যুক্তরাজ্যে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বসবাসরত অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। সরকারের এমন অবস্থান বদলে হতাশা তৈরি হয়েছে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে। কেননা এ সংক্রান্ত আগের ঘোষণা তাদের আশাবাদী করে তুলেছিল।
২০০৮ সালে লন্ডনের মেয়র থাকাকালে যুক্তরাজ্যে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বসবাসরতদের বৈধতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। প্রধােনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত জুলাইতেও সে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। তখন তিনি বলেছিলেন, তার সরকার দ্রুত অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার পথ খুঁজবে।
এ সপ্তাহে পার্লামেন্টে বিরোধী দল লেবার পার্টির এমপি ডা. রোজেনা এলিন খান প্রশ্নোত্তর পর্বে অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে সরকারের বক্তব্য্ জানতে চান। জবাবে অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী ভিক্টোরিয়া এটকিনস জানান, সরকার একটি অভিবাসন নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে। এটি নিরাপদ ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে লোকদের স্বাগত জানায়। একইসঙ্গে এটি অবৈধ অভিবাসনকে বাধা দেয়।
যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা আদায়ে কিছু সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। সরকারের এ বিষয়ে পূর্ব প্রতিশ্রুত অবস্থান থেকে সরে আসার সমালোচনা করেছে তারা।
ফোকাস অন লেবাির এক্সপ্লয়টেশন (ফ্লেক্স)-এর প্রধান নির্বাহী লুসিয়া গ্রান্ডাক বলেন, যুক্তরাজ্যে বসবাস ও কাজের বৈধ অনুমোদনহীন মানুষকে সাধারণ ক্ষমা দিলে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত হতো।
রেনিমেইড ট্রাস্টের ডিরেক্টর ওমর খান বলেন, অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দিতে প্রধানমন্ত্রীর পূর্ব প্রতিশ্রুত সাধানরণ ক্ষমার বিষয়টি ছিল নিছকই কথার কথা। তা এখন প্রমাণিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ক্ষমতায় এসেই দেশটির পাঁচ লক্ষাধিক অবৈধ অভিবাসীকে বৈধতা দেওয়ার বিষয়টি দ্রুত বিবেচনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও এরমধ্যে লক্ষাধিক বাংলাদেশিও রয়েছেন বলে মনে করা হয়। ব্রেক্সিট পরবর্তী পরিস্থিতিতে তাদের বৈধতার আশ্বাস মিলেছিল। তখন অনেকে ধারণা করেছিলেন, নতুন জনশক্তি না এনে বিদ্যমান অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দিলে দেশের অর্থনীতি লাভবান হবে। ব্রিটিশ অর্থনীতির মূল ধারায় যুক্ত করে তাদের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায়ের সুযোগ তৈরি হবে।
এক সময় ওয়ার্ক পারমিট, স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানো এখনকার চেয়ে অনেক সহজ ছিল। তবে এখন ব্রেক্সিট নিয়ে দেশটির রাজনীতিচ,অর্থনীতি অনেকটাই টালমাটাল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নতুন অভিবাসন প্রক্রিয়ার শুধু রূপরেখা ঘোষণা দিয়েছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন থেরেসা মে। ওই সময়ে দেশটির অভিবাসন নীতিতে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এর ফলশ্রুতিতে গত ১০ বছরে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি অভিবাসনের হার প্রায় শুন্যের কোটায় নেমে এসেছে।
এ ব্যানপারে টাওয়ার হ্যাশমলেটস কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি মেয়র অহিদ আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বৈধ কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীদের ব্যা পারে প্রধানমন্ত্রী তার আগের বক্তব্য থেকে কিছুটা সরে এসেছেন। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলে তারা ব্রিটিশ অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারতেন। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে এ ধরনের কোন সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়নি; যা ইউরোপের দেশগুলোতে নিয়মিত বিরতি ঘোষণা করা হয়।
সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন