হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির প্রাক্তন ক্রীড়া সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ করিম আখন্জী তাপস এবং প্রেসক্লাব এবং টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সদস্য সাংবাদিক এস এম সুরুজ আলীকে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি আবুল খায়ের হিরো প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও রহস্যজনক কারণে তাকে গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। এতে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। হিরোকে গ্রেপ্তারের দাবিতে শীঘ্রই মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিক্ষুব্ধরা।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত বছর ৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে অ্যাডভোকেট মাসুদ করিম আখনজী তার নিকটাত্মীয় সাংবাদিক এস এম সুরুজ আলীকে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে ভাদিকারা গ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। মনতৈল গ্রাম অতিক্রম করার পর তাদের মোটরসাইকেলকে পিকআপ ভ্যানগাড়ি দিয়ে কয়েকবার পরিকল্পিতভাবে ধাক্কা দেন খায়রুল ইসলাম হিরো ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার জুয়েল মিয়া। বিষয়টি বুঝতে পেরে মাসুদ করিম আখনজী ও সাংবাদিক সুরুজ আলী বুল্লা বাজারে পিকআপ ভ্যানটি আটক করে চালক জুয়েলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা করে। এ সময় স্থানীয় মুরুব্বীরা এসে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দেন।
পরবর্তীতে মোটরসাইকেল নিয়ে মাসুদ করিম আখনজী ও সুরুজ আলী বুল্লা বাজারে ব্রীজ অতিক্রম করার পর হিরো ও জুয়েল মিয়া পিকআপ ভ্যানটি তাদের মোটরসাইকেলের উপর তুলে দেন। এতে মোটরসাইকেল উল্টে নিচে পড়ে মাসুদ করিম আখনজী ও সুরুজ আলী গুরুতর আহত হন। হিরোর লোকজন মাসুদ করিম আখনজী ও সুরুজ আলীর উপর আবারও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। হামলায় তারা দু’জন আহত হন। আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা প্রদান করেন। ঘটনার পর লাখাই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে জুয়েল মিয়ার পিকআপ ভ্যানটি আটক করে।
এ ঘটনায় খবর আইনজীবী ও সাংবাদিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আইনজীবী ও সাংবাদিকরা পৃথকভাবে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। ওই ঘটনায় গত ৮ সেপ্টেম্বর অ্যাডভোকেট মাসুদ করিম আখনজী বাদী হয়ে লাখাই থানায় মামলা দায়ের করেন। এ প্রেক্ষিতে লাখাই থানা পুলিশ হিরোর ব্যবসায়িক পার্টনার জুয়েল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। ৩ মাস কারাভোগের পর জুয়েল মিয়া হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করেন।
অপরদিকে মামলার প্রধান আসামি হিরো হাইকোর্ট থেকে ৪ সপ্তাহের জামিন নিয়ে বাড়িতে এসে মামলা তুলে নেয়ার জন্য মাসুদ করিম ও সুরুজ আলীকে হুমকি দেন। এর প্রেক্ষিতে তারা দু’জন জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় পৃথকভাবে ২টি জিডি করেন। এদিকে হিরোর হাইকোর্টের জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও তিনি আদালতে হাজির না হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছেন। বিষয়টি মামলার বাদী লাখাই থানা পুলিশকে অবগত করলেও রহস্যজনক কারণে হিরোকে গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ।
মামলার বাদী অ্যাডভোকেট মাসুদ করিম আখনজী বিভিন্ন সময় লাখাই থানার ওসি ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে হিরোকে গ্রেপ্তারের দাবি জানালে তারা গ্রেপ্তার করার আশ্বাস দেন। তাদের আশ্বাসের পরও হিরো গ্রেপ্তার না হওয়ায় মামলার বাদীসহ অন্যান্য আইনজীবীদের মধ্যে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে আশংকা দেখা দিয়েছে।
মামলার বাদী অ্যাডভোকেট মাসুদ করিম আখনজী বলেন, ‘ন্যায় বিচারের স্বার্থে আমরা আইনের আশ্রয় নিয়ে লাখাই থানায় মামলা দায়ের করি। কিন্তু ৪ মাস পার হয়ে গেলেও লাখাই থানা পুলিশ হিরোকে রহস্যজনক কারণে গ্রেপ্তার করছে না। বিভিন্ন সময় আমরা হিরোকে গ্রেপ্তারের জন্য লাখাই থানার ওসি ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে তারা আমাদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়ে সময় নষ্ট করছেন।’
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আইনজীবীদের পক্ষ থেকে হিরোকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। অবিলম্বে হিরোকে গ্রেপ্তার করা না হলে সম্মিলিতভাবে আইনজীবীরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন। আমরা মনে করি পুলিশের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে হিরোকে গ্রেপ্তারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’