ঢাকা ০৩:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্যারিসের রাস্থায় হেটে খবরের কাগজ বিক্রি করা আলি আকবর পাচ্ছেন ফরাসী সম্মাননা

  • আপডেট সময় ০১:৩৮:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫
  • ৫১ বার পড়া হয়েছে

প্যারিসে এখনও দেখা মেলে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্যের, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হাতে খবরের কাগজ বিক্রি করছেন এক বৃদ্ধ। বয়স ৭৩, নাম আলি আকবর। পাকিস্তানের রাওয়ালপিণ্ডি থেকে ১৯৭৩ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে প্যারিসে আসেন তিনি। পেশা হিসেবে বেছে নেন খবরের কাগজ ফেরি করা। টানা ৫২ বছর ধরে সেই কাজই করে যাচ্ছেন। টিভি, ইন্টারনেট, স্মার্টফোন—সব এসে গিয়েছে, কাগজের পাঠক কমে গিয়েছে, তবু প্যারিসের শেষ খবরের কাগজওয়ালা হিসেবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন আলি। মানুষের কাগজ পড়া কমে আসায় এখন এই বৃদ্ধ বয়সে আলিকে আরও বেশি সময় ধরে, আরও বেশি এলাকায় ঘুরে ঘুরে ফেরি করতে হয়। তবে, শরীরের কষ্ট তিনি গায়ে মাখেননি।

আস্তে আস্তে প্যারিসের বাসিন্দাদের কাছে ঘরের লোক হয়ে উঠেছেন। এতদিন ফ্রান্সে থাকায় ফরাসি ভাষা অনর্গল বলতে পারেন আলি। ফরাসি পড়তেও পারেন গড়গড় করে। আর রাজনীতি থেকে খেলা। দেশ-দুনিয়ার সমস্ত খবর তাঁর ঠোঁটস্থ। যে কাগজগুলো তিনি বিক্রি করেন, বেলা বাড়তে না বাড়তেই, সেসব কাগজের সব খবর তাঁর পড়া হয়ে যায়। বিক্রির সময় সাধারণ মানুষকে তিনি বলে দেন, কোন খবরটার জন্য আজ কাগজটা কিনে পড়া দরকার। সঙ্গে, পথচলতি মানুষকে তিনি শোনান, নানা পলিটিক্যাল জোক। এখন তাঁর জনপ্রিয়তা এতটাই যে সকালে রাস্তায় দেখা হয়ে গেলে, কাগজ কেনার পর লোকে অফিসে ঢুকে গর্বের সঙ্গে সহকর্মীদের বলে আজ কাগজটা আলির থেকে কিনলাম।

  1. ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাকরঁ এমন একজন লোককে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ফ্রান্সে বহু মানুষই খুশি। ফ্রান্সের জনপ্রিয় কাগজ শার্লি এবদো, ল্য মঁদ – যেগুলো আলি বিক্রি করেন, তারাই আলিকে নিয়ে স্টোরি করেছে। সেখানে আলি বলছেন, ‘মোবাইল বা ট্যাবলেটে কাগজ পড়া আমার পছন্দ নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার খবরেও ভরসা করি না। খবরের জন্য নিজে কাগজটাই পড়ি। আর সেটাই মানুষের হাতে তুলে দিয়ে পেট চালাই। যতদিন শরীরে শক্তি থাকবে ততদিন এই কাজটাই চালিয়ে যাব।’ আলির কাছে খবরের কাগজ ক্রেতাদের মধ্যে আছেন ঐতিহ্যশালী সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া-অধ্যাপকরাও। রাজনৈতিক দিক থেকেও এই সম্মান অনেকের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ। শার্ল দ্য গলের হাতে শুরু হওয়া দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান ন্যাশনাল অর্ডার অফ মেরিট তুলে দেওয়ার মধ্যে ইম্যানুয়েল মাকরেঁর রাজনৈতিক বার্তাও স্পষ্ট। ফ্রান্সে এখন ফার-রাইটদের রমরমা। ফার-রাইটদের রাজনীতির ভিত্তিই হল, অ্যান্টি-ইমিগ্রেশন প্রোপাগান্ডা। সেখানে একজন অভিবাসীকে এতবড়ো সম্মান দিয়ে মাকরঁ তাঁর মেসেজটা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছেন। ঠিক যেমন গত বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্তিনার কাছে হারের পর গ্যালারি থেকে মাঠে নেমে এসে এমবাপের পিঠে হাত রেখেছিলেন তিনি। ফ্রান্সকে যে লোকটা বিশ্বকাপ দিয়েছিল, সেই জিদান। আর যাকে ঘিরে ফ্রান্স আরেকটা বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখে, সেই এমবাপে, দু-জনেই অভিবাসী পরিবারের সন্তান। আলি আকবরও তাই। ফরাসিরা বুঝলে ভাল।
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

লক ডাউন পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফ্রান্সে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি

যুক্তরাজ্যে করোনার মধ্যেই শিশুদের মাঝে নতুন রোগের হানা

শিক্ষাগুরু- রকিবুল ইসলাম

প্যারিসের রাস্থায় হেটে খবরের কাগজ বিক্রি করা আলি আকবর পাচ্ছেন ফরাসী সম্মাননা

আপডেট সময় ০১:৩৮:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫

প্যারিসে এখনও দেখা মেলে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্যের, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হাতে খবরের কাগজ বিক্রি করছেন এক বৃদ্ধ। বয়স ৭৩, নাম আলি আকবর। পাকিস্তানের রাওয়ালপিণ্ডি থেকে ১৯৭৩ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে প্যারিসে আসেন তিনি। পেশা হিসেবে বেছে নেন খবরের কাগজ ফেরি করা। টানা ৫২ বছর ধরে সেই কাজই করে যাচ্ছেন। টিভি, ইন্টারনেট, স্মার্টফোন—সব এসে গিয়েছে, কাগজের পাঠক কমে গিয়েছে, তবু প্যারিসের শেষ খবরের কাগজওয়ালা হিসেবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন আলি। মানুষের কাগজ পড়া কমে আসায় এখন এই বৃদ্ধ বয়সে আলিকে আরও বেশি সময় ধরে, আরও বেশি এলাকায় ঘুরে ঘুরে ফেরি করতে হয়। তবে, শরীরের কষ্ট তিনি গায়ে মাখেননি।

আস্তে আস্তে প্যারিসের বাসিন্দাদের কাছে ঘরের লোক হয়ে উঠেছেন। এতদিন ফ্রান্সে থাকায় ফরাসি ভাষা অনর্গল বলতে পারেন আলি। ফরাসি পড়তেও পারেন গড়গড় করে। আর রাজনীতি থেকে খেলা। দেশ-দুনিয়ার সমস্ত খবর তাঁর ঠোঁটস্থ। যে কাগজগুলো তিনি বিক্রি করেন, বেলা বাড়তে না বাড়তেই, সেসব কাগজের সব খবর তাঁর পড়া হয়ে যায়। বিক্রির সময় সাধারণ মানুষকে তিনি বলে দেন, কোন খবরটার জন্য আজ কাগজটা কিনে পড়া দরকার। সঙ্গে, পথচলতি মানুষকে তিনি শোনান, নানা পলিটিক্যাল জোক। এখন তাঁর জনপ্রিয়তা এতটাই যে সকালে রাস্তায় দেখা হয়ে গেলে, কাগজ কেনার পর লোকে অফিসে ঢুকে গর্বের সঙ্গে সহকর্মীদের বলে আজ কাগজটা আলির থেকে কিনলাম।

  1. ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাকরঁ এমন একজন লোককে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ফ্রান্সে বহু মানুষই খুশি। ফ্রান্সের জনপ্রিয় কাগজ শার্লি এবদো, ল্য মঁদ – যেগুলো আলি বিক্রি করেন, তারাই আলিকে নিয়ে স্টোরি করেছে। সেখানে আলি বলছেন, ‘মোবাইল বা ট্যাবলেটে কাগজ পড়া আমার পছন্দ নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার খবরেও ভরসা করি না। খবরের জন্য নিজে কাগজটাই পড়ি। আর সেটাই মানুষের হাতে তুলে দিয়ে পেট চালাই। যতদিন শরীরে শক্তি থাকবে ততদিন এই কাজটাই চালিয়ে যাব।’ আলির কাছে খবরের কাগজ ক্রেতাদের মধ্যে আছেন ঐতিহ্যশালী সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া-অধ্যাপকরাও। রাজনৈতিক দিক থেকেও এই সম্মান অনেকের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ। শার্ল দ্য গলের হাতে শুরু হওয়া দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান ন্যাশনাল অর্ডার অফ মেরিট তুলে দেওয়ার মধ্যে ইম্যানুয়েল মাকরেঁর রাজনৈতিক বার্তাও স্পষ্ট। ফ্রান্সে এখন ফার-রাইটদের রমরমা। ফার-রাইটদের রাজনীতির ভিত্তিই হল, অ্যান্টি-ইমিগ্রেশন প্রোপাগান্ডা। সেখানে একজন অভিবাসীকে এতবড়ো সম্মান দিয়ে মাকরঁ তাঁর মেসেজটা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছেন। ঠিক যেমন গত বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্তিনার কাছে হারের পর গ্যালারি থেকে মাঠে নেমে এসে এমবাপের পিঠে হাত রেখেছিলেন তিনি। ফ্রান্সকে যে লোকটা বিশ্বকাপ দিয়েছিল, সেই জিদান। আর যাকে ঘিরে ফ্রান্স আরেকটা বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখে, সেই এমবাপে, দু-জনেই অভিবাসী পরিবারের সন্তান। আলি আকবরও তাই। ফরাসিরা বুঝলে ভাল।