জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে ফ্রান্সজুড়ে বিক্ষোভ শুরু করেছে দেশটির বাসিন্দারা। আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে কার্যত মহাসড়ক অচল করে দিয়েছেন। এর মধ্যে গাড়িচাপায় এক আন্দোলনকারী নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র খবরে বলা হয়, গত ১২ মাসে ফ্রান্সে ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। দেশটির বেশিরভাগ গাড়িতে ডিজেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গত দশকের প্রথম দিককার পর এখনই দেশটিতে তেলের দাম সবচেয়ে বেশি। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সরকার সেখানে ‘পরিস্কার গাড়ি ও জ্বালানি’ প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে তেলের ওপর হাইড্রোকার্বন ট্যাক্স বাড়িয়েছে। দেশটিতে বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেলের ওপর ৭.৬ সেন্ট ও প্রতি লিটার পেট্রোলের ওপর ৩.৯ সেন্ট হারে ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া আগামী জানুয়ারি মাস থেকে আরও ৬.৫ সেন্ট ও ২.৯ সেন্ট হারে কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তেলের দামের এমন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা আন্দোলনে নেমেছেন।
শনিবার ফ্রান্সের প্রায় ২০০০ স্থানে হলুদ জ্যাকেট পরিহিত প্রায় এক লাখ ২০ হাজার বিক্ষোভকারী সড়ক অবরোধ করে। সাধারণত দেশটির সব গাড়িতেই এই জ্যাকেট রাখতে হয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ গরীব মানুষকে বর্জন করছেন। এই সপ্তাহে এক ভাষণে ম্যাক্রোঁও স্বীকার করেছেন যে, তিনি সত্যিকার অর্থেই নেতাদের সঙ্গে ফরাসি জনগণকে পুনর্মিলিত করতে পারেননি। তবে তিনি বিরোধিদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনকে ছিনতাই করে নেওয়ার অভিযোগ তুলে বলেন, তার সংস্কার কর্মসূচি ঠেকাতেই এমনটা করছে তারা।
দেশটির কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তারা আন্দোলন না থামালেও ফ্রান্সের সড়ক যোগাযোগ অচল করতে দেওয়া হবে না। লি পারিসিয়ের সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সাভোয় অঞ্চলে গাড়ি চাপায় এক নারী বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। গাড়ির চালক তার অসুস্থ মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই সময় প্রায় ৫০ জন অবরোধকারী তার গাড়ি থামিয়ে দেয়। তারা গাড়িটির ছাদে আঘাত করতে থাকে। এতে চালক আতঙ্কিত হয়ে গাড়ি চালানো শুরু করেন। ফলে ওই নারী চাপা পড়েন ও মারা যান।
এ ঘটনায় ওই গাড়ি চালককে আতঙ্কিত অবস্থায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিহত বিক্ষোভকারীদের জন্য উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ব্রিটানি এলাকায় এক মিনিটের নিরবতা পালন করেছেন বিক্ষোভকারীরা।
ফ্রান্সের আরও অনেক স্থানেই অবরোধকারীদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দিয়েছেন চালকরা। এতে আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আরাস এলাকায় একটি প্রাইভেট কারের চাপায় ৭১ বছর বয়সী এক নারী গুরুতর আহত হয়েছেন। ওই ঘটনায় চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাজেব্রুক শহরের উত্তরাঞ্চলে বিক্ষোভকারীদের ওপর দিয়ে একটি ট্রাক চালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দুইজন আহত হয়েছে। এছাড়া বেসানকন শহরে সামনে অবরোধ দেখে গাড়ি ঘোরানোর সময় পেছন থেকে আসা দুটি গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায়ও দুইজন আহত হন। সেলেস্টাটে একজন বিক্ষোভকারীর পায়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিয়েছে এক চালক। এছাড়া বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করার সময় গ্রাসি শহরে একজন পুলিশ কর্মকর্তা চাপা পড়েছেন। ওই ঘটনায় চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে পুলিশ।
বিক্ষোভের বিষয়ে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার কাস্টনার বলেছেন, যদি প্রাণঘাতি হয় তাহলে এই আন্দোলন ব্যর্থ হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। ঝুঁকি এড়িয়ে চলার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’। সূত্র: বিবিসি।