ফ্রান্স যদি সিরিয়ায় হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আসাদের মিত্রদের নয় বরং দেশটির রাসায়নিক অস্ত্রাগারকেই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আরও আলোচনার ভিত্তিতে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মঙ্গলবার প্যারিসে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রযুক্তিগত ও কৌশলগত তথ্য ভাগ করে নেব। আসন্ন দিনগুলোতে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবো।
সংবাদ সম্মেলনে সৌদি যুবরাজের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান, সৌদি আরবও আসাদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে এই অভিযানে অংশ নেবে কিনা? উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের অংশীদাররা চাইলে আমরাও এতে অংশ নেবো।
এদিকে ইয়েমেনের একটি মানবাধিকার সংস্থা ফ্রান্স সফররত সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের একটি আদালতে মামলা দায়ের করেছে। মঙ্গলবার দায়ের করা ওই মামলার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে তারা ইয়েমেনে হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন ও অমানবিক আচরণে সহযোগিতার অভিযোগ করেছেন।
মঙ্গলবার ফরাসি প্রেসিডেন্টের সংবাদ সম্মেলনের একটি বড় অংশজুড়ে ছিল সিরিয়া প্রসঙ্গ। সিরিয়ার পূর্ব ঘৌটার দৌমা শহরে আসাদ বাহিনীর রাসায়নিক হামলার জবাবে ব্যবস্থা নিতে এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। পৃথক ফোনালাপে সিরিয়া ইস্যুতে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এতে তিন নেতা দেশটির ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
তিন নেতার ফোনালাপের পর মঙ্গলবার ব্রিটিশ সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা’ বহাল রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত সিরিয়া ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করা।
ফোনালাপে তিন নেতা এ বিষয়ে একমত হন যে, সিরিয়া সরকারের রাসায়নিক হামলা খুবই নিন্দনীয়। ওই হামলায় রাসায়নিক ব্যবহারের বিষয়টি যদি নিশ্চিত হয় তাহলে তা হবে নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে আসাদ সরকারের নিষ্ঠুরতার আরেকটি দলিল। রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার না করার আইনি বাধ্যবাধকতা প্রতিও এটি অবজ্ঞাস্বরূপ।
পূর্ব ঘৌটার দৌমা শহরে রাসায়নিক হামলার ঘটনায় দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার বিষয়েও একমত হন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নেতারা।
আসাদ বাহিনীর রাসায়নিক হামলার জবাবে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র; এমন আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনী। ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানের সমালোচনা করেছে আসাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাশিয়া ও ইরান। দেশ দুইটি বলছে, সিরিয়ায় হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে ভয়াবহ পরিণতি বরণ করতে হবে। বিনা জবাবে তারা পার পাবে না।
মঙ্গলবার সিরিয়ার সামরিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থাপনায় সতর্ক অবস্থান নেয় আসাদ বাহিনীর সদস্যরা। সামরিক ঘাঁটিগুলোতে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।
আল মাসদার নামের সিরিয়ার আসাদপন্থী একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সাইপ্রাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি যুদ্ধজাহাজ সিরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ খবরে কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার নৌবহরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি মিসাইল ডেস্ট্রয়ারও সিরিয়ার উপকূলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সূত্র: রয়টার্স, আনাদোলু এজেন্সি।