বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত শহরে রাসায়নিক হামলার অভিযোগ তুলে সিরিয়ার তিনটি স্থাপনা লক্ষ্য করে যৌথ হামলা শুরু করেছে ফ্রান্স,যুক্ত্রাষ্ট্র ও ব্রিটেনের যৌথ বাহিনী। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁও এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন। রাজধানী দামেস্ক ও হোমস শহরের ওই তিনটি স্থাপনায় আসাদ সরকার রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদন করতো বলে অভিযোগ করে আসছে এসব দেশ। হামলার বিষয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, এসব স্থাপনা লক্ষ্য করে এরই মধ্যে শতাধিক মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে। দামাস্কাসের একটি রাসায়নিক গবেষণাগার ধ্বংস হওয়ার কথা স্বীকার করেছে সিরিয়া। রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত হামলা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিরিয়ার মিত্র রাশিয়া বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চালানো এই হামলার জবাব না দিয়ে ছাড়া হবে না।
সিরিয়ায় সরকারি স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের হামলায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। এ হামলার প্রতিক্রিয়ায় যেকোনো ‘পরিণতি’র বিষয়ে সতর্ক করেছে সিরিয়ার মিত্র দেশটি। বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চালানো এই হামলার জবাব না দিয়ে ছাড়া হবে না।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ায় হামলা চালানোর নির্দেশ দেওয়ার পর দামেস্কে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ হওয়ার কথা জানায় রয়টার্স। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থাটি লিখেছে, ট্রাম্প যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখন সিরিয়ায় বিস্ফোরণের শব্দ শুরু হয়ে যায়। রাসায়নিক হামলার অভিযোগ তুলে গত বছরের এপ্রিলেও সিরিয়ার একটি বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। খান শেইখুন শহরের ওই ঘাঁটিতে ৫৯টি মিসাইল হামলা চালানো হলে ৮০ জন নিহত হয়।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস জানিয়েছেন, রণতরী ও মনুষ্যবাহী বিমান থেকে এরই মধ্যে শতাধিক টমাহক মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে। তবে বিবিসি লিখেছে গত বছরের চেয়ে এবার দ্বিগুণেরও বেশি মিসাইল হামলা এরইমধ্যে চালানো হয়েছে।
হামলা শুরুর পর মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনে এক ব্রিফিংয়ে জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড সিরিয়ায় হামলা চালানো তিনটি লক্ষ্যস্থল সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। তিনি জানান, এরমধ্যে রয়েছে দামাস্কাসের একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার। সেখানে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র উৎপাদন করা হতো বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের। এছাড়া হোমস শহরের কাছে একটি রাসায়নিক অস্ত্র মজুত রাখা একটি স্থাপনা এবং ওই শহরের কাছে অপর একটি রাসায়নিক অস্ত্রের সরঞ্জাম মজুতের স্থাপনা। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশনা সেন্টারও ছিল বলে দাবি করছে যুক্তরাষ্ট্র।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা দফতর জানিয়েছে, চারটি টর্নেডো বিমান ব্যবহার করে হোমস শহরের রাসায়নিক অস্ত্রের সরঞ্জাম মজুত রাখা স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এই হামলায় যুক্তরাজ্যের অংশগ্রহণের তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, বল প্রয়োগ ছাড়া আর কোনও প্রায়োগিক বিকল্প ছিল না। তবে এই হামলা সরকার বদলের কোনও চেষ্টা নয় বলেও দাবি করেন তিনি। হামলায় অংশ নেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁও।
সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা সানা বলছে, পশ্চিমা দেশগুলোর এই হামলা আন্তর্জাতিক আইনের ঘোর লঙ্ঘন। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত খবরে দামাস্কাসের গবেষণাগার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। ওই খবরে দাবি করা হয়েছে, সরকারি বাহিনী এক ডজনেরও বেশি মিসাইল ভূপাতিত করতে সমর্থ হয়েছে। সিরিয়ার ওপর চালানো আমেরিকা, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের এই আগ্রাসন অবশ্যই ব্যর্থ হবে বলে দাবি করেছে সানা।