অপহরন, ব্ল্যাকমেইল এবং মিথ্যা অজুহাতে জিম্মি রাখার অভিযোগে ইস্ট লন্ডনে চার বাঙালীকে ৫০ বছরের জেল দন্ড দিয়েছে আদালত। সাজা প্রাপ্তরা হলেন ইলফোর্ডের ব্ল্যাকথর্নের বাসিন্দা ৫২ বছর বয়সী মোহাম্মদ কদরিস, ফরেস্ট গেইটের বাসিন্দা ৩২ বছর বয়সী প্রগন্ময় চৌধুরী, টাওয়ার হ্যামলেটসের স্টেপনির বাসিন্দা ৪৫ বছর বয়সী শাহ আব্দাল এবং ফরেস্ট গেইটের বাসিন্দা ৪৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ সাজন। শুক্রবার সাদার্ক ক্রাউন কোর্টে তাদের সাজার মেয়াদ ঘোষণা করা হয়।
মোহাম্মদ কদরিস এবং প্রগন্ময় চৌধুরীকে আলাদাভাবে ১৬ বছর করে জেল খাটতে হবে। আর শাহ আব্দালকে ১২ বছর এবং মোহাম্মদ সাজনকে ৬ বছর জেল খাটতে হবে বলে আদালত জানিয়েছে।
কোর্ট জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর বিকেল আনুমানিক ৬টার দিকে প্রগন্ময় চৌধুরীর সঙ্গে টাওয়ার হ্যামলেটসের স্টেপনিতে ২৯ বছর বয়সী এক পুরুষের স্বাক্ষাত হয়। প্রগন্ময় তাকে মেনরপার্কের একটি বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে মোহাম্মদ কদরিস উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ওই ব্যক্তিকে কয়েক ঘন্টা আটকে রেখে নির্যাতন এবং ভয় ভীতি দেখিয়ে তার ব্যাঙ্ক কার্ড থেকে প্রায় ৬শ পাউন্ড হাতিয়ে নেওয়া হয়। কয়েক ঘন্টা পর তাকে ছেড়ে দিলেও তার সব ডকুমেন্ট রেখে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের ছবি রেখে আরো অর্থ পরিশোধের জন্যে হুমকি দেওয়া হয়।
পুলিশ দ্বিতীয় ঘটনার খবর পায় ২০১৮ সালের ১০ মার্চ রাত আনুমানিক মধ্যরাতে। রয়েল লন্ডন হাসপাতাল থেকে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। ২৯ বছর বয়সী এক পুরুষ হাসপাতালে আহত অবস্থায় ভর্তি হয়েছিলেন। তার হাত ভাঙ্গা ছিল। মুখে ছিল আঘাতের চিহ্ন। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, প্রথমে তিনি শাহ আব্দালের কাছ থেকে একটি টেলিফোন রিসিভ করেন। টেলিফোনে আব্দাল তাকে চাকুরী দেবেন বলে টাওয়ার হ্যামলেটসের বো’র একটি ঠিকানায় যাবার জন্যে বলেন। সেখানে যাবার পর তিনি আব্দাল, কদরিস এবং প্রগন্ময়কে দেখতে পান। তারা তাকে কাঠের স্টীক দিয়ে নির্যাতন করতে শুরু করে বলে পুলিশকে জানান ভুক্তভোগি। এরপর তারা ভুক্তভোগির পকেট চেক করে তার আইডি কার্ড, মোবাইল ফোন এবং নগদ ৬শ ৫০ পাউন্ড নিয়ে যায়। এখানেই শেষ হয়নি। আব্দুল, কদরিস, প্রগন্ময় এবং সাজন মিলে ভুক্তভোগির স্বজনদের টেলিফোন করে জানিয়ে দেয়, অর্থ নিয়ে না আসলে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে না। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ভুক্তভোগির দুজন বন্ধু নগদ ৫শ এবং ২শ পাউন্ড নিয়ে আসেন। তারপরেও তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। বরং তার পরিবারের কাছে ৫০ হাজার পাউন্ড মুক্তিপন দাবী করা হয়। অর্থ না পেলে ভুক্তভোগি অথবা তার পরিবারকে হত্যার হুমকিও দেয় আব্দাল, কদরিস, প্রগন্ময় এবং সাজন। অনেক চেষ্টার পর অর্থ না পেয়ে ভুক্তভোগিকে তার ঘরে নামিয়ে দিয়ে আসেন তারা। এসব তথ্য পুলিশকে জানিয়েছেন দ্বিতীয় ভুক্তভোগি।
পুলিশ জানিয়েছে, জিম্মি রাখার অভিযোগে মোহাম্মদ কদরিসকে ১৬ বছর, ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে আরো ৮ বছর এবং শারিরীকভাবে আঘাতের অভিযোগে আরো দুই বছর সমানভাবে সাজা ভোগ করতে হবে। তাকে অন্তত ১৬ বছর জেল খাটতে হবে।
প্রগন্ময় চৌধুরীকেও মিথ্যা অজুহাতে বন্দি করে রাখার অভিযোগে ১৬ বছর জেল দিয়েছে আদালাত। একই সময়ের ভেতরে ব্ল্যাকমেইল এবং শাররীরিক নির্যাতনের অভিযোগে আরো ১০ বছর সমাজ সাজা ভোগ করতে হবে তাকে। তাকে অন্তত ১৬ বছর জেলদন্ড ভোগ করতে হবে।
অন্যদিকে অপহরণের অভিযোগে শাহ আব্দালকে ১২ বছর জেল দিয়েছে আদালত। এর ভেতরে মিথ্যা অজুহাতে বন্ধি রাখার অভিযোগে ১২ বছর, ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে ৯ বছর এবং শারিরীকভাবে নির্যাতনের অভিযোগে আরো দুই বছর জেল খাটবেন তিনি। তবে তাকে অন্তত ১২ বছর জেল খাটতে হবে।
সবচাইতে কম সাজা হয়েছে মোহাম্মদ সাজানের। ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে তাকে মাত্র ৬ বছরের জেলদন্ড দিয়েছে আদালত।
যদিও আদালতে মোহাম্মদ কদরিস, প্রগন্ময় চৌধুরী এবং মোহাম্মদ সাজন প্রথমেই দোষ স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া শেষে আব্দালকে দোষি সাব্যস্ত করে আদালত।