সাবুল আহমেদ ঃ ফ্রান্সে অনিয়মিতদের মাঝে ‘বাসিন্দা কার্ড’ (Carte d’habitant) প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রমের উদ্যোগ নিয়েছে ফ্রান্সের জনপ্রিয় সামাজিক সংগঠন ‘সলিডারিতে অ্যাসি ফ্রঁস’ (সাফ)-সহ প্রায় ৪০টি সামাজিক সংগঠন। এছাড়া এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে সমর্থন জানিয়েছে ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন।
এ উপলক্ষে ‘সলিডারিতে অ্যাসি ফ্রঁস’ (সাফ)’র উদ্যোগে শনিবার দুপুর ২টায় প্যারিসের অ্যামোদিয়ে শহরের ‘ফাস্তি’ কার্যালয়ে এক নিবন্ধন কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়। বাসিন্দা কার্ডের জন্য প্রাথমিক পর্যায় প্রায় ২ হাজার অনিয়মিত প্রবাসীদের নিবন্ধন গ্রহন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে যাদের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে তাদেরকে শীঘ্রই ‘বাসিন্দা কার্ড’ প্রদান করা হবে।
জানা যায়, বাসিন্দা কার্ডের নিবন্ধনের জন্য শনিবার ভোর থেকে অনিয়মিত হাজার হাজার প্রবাসীরা প্যারিসের ফাস্তি কার্যালয় সম্মুখে সমবেত হতে থাকেন। নিরাপদ ও সুশৃঙ্খলভাবে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে অনিয়মিতদের সহায়তা প্রদানে ফরাসি পুলিশ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে। এছাড়া অনুষ্ঠিত নিবন্ধন কার্যক্রমে বিশেষ সহযোগিতা প্রদানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লিবার্তে-ইগলির্তে-পাপিয়ে সংস্থার সদস্য দমিনিক ও সিলভি।
যারা এ বাসিন্দা কার্ড নিতে ইচ্ছুক তাদের সকলের নিবন্ধন পর্যায়ক্রমে গ্রহন করা বলে হবে বলে জানান সলিডারিতে অ্যাসি ফ্রঁস’ (সাফ)’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট নয়ন এনকে।
সাফ’র তথ্যমতে- ফ্রান্সে অনিয়মিতভাবে তথা বৈধ কাগজ ছাড়া বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৬ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে আসছেন। মূলত, যাদের রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন ফরাসি জাতীয় আশ্রয় আদালত অফপ্রা ও সিএনডিএ থেকে খারিজ হয়ে যায়। এক সময় এদেরই একটি বিশাল অংশ অনিয়মিত হয়ে পড়েন। ফলে এসব অনিয়মিতদের জীবনযাত্রায় দেখা দেয় চরম দুর্ভোগ-দুর্দশা ও নানাবিধ আইনি জটিলতা। তাদের এই সংকট উত্তরণে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে সাফ-সহ ফ্রান্সের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। অনিয়মিত বাসিন্দাদের নিয়মিতকরণের দাবিতে ইতোমধ্যে ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে বেশ কিছু সভা-সমাবেশ ও কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। চলমান আন্দোলনকে তরান্বিত করতে আরো বিভিন্ন কর্মসূচি ও পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এসব সংগঠন।
আয়োজক সংগঠন সাফ’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট নয়ন এনকে বলেন, ‘অনিয়মিতদের কাগজের দাবিতে আমরা বিভিন্ন সংগঠন একত্রিত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। ফরাসি বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আবেদনের পাশাপাশি আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে আমরা মাঠে রয়েছি। আমাদের বিশ্বাস- ফ্রান্স সরকার এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনাপূর্বক শীঘ্রই একটি পদক্ষেপ গ্রহন করবে।’
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনকৃত সকল সংগঠন মিলে আমরা অনিয়মিতদের মাঝে ‘বাসিন্দা কার্ড’ (carte d’habitant) প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছি। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এ কার্ড প্রদান করা হবে। তবে এটি অনিয়মিতদের বৈধতার পরিচয়পত্র হিসেবে কখনো গণ্য হবে না। কেবলমাত্র সংঘটন থেকে তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে এই বিষয়টি প্রমান করবে এবং সাময়িক কিছু সমস্যা নিরসন ও আইনি বিষয়ে সহযোগিতা পেতে সহায়ক হবে।’
তিনি জানান, অনিয়মিতদের ধরতে অনেক সময় পুলিশ কন্ট্রোল দিয়ে থাকে এ সময় এই ‘বাসিন্দা কার্ড’ দেখালে হয়তো পুলিশ ছেড়ে দিতে পারে। অথবা কোন কারনে যদি পুলিশ আটক করে নিয়ে যায় তাহলে উক্ত কার্ডে প্রদত্ত ইমারজেন্সি ফোন নম্বরে কল দিলে একজন আইনজীবী আশ্রয় বিষয়ক সর্বাত্মক আইনি সহায়তা দিয়ে যাবেন।
পর্যায়ক্রমে ফ্রান্সের প্রত্যক শহরে অনিয়মিতদের মাঝে এ কার্ড প্রদানের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নয়ন এনকে বলেন- ‘যারা স্যালারি কার্ড এবং মালাদি কাগজের আবেদন করেছেন কিংবা এস্যাইলাম প্রক্রিয়ায় রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে এ কার্ড প্রয়োজ্য নয়।’
শনিবার নিবন্ধন করতে আসা অনিয়মিত প্রবাসীদের ধন্যবাদ জানিয়ে নয়ন এনকে বলেন, সেবা প্রদানে আমাদের কোন ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আশা করি- সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।