ঢাকা ১২:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
“Dead” একটি শব্দ ও অচল প্রায় জীবন চাকা! আননূর মাদরাসার পক্ষ থেকে হাফিজ মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু-কে মেলবন্ধন স্মারক প্রদান বালাগঞ্জে উপজেলা প্রেসক্লাবের সাথে “নবাগত ইউএনও সুজিত কুমার চন্দ’র মতবিনিময় বালাগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের ‘হাতের মুঠোয় সকল সেবা’ কার্যক্রম চালু বিমানের প্যারিস-ঢাকা ফ্লাইট পুনরায় চালুর জোরালো দাবী প্রবাসীদের বালাগঞ্জে ছাত্রদল নেতা সায়েম আহমদ হত্যা মামলার অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা খলকু মিয়া আটক গহরপুর ছাত্রকল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণদেরকে সংবর্ধনা ও শিক্ষা সেমিনার অন্তর্বর্তীকালীন সকল সিদ্ধান্ত জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই নেওয়া উচিত- বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদিক সম্মেলন করলেন সিলোট জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য লোকন মিয়া

গনঅভ্যুথানের স্রোতে বিদায় স্বৈরশাসন

  • আপডেট সময় ১২:২৮:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১০২ বার পড়া হয়েছে

সাগর সাখাওয়াত : চোর বা সন্ত্রাসী যেমন কোন দলের হয় না তেমনি দূর্নীতিবাজ নেতা,আমলা রাজনীতিবিদরা দল,রাষ্ট্র বা সমাজ এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে পরিবারেরও হয় না । সীমাহীন দূর্নীতি,লুটপাট রাষ্ট্রের শুধু মাংস খাওয়ার যে প্রতিযোগীতা আওয়ামীলীগ এই রাষ্ট্রে চালিয়েছেন এগুলো একদিনে তৈরী হয় নি। ক্রমা্ন্বয়ে এ সংস্কৃতি চলে এসেছে । এরা যে পরিমান লুঁটপাট করেছেন তারা তা জেনেই করতেন এবং লুঁটপাটের আগেই সব ম্যানেজ করে রাখতেন । সমস্যা হয়েছে তাদের দ্বারা তৈরী হওয়া অবৈধ টাকায় তাদের সন্তানদের ভিআইপিগিরীর ঝনঝনানিতে রাষ্ট্রে কি যে এক অসামঞ্জ্যতা করেছিলেন তা সিভিল সোসাইটির কেউই মেনে নিতে পারেন নি ।

গত কয়েকটি বছর দেশে থাকা হচ্ছে লম্বা সময় ধরে । আসার পর বুঝতে পারলাম রাজনীতি এখন রাজার নীতি এবং পরিবেশ টোটালি ভিন্ন। আমাদের সময় যে রাজনৈতিক মতাদর্শ বা মতের পার্থক্য ছিলো তা মোটেও নেই । আমি এক সময় এই দলটিকেই পছন্দ করতাম যারা আজ স্বৈরাচার খেতাব নিয়ে দেশ থেকে পালিয়েছেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলনে সবার কাতারে ছিলো।

চারদিকে পদ পদবী ব্যানারে সব নেতা আর নেতা, কর্মী হচ্ছে রিক্সাওয়ালা আর না হয় শ্রমজীবি পেশার কেউ ।এয়ারপোর্টে নেমেই দেখি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য,পোস্টার ব্যানার এভিয়েশন তৈলবাজরা রীতিমত মাজার বানিয়ে ফেলেছেন। সচিবালয়ে গিয়েছিলাম সেখানে গিয়ে দেখি বড় কর্মকর্তা ক্ষমতাসীন দলের নেতার মতন প্রবল ক্ষমতাবান ।গেলাম সরকারী হসপিটালে সেখানে দেখি ডাক্তররাও ক্ষমতাসীন দলের, তাদের দালালে ভরা পুরো ইমার্জেন্সী, রোগীদের সেবার জায়গায় তারা পাঠান তাদের ব্যক্তিগত ক্লিনিকে। কারন জানতে গেলে প্রধান ওটিও বড় নেতার চেয়েও ক্ষমতাবানের মতন বলতে লাগলেন “ বেশী বাড়াবাড়ি করলে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে । গেলাম স্কুল/কলেজ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবারের সদস্যদের ভর্তি করানোর জন্য, গিয়ে দেখি প্রধান শিক্ষক/প্রিন্সিপাল/উপাচার্য/ডিন/প্রক্টর/ভিসি সবাই নৌকার আদলে বানানো চেয়ারে বসে বুঝিয়ে দিলো ম্যালা ক্ষমতার অধিকারী সবাই নৌকার মাঝি ।

মানুষ গড়ার কারিগরদের নৈতিকতা কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌছুলে মানুষ এমন নিম্নস্তরের কাজ করতে পারে । মসজিদে গেলাম সেখানেও হুজুর রাজনৈতিক কথাবার্তা বলেন খুতবাতে । ব্যাপরটা বোঝার আগেই পাশ থেকে কাজিন বললো হুজুর ওলামালীগের থানা সভাপতি , হুজুরেরও ক্ষমতা লাগবে । আপসোস করতে লাগলাম ধর্মীয় দিক থেকে যিনি আমার সর্বোচ্চ নেতা যাকে বলে ইমাম তিনারও রাজনৈতিক ক্ষমতা লাগবে ।

বাসার পাশে বস্তিতে থাকেন মতিন সর্দার । একদিন আলাপচারিতায় জিজ্ঞেস করি কি করেন এখন মতিন ভাই ? উত্তর করলেন “মামা আমি এই ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগ রিক্সালীগের ওয়ার্ড সভাপতি এখন রিক্সা চালানোর সময় নাই মেয়র ফোন দেয় এমপি ফোন দেয় কত কাজে বিজি থাকি । অবাক হইনি বরং বুঝে নিলাম এইটাই গনতন্ত্র এইটাই ক্ষমতাসীনদের মূলচাবিকাঠী এই জনপদের জন্য ।
সরকারী ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যেখানেই যাবেন সবছিলো এক নেতার নামে ।পার্ক,জাদুঘর,রাস্তাঘাট,পুঁল, সবখানেই বঙ্গবন্ধুর নাম ।একজন ব্যক্তি কেন্দ্রিক রাষ্ট্রের শিল্প সংস্কৃতি সভ্যতা সবকিছুই করেছেন যে এইমাটিতে আরও সূর্য সন্তান ছিলো তারা তাদের ইতিহাসকে মুছে ফেলতে ছেয়েছিলেন ।

কোথাও ভাসানীর নাম নেই, হোসেন শহীদ সরোওযার্দী যার রাজনৈতিক পিএস ছিলেন বঙ্গবন্ধু, তার নামও নেই । শেরে বাংলার নাম নেই, জিয়াউর রহমানের নাম নেই বরং তাকে বলা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর খুনী হিসেবে । সাত শ্রেষ্ঠ বীরের নাম নেই, নেই আ স ম আব্দুর রবের যিনি লিখেছিলেন ৭ই মার্চের ঘোষণাপত্র । নেই সিরাজুল আলম খানের নাম যিনি ছিলেন সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির রহস্যময় পুরুষ।

কারও ভূমিকা নিয়ে বিদায় হওয়া দল কোনদিন কথা বলেন নি । বরং কথা বললেই দেওয়া হতো ঘৃণিত রাজাকার ট্যাগ ।টিভি রিপোর্ট করলে বা ফেসবুকে লিখা হলে আইসিটি আইন ৫৭ ধারায় মামলা দিয়ে দিতো । যাহ প্রচন্ড জগন্য এবং পৈশাচিক । সাগর রুনা হত্যার পর সব সাংবাদিক বুঝে গিয়েছেন কিছু বললেই বেঁচে থাকাটাই অনিরাপদ হয়ে দাঁড়াতো । গুম/খুন ক্রসফায়ার বস্তির ছেলেদের নেতা বানিয়ে কি যে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরী করা হয়েছিল তা আর বলার ভাষা রাখে না । এরপর দরবেশদের মতন রাজনৈতিক ইনভেস্টদের করা হয়েছে মহারাণীর উপদেষ্টা যারা বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারকে সর্বশান্ত করে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছিলেন ।

অথচ এত এত উন্নয়নের গল্প আর মা বাবা হারানোর গল্প শুনেছি যে মানুষ তার ঘৃণার বর্হি:প্রকাশে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন । ৭১ পরিবর্তে বঙ্গবন্ধুর যেই ভূমিকা ছিলো তা ছিলো অনেকটাই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মতন ।সে সময়েও স্বাধীনতার কন্ঠরোধ করা হয়েছিল । সব পত্রিকা নিষিদ্ধ,সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলার প্রথম পুলিশ এন্টকাউন্টারে হত্যা করা হয়েছিল সিরাজ শিকদার কে যিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরী হওয়া নেতা এবং চার খলিফার একজন । যার ভাষনে মানুষ উচ্ছাস্বিত হয়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিল সেই নেতাই যখন গনতন্ত্রের গলা চেপে ধরেছে তখনই মানুষ বুঝতে পারে যে স্বাধীনতা পূর্ববতী বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার পরবর্তী বঙ্গবন্ধু এক নয় ।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমেদ তার আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন আজকের ছাত্রলীগের অস্ত্রের মহড়া একদিনে তৈরী হয় নি এগুলো শুরু হয়েছিল বঙ্গঁবন্ধুর আমল থেকে । সন্ত্রাস নৈরাজ্য, দূর্নীতি লুটপাট ও সেনাবাহিনীর সাথে ব্যক্তিগত দ্বন্ধে এমন আকার ধারন করেছিল যে তাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল যে ছিল স্বাধীনতার মূর্ত দলিল ।

৮১ সালের পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে হিসেবে বাংলার মানুষ আবার তাকে ক্ষমতায় বসালেও গুম ঘুন হত্যা দলীয়করন দুর্নীতি ছাত্রলীগের ধর্ষন নৈরাজ্য এমন আকার ধারন করেছিল যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা /ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া দল স্বৈরাচার খেতাব নিয়ে আজীবনের জন্য বিদায় হয়েছে বাংলাদেশ থেকে । একজন প্রধানমন্ত্রীর মুখের ভাষা আর ইগো কোন পর্যায়ে গেলে দেশের সব মানুষদের খুনীর চোখে দেখা হতো । অথচ কথায় কথায় উন্নয়নের তবজী যপা হতো । মনে মনে ঘৃণার সাথে বলেছি যেনো এই দলের পতন দেখি । বৈষমবিরোধী আন্দলনের শুরু থেকেই কথা বলেছি কারন বিষয়টা ছিলো বিবেকবোধের বাধা । একটি পশু ও মানুষের মাঝে যে পার্থক্য তা হলো মানুষ চিন্তা করতে পারে পশুরা পারে না ।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরুতে কথা বলতেই বলা হতো আমাকে তুলে নিয়ে যাবে, আমার নাম দেওয়া হয় এমপির কাছে, এমপি বলেছিলেন আমাকে দেখে নেবে । বলেছি যাহ ভালো করতে পারেন তারপরও আমি বলবো । মারলে মেরে ফেলতে পারেন । কাজিনরা বলতো তুই থাকোস দেশের বাহিরে ওরা তোকে তুলে নিয়ে যাবে মাপ তাই ভাই কিছু বলিস না । তারপরও থামি নি । থামবো কিভাবে ? এত রক্ত, রাতভর গুলি, তারপর ছাত্রলীগের তান্ডবে মনে হয়েছিল এ এক যুদ্ধ ময়দান । এই মসনদ পাকাপোক্ত করার জন্য ওরা ৫০০ পরিবারে শোকের মাতন বইয়েছেন । রক্তের ঘরমে চোখের জল ঝরেছে । তখনই বলেছিলাম গনতন্ত্র মানুষের ভাষা তবে গনতন্ত্র ভয় পায় গনস্রোত কে বা গন অভ্যুথান । সেই গনঅভ্যুথান গনতন্ত্রকে মাটিতে মিশিয়ে প্রমান করেছে এই মলিমাটি নরম তবে চৈত্র বৈশাখে তাহ কঠিন পাথর হয়ে যায় । সব স্বৈরশাসক কে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলার মানুষ ক্ষেপে গেলে পালানোর দরজা খুঁজে পাওয়া যাবে না । ভালো থাকুক প্রিয় মাতৃভূমি ।

সাগর সাখাওয়াত (মানবাধিকার কর্মী )
প্যারিস ফ্রান্স,

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

লক ডাউন পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফ্রান্সে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি

যুক্তরাজ্যে করোনার মধ্যেই শিশুদের মাঝে নতুন রোগের হানা

“Dead” একটি শব্দ ও অচল প্রায় জীবন চাকা!

গনঅভ্যুথানের স্রোতে বিদায় স্বৈরশাসন

আপডেট সময় ১২:২৮:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সাগর সাখাওয়াত : চোর বা সন্ত্রাসী যেমন কোন দলের হয় না তেমনি দূর্নীতিবাজ নেতা,আমলা রাজনীতিবিদরা দল,রাষ্ট্র বা সমাজ এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে পরিবারেরও হয় না । সীমাহীন দূর্নীতি,লুটপাট রাষ্ট্রের শুধু মাংস খাওয়ার যে প্রতিযোগীতা আওয়ামীলীগ এই রাষ্ট্রে চালিয়েছেন এগুলো একদিনে তৈরী হয় নি। ক্রমা্ন্বয়ে এ সংস্কৃতি চলে এসেছে । এরা যে পরিমান লুঁটপাট করেছেন তারা তা জেনেই করতেন এবং লুঁটপাটের আগেই সব ম্যানেজ করে রাখতেন । সমস্যা হয়েছে তাদের দ্বারা তৈরী হওয়া অবৈধ টাকায় তাদের সন্তানদের ভিআইপিগিরীর ঝনঝনানিতে রাষ্ট্রে কি যে এক অসামঞ্জ্যতা করেছিলেন তা সিভিল সোসাইটির কেউই মেনে নিতে পারেন নি ।

গত কয়েকটি বছর দেশে থাকা হচ্ছে লম্বা সময় ধরে । আসার পর বুঝতে পারলাম রাজনীতি এখন রাজার নীতি এবং পরিবেশ টোটালি ভিন্ন। আমাদের সময় যে রাজনৈতিক মতাদর্শ বা মতের পার্থক্য ছিলো তা মোটেও নেই । আমি এক সময় এই দলটিকেই পছন্দ করতাম যারা আজ স্বৈরাচার খেতাব নিয়ে দেশ থেকে পালিয়েছেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলনে সবার কাতারে ছিলো।

চারদিকে পদ পদবী ব্যানারে সব নেতা আর নেতা, কর্মী হচ্ছে রিক্সাওয়ালা আর না হয় শ্রমজীবি পেশার কেউ ।এয়ারপোর্টে নেমেই দেখি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য,পোস্টার ব্যানার এভিয়েশন তৈলবাজরা রীতিমত মাজার বানিয়ে ফেলেছেন। সচিবালয়ে গিয়েছিলাম সেখানে গিয়ে দেখি বড় কর্মকর্তা ক্ষমতাসীন দলের নেতার মতন প্রবল ক্ষমতাবান ।গেলাম সরকারী হসপিটালে সেখানে দেখি ডাক্তররাও ক্ষমতাসীন দলের, তাদের দালালে ভরা পুরো ইমার্জেন্সী, রোগীদের সেবার জায়গায় তারা পাঠান তাদের ব্যক্তিগত ক্লিনিকে। কারন জানতে গেলে প্রধান ওটিও বড় নেতার চেয়েও ক্ষমতাবানের মতন বলতে লাগলেন “ বেশী বাড়াবাড়ি করলে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে । গেলাম স্কুল/কলেজ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবারের সদস্যদের ভর্তি করানোর জন্য, গিয়ে দেখি প্রধান শিক্ষক/প্রিন্সিপাল/উপাচার্য/ডিন/প্রক্টর/ভিসি সবাই নৌকার আদলে বানানো চেয়ারে বসে বুঝিয়ে দিলো ম্যালা ক্ষমতার অধিকারী সবাই নৌকার মাঝি ।

মানুষ গড়ার কারিগরদের নৈতিকতা কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌছুলে মানুষ এমন নিম্নস্তরের কাজ করতে পারে । মসজিদে গেলাম সেখানেও হুজুর রাজনৈতিক কথাবার্তা বলেন খুতবাতে । ব্যাপরটা বোঝার আগেই পাশ থেকে কাজিন বললো হুজুর ওলামালীগের থানা সভাপতি , হুজুরেরও ক্ষমতা লাগবে । আপসোস করতে লাগলাম ধর্মীয় দিক থেকে যিনি আমার সর্বোচ্চ নেতা যাকে বলে ইমাম তিনারও রাজনৈতিক ক্ষমতা লাগবে ।

বাসার পাশে বস্তিতে থাকেন মতিন সর্দার । একদিন আলাপচারিতায় জিজ্ঞেস করি কি করেন এখন মতিন ভাই ? উত্তর করলেন “মামা আমি এই ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগ রিক্সালীগের ওয়ার্ড সভাপতি এখন রিক্সা চালানোর সময় নাই মেয়র ফোন দেয় এমপি ফোন দেয় কত কাজে বিজি থাকি । অবাক হইনি বরং বুঝে নিলাম এইটাই গনতন্ত্র এইটাই ক্ষমতাসীনদের মূলচাবিকাঠী এই জনপদের জন্য ।
সরকারী ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যেখানেই যাবেন সবছিলো এক নেতার নামে ।পার্ক,জাদুঘর,রাস্তাঘাট,পুঁল, সবখানেই বঙ্গবন্ধুর নাম ।একজন ব্যক্তি কেন্দ্রিক রাষ্ট্রের শিল্প সংস্কৃতি সভ্যতা সবকিছুই করেছেন যে এইমাটিতে আরও সূর্য সন্তান ছিলো তারা তাদের ইতিহাসকে মুছে ফেলতে ছেয়েছিলেন ।

কোথাও ভাসানীর নাম নেই, হোসেন শহীদ সরোওযার্দী যার রাজনৈতিক পিএস ছিলেন বঙ্গবন্ধু, তার নামও নেই । শেরে বাংলার নাম নেই, জিয়াউর রহমানের নাম নেই বরং তাকে বলা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর খুনী হিসেবে । সাত শ্রেষ্ঠ বীরের নাম নেই, নেই আ স ম আব্দুর রবের যিনি লিখেছিলেন ৭ই মার্চের ঘোষণাপত্র । নেই সিরাজুল আলম খানের নাম যিনি ছিলেন সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির রহস্যময় পুরুষ।

কারও ভূমিকা নিয়ে বিদায় হওয়া দল কোনদিন কথা বলেন নি । বরং কথা বললেই দেওয়া হতো ঘৃণিত রাজাকার ট্যাগ ।টিভি রিপোর্ট করলে বা ফেসবুকে লিখা হলে আইসিটি আইন ৫৭ ধারায় মামলা দিয়ে দিতো । যাহ প্রচন্ড জগন্য এবং পৈশাচিক । সাগর রুনা হত্যার পর সব সাংবাদিক বুঝে গিয়েছেন কিছু বললেই বেঁচে থাকাটাই অনিরাপদ হয়ে দাঁড়াতো । গুম/খুন ক্রসফায়ার বস্তির ছেলেদের নেতা বানিয়ে কি যে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরী করা হয়েছিল তা আর বলার ভাষা রাখে না । এরপর দরবেশদের মতন রাজনৈতিক ইনভেস্টদের করা হয়েছে মহারাণীর উপদেষ্টা যারা বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারকে সর্বশান্ত করে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছিলেন ।

অথচ এত এত উন্নয়নের গল্প আর মা বাবা হারানোর গল্প শুনেছি যে মানুষ তার ঘৃণার বর্হি:প্রকাশে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন । ৭১ পরিবর্তে বঙ্গবন্ধুর যেই ভূমিকা ছিলো তা ছিলো অনেকটাই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মতন ।সে সময়েও স্বাধীনতার কন্ঠরোধ করা হয়েছিল । সব পত্রিকা নিষিদ্ধ,সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলার প্রথম পুলিশ এন্টকাউন্টারে হত্যা করা হয়েছিল সিরাজ শিকদার কে যিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরী হওয়া নেতা এবং চার খলিফার একজন । যার ভাষনে মানুষ উচ্ছাস্বিত হয়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিল সেই নেতাই যখন গনতন্ত্রের গলা চেপে ধরেছে তখনই মানুষ বুঝতে পারে যে স্বাধীনতা পূর্ববতী বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার পরবর্তী বঙ্গবন্ধু এক নয় ।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমেদ তার আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন আজকের ছাত্রলীগের অস্ত্রের মহড়া একদিনে তৈরী হয় নি এগুলো শুরু হয়েছিল বঙ্গঁবন্ধুর আমল থেকে । সন্ত্রাস নৈরাজ্য, দূর্নীতি লুটপাট ও সেনাবাহিনীর সাথে ব্যক্তিগত দ্বন্ধে এমন আকার ধারন করেছিল যে তাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল যে ছিল স্বাধীনতার মূর্ত দলিল ।

৮১ সালের পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে হিসেবে বাংলার মানুষ আবার তাকে ক্ষমতায় বসালেও গুম ঘুন হত্যা দলীয়করন দুর্নীতি ছাত্রলীগের ধর্ষন নৈরাজ্য এমন আকার ধারন করেছিল যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা /ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া দল স্বৈরাচার খেতাব নিয়ে আজীবনের জন্য বিদায় হয়েছে বাংলাদেশ থেকে । একজন প্রধানমন্ত্রীর মুখের ভাষা আর ইগো কোন পর্যায়ে গেলে দেশের সব মানুষদের খুনীর চোখে দেখা হতো । অথচ কথায় কথায় উন্নয়নের তবজী যপা হতো । মনে মনে ঘৃণার সাথে বলেছি যেনো এই দলের পতন দেখি । বৈষমবিরোধী আন্দলনের শুরু থেকেই কথা বলেছি কারন বিষয়টা ছিলো বিবেকবোধের বাধা । একটি পশু ও মানুষের মাঝে যে পার্থক্য তা হলো মানুষ চিন্তা করতে পারে পশুরা পারে না ।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরুতে কথা বলতেই বলা হতো আমাকে তুলে নিয়ে যাবে, আমার নাম দেওয়া হয় এমপির কাছে, এমপি বলেছিলেন আমাকে দেখে নেবে । বলেছি যাহ ভালো করতে পারেন তারপরও আমি বলবো । মারলে মেরে ফেলতে পারেন । কাজিনরা বলতো তুই থাকোস দেশের বাহিরে ওরা তোকে তুলে নিয়ে যাবে মাপ তাই ভাই কিছু বলিস না । তারপরও থামি নি । থামবো কিভাবে ? এত রক্ত, রাতভর গুলি, তারপর ছাত্রলীগের তান্ডবে মনে হয়েছিল এ এক যুদ্ধ ময়দান । এই মসনদ পাকাপোক্ত করার জন্য ওরা ৫০০ পরিবারে শোকের মাতন বইয়েছেন । রক্তের ঘরমে চোখের জল ঝরেছে । তখনই বলেছিলাম গনতন্ত্র মানুষের ভাষা তবে গনতন্ত্র ভয় পায় গনস্রোত কে বা গন অভ্যুথান । সেই গনঅভ্যুথান গনতন্ত্রকে মাটিতে মিশিয়ে প্রমান করেছে এই মলিমাটি নরম তবে চৈত্র বৈশাখে তাহ কঠিন পাথর হয়ে যায় । সব স্বৈরশাসক কে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলার মানুষ ক্ষেপে গেলে পালানোর দরজা খুঁজে পাওয়া যাবে না । ভালো থাকুক প্রিয় মাতৃভূমি ।

সাগর সাখাওয়াত (মানবাধিকার কর্মী )
প্যারিস ফ্রান্স,