করোনা সংকট মোকাবিলায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তার পথে নতুন করে বাধা সৃষ্টি হতে পারে৷ হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ড গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের শর্ত না মানতে চাওয়ায় সংকট দেখা যাচ্ছে৷
একযোগে করোনা সংকট মোকাবিলা করতে ব্যর্থতার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমনিতেই সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ কমপক্ষে এই সংকটের অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে সম্মিলিত উদ্যোগের চেষ্টা করছেন সদস্য দেশগুলির শীর্ষ নেতারা৷ তীব্র মতবিরোধ কাটিয়ে সাত বছরের দীর্ঘমেয়াদী বাজেটে সাধারণ মানুষের উপকার হয়, এমন অনেক পরিকল্পনা রাখা হয়েছে৷ এক লাখ দশ হাজার কোটি ইউরোর মূল বাজেটের পাশাপাশি করোনা সংকটের মোকাবিলা করতে ৭৫ হাজার কোটি ইউরো অঙ্কের এককালীন সহায়তা সম্পর্কে ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে৷ গত বৃহস্পতিবারই ইইউ-র বর্তমান সভাপতি দেশ জার্মানি ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মধ্যে এ বিষয়ে ‘অস্থায়ী’ বোঝাপড়া চূড়ান্ত হয়েছে৷
খাতা কলমে এমন উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা কতটা কঠিন, তা আবার স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ এই রাষ্ট্রজোটের ছোটবড় সব সদস্য দেশের হাতেই ভেটো শক্তি রয়েছে, যদিও সেই শক্তি প্রয়োগের ঘটনা এতকাল বিরল ছিল৷ গণতন্ত্র ও আইনের শাসন মজবুত রাখতে ইইউ যে কড়া শর্ত আরোপ করছে, তার তীব্র বিরোধিতা করছে হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ড৷ শর্ত পূরণ না করলে শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞার যে বিধান রাখা হয়েছে, সেটা তাদের মোটেই পছন্দ নয়৷ উল্লেখ্য, এই দুই দেশের বর্তমান শাসক দল আইন প্রণয়ন করে একাধিক গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করেছে৷ হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান ইইউ-র সেই শর্তের বিরোধিতা করতে বাজেট অনুমোদন বানচাল করতে ভেটো শক্তি প্রয়োগ করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে৷ শুক্রবার তিনি বলেছিলেন, বর্তমান সংকটের মাঝে আইনের শাসন নিয়ে আলোচনা করার সময় নেই৷ বিশেষ করে ইউরোপের দক্ষিণের দেশগুলিকে দ্রুত আর্থিক সাহায্য দেওয়া জরুরি বলে ওরবান মন্তব্য করেন৷
হাঙ্গেরির এক সংবাদ সংস্থার সূত্র অনুযায়ী অরবান জার্মানি ও ইউরোপের অন্যান্য নেতাদের চিঠি লিখে ভেটো শক্তি প্রয়োগের হুমকি দিয়েছেন৷ তিনি গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সংক্রান্ত শর্তে মানতে একেবারেই প্রস্তুত নন৷ সংবাদ সংস্থা এএফপি-র সূত্র অনুযায়ী জার্মানি ছাড়াও ইউরোপীয় কমিশন ও ইউরোপীয় সরকার পরিষদের প্রধান এমন চিঠি পেয়েছেন৷ হাঙ্গেরির সরকার অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করে নি৷
গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সংক্রান্ত ইইউ-র শর্ত ষথেষ্ট স্পষ্ট নয় বলেও সমালোচনা শোনা যাচ্ছে৷ এই শর্তের আইনি সংজ্ঞা না থাকায় বাস্তবে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে সমালোচকরা মনে করছেন৷ তাদের মতে, হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডের মতো দেশের বর্তমান সরকার সেই দুর্বলতার সুযোগ নিতে পারে৷ এমনকি হাঙ্গেরিও স্পষ্ট সংজ্ঞার অভাবের সমালোচনা করছে৷
নতুন করে রাজনৈতিক সংকটের কারণে করোনা সংকট মোকাবিলায় গঠিত তহবিলের অর্থ বিতরণে বিলম্ব ঘটলে ইউরোপের অনেক অঞ্চল আরও সংকটের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের চলমান ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে৷
সূত্র ডয়েচ ভেলে