সড়ক দুর্ঘটনায় দুই সহপাঠী নিহতের ঘটনায় ৯ দফা দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো রাজধানী ঢাকায় রাজপথ অবরোধ করে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে শিক্ষার্থীরা। এই প্রতিবাদের খবর প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
সিঙ্গাপুরের ইংরেজি দৈনিক স্ট্রেইট টাইমস ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর সম্পর্কে লিখেছে, বাস দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ঢাকার সড়ক অবরোধ করেছে। এত বলা হয়েছে, প্রায় ৩ হাজার ইউনিফর্ম পরা স্কুল শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়। তারা স্লোগান দেয়, আমরা ন্যায়বিচার চাই। তাদের একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, আমার কেন কবরে, খুনিরা কেন ঘুরে বাইরে?
বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতার কথাও তুলে ধরেছে স্ট্রেইট টাইমস। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সড়কে নজরদারীতের অভাব ভয়াবহ। গণপরিবহন প্রায়ই চালানো হয় অনভিজ্ঞ, লাইসেন্সবিহীন ও অল্পবয়সী চালক দ্বারা। একটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে ৪ হাজার ২০০ জন পথচারীর মৃত্যু হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়। যা ২০১৬ সালের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি।
পত্রিকাটির খবরে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের বিতর্কিত মন্তব্যে সমালোচনার কথাও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, সামাজিকমাধ্যমে অনেকেই তার পদত্যাগ দাবি করছেন। এছাড়া বৃষ্টির দিনে অনেক যাত্রীকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হলেও অনেকেই এই আন্দোলনে সমর্থন জানাচ্ছেন বলে লিখেছে পত্রিকাটি। রশিদুর রহমান নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তার বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। তিনি বলেন, বড়দের যা করা উচিত ছিল তা করছে শিক্ষার্থীরা। এই বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে তারা।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি বুধবার (১ আগস্ট) লিখেছে, রাজধানী ঢাকাজুড়ে টানা চতুর্থদিনের মতো সড়ক অবরোধ করেছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় চালকের গ্রেফতারের দাবি করছে তারা।
চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া লিখেছে, বুধবার সহপাঠী নিহতের ঘটনায় ঢাকায় সড়কে নেমেছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। আগের তিনদিনের মতোই শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। সরকার দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। এতে বলা হয়, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বৈঠক করে শিক্ষার্থীদের ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, বাস দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় রাজপথ দখল নিয়েছে ঢাকার স্কুল শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বাদ দিয়ে ঘরে ফেরার আহ্বানের কথা গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, বেশিরভাগই ১৩-১৫ বছরে শিক্ষার্থী সরকারের এক মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন তার মন্তব্যের জন্য। একই সঙ্গে তারা সড়ক নিরাপদ করার দাবি তুলে ধরেছে।
নাইজেরিয়ার সংবাদমাধ্যম পাঞ্চ ডট কমও ঢাকার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর প্রকাশ করেছে। এছাড়া বিবিসি বাংলা, ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম পার্স টুডের বাংলা সংস্করণ, জার্মানির ডয়চে ভেলের বাংলা সংস্করণে ঢাকার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে একাধিক খবর প্রকাশিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে (র্যাডিসন হোটেলের উল্টোদিকে) বাসচাপায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় বিমানবন্দর সড়কের বাঁ-পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।