু করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে ‘সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে বিস্তৃত ও সবচেয়ে কার্যকর বাণিজ্যিক চুক্তি অর্জন সম্ভব হবে’। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মূহুর্তগুলোকে আমাদের অবশ্যই ধরে রাখতে হবে আর বেগটাকে চালিয়ে যেতে হবে।
যু্ক্তরাজ্যের বিরোধী লেবারপার্টির বেক্সিটের ছায়ামন্ত্রী কেইর স্ট্রামার এই অন্তর্বর্তী চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। এটাকে ‘সঠিক দিকে একটি পদক্ষেপ’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, অবশেষে তারা রুপান্তর প্রক্রিয়ার ওপর একটি চুক্তিতে রাজি হতে পারায় স্বাগত জানাই। এখন সরকারকে অবশ্যই চুড়ান্ত চুক্তির বিষয়ে সমঝোতা করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। এতে চাকরি, অর্থনীতির সুরক্ষার পাশাপাশি উত্তর আয়ারল্যান্ডে কোনও কঠিন সীমান্ত না থাকার নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
তবে স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজিওন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সময়ে মাছ ধরার চুক্তির মাধ্যমে কনজারভেটিভ দলের সদস্যদের মাধ্যমে স্কটিশ মৎস শিল্পে বিশাল সাফল্য নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
যু্ক্তরাজ্য ও ইইউ উভয়ই এই সমঝোতাকে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে নিতে খুবই আগ্রহী। পরবর্তী ধাপে দুইপক্ষের মধ্যে একটি স্থায়ী ভবিষ্যত সম্পর্ক খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া ২০১৯ সালের ২৯ মার্চের আগেই চুক্তিটি ইউরোপের অন্যান্য দেশ ও যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের অনুসমর্থন করার মতো সময়ও দিতে হবে।