ঢাকা ০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
“Dead” একটি শব্দ ও অচল প্রায় জীবন চাকা! আননূর মাদরাসার পক্ষ থেকে হাফিজ মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু-কে মেলবন্ধন স্মারক প্রদান বালাগঞ্জে উপজেলা প্রেসক্লাবের সাথে “নবাগত ইউএনও সুজিত কুমার চন্দ’র মতবিনিময় বালাগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের ‘হাতের মুঠোয় সকল সেবা’ কার্যক্রম চালু বিমানের প্যারিস-ঢাকা ফ্লাইট পুনরায় চালুর জোরালো দাবী প্রবাসীদের বালাগঞ্জে ছাত্রদল নেতা সায়েম আহমদ হত্যা মামলার অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা খলকু মিয়া আটক গহরপুর ছাত্রকল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণদেরকে সংবর্ধনা ও শিক্ষা সেমিনার অন্তর্বর্তীকালীন সকল সিদ্ধান্ত জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই নেওয়া উচিত- বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদিক সম্মেলন করলেন সিলোট জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য লোকন মিয়া

শামীমার নাগরিকত্ব নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের ভিন্নমত

  • আপডেট সময় ০৭:৫৫:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
  • ১৪৭ বার পড়া হয়েছে

আইএসে যোগ দেওয়া তরুণী শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব নিয়ে কূটনৈতিক মতভিন্নতা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে। যুক্তরাজ্য মনে করে, বাবা-মায়ের সূত্রে শামীমার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ বলেছে, শামীমা বাংলাদেশের নাগরিক নয়। কোনও দিন বাংলাদেশে যায়নিও। তাকে বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়ে যেসব আলোচনা হচ্ছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক।
লন্ডনের বেথনেল গ্রিন অ্যাকাডেমি স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল শামীমা। ২০১৫ সালে আমিরা আবাসে ও খাদিজা সুলতানা নামের আরও দুই কিশোরীকে সঙ্গে নিয়ে আইএসে যোগ দিয়েছিল সে। পরিবারকে একদিনের জন্য বাইরে যাওয়া কথা বলে প্রথমে তুরস্ক যায় তারা। সেখান থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে সিরিয়ায় প্রবেশ করে ওই তিন কিশোরী। জিহাদিদের বিয়ে করে সন্তানদের যুদ্ধে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের।
শামীমা স্কাই নিউজকে বলেছিল, রাকায় পৌঁছে ইংরেজি জানা যোদ্ধাকে বিয়ের আবেদন করে সে। ১০ দিন পর ২৭ বছর বয়সী এক ডাচ নাগরিকের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। শামীমার স্বামী পরে সিরীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমপর্ণ করে। পরে বাঘুজ থেকে পালিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয় তারা। অপুষ্টি ও অযত্নে তার দুইটি সন্তান জন্মের আগেই মারা গেছে। সর্বশেষ সে জন্ম দেয় জেরাহকে।
গত মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয় যুক্তরাজ্য সরকার। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনের ভাষ্য, শামীমা বেগমের বাবা বর্তমানে বাংলাদেশে বসবাস করছেন। তার মায়ের মতো তার বাবার জন্মও বাংলাদেশে। সুতরাং ২১ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত শামীমা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার দাবিদার। শামীমার বর্তমান বয়স ১৯ বছর। বয়স ২১ বছর হয়ে যাওয়ার পর শামীমা তার স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাওয়া বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখা না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ গত বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শামীমার নাগরিকত্বের বিষয়ে বলেছেন, যুক্তরাজ্য তার নাগরিকত্ব কেড়ে নিলেও সে রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বে না। যুক্তরাজ্যের আইনে বলা আছে, সরকার মনে করলে ঝুঁকিপূর্ণ যে কারওর নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারে। কিন্তু এ কাজ তখনই করা যায়, যখন তার অন্য কোনও দেশের নাগরিকত্ব থাকে। শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করার অর্থ হচ্ছে, তার অন্য কোনও দেশের নাগরিকত্ব আছে বলে মনে করে যুক্তরাজ্য।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এ বিষয়ে টুইটারে লিখেছেন, ‘আইএসে যোগ দেওয়া শামীমা বেগম বাংলাদেশের নাগরিক নয়।’ জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্সের’ কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতির ভাষ্য, ‘শামীমা বেগমকে ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক হিসেবে আখ্যায়িত করার বিষয়টি গভীরভাবে উদ্বেগজনক। শামীমা বেগম বাংলাদেশের নাগরিক নয়। জন্মসূত্রে সে যুক্তরাজ্যের নাগরিক। দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়ে সে কখনও বাংলাদেশের কাছে আবেদন করেনি। এমন কি বাবা-মায়ের জন্মস্থান হলেও, শামীমা আগে কখনও বাংলাদেশে আসেনি। সুতরাং তাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না।’
শামীমা নিজেও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার পক্ষেও কোনও মন্তব্য করেনি। বরং যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়ে সে বলেছে, ‘আমার মাত্র একটিই নাগরিকত্ব আছে। সেটাও যদি কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে আমার আর কিছু থাকবে না।’ শামীমা অন্য দেশের নাগরিকত্ব পাওয়া না পাওয়ার বিষয়ে বরং নেদারল্যান্ডের নাম নিয়েছে। কারণ যে আইএস জঙ্গিকে সে বিয়ে করেছিল সে নেদারল্যান্ডের নাগরিক।
এদিকে, নেদারল্যান্ড তাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের অপারগতা জানিয়ে দিয়েছে। তাদের ভাষ্য, একে তো নেদারল্যান্ডে প্রবেশের বিষয়ে শামীমার কাছে প্রয়োজনীয় নথিপত্র নেই, তার ওপর সে জঙ্গিবাদে জড়িত। সুতরাং এমনিতেই তার নেদারল্যান্ডে প্রবেশের কোনও সুযোগ নেই।
নাগরিকত্ব বাতিল করতে গিয়ে আগেও আইনি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। দেশটির বিরোধী দল লেবার পার্টির পক্ষ থেকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই ব্যক্তির নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছিল আদালত।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

লক ডাউন পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফ্রান্সে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি

যুক্তরাজ্যে করোনার মধ্যেই শিশুদের মাঝে নতুন রোগের হানা

“Dead” একটি শব্দ ও অচল প্রায় জীবন চাকা!

শামীমার নাগরিকত্ব নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের ভিন্নমত

আপডেট সময় ০৭:৫৫:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

আইএসে যোগ দেওয়া তরুণী শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব নিয়ে কূটনৈতিক মতভিন্নতা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে। যুক্তরাজ্য মনে করে, বাবা-মায়ের সূত্রে শামীমার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ বলেছে, শামীমা বাংলাদেশের নাগরিক নয়। কোনও দিন বাংলাদেশে যায়নিও। তাকে বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়ে যেসব আলোচনা হচ্ছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক।
লন্ডনের বেথনেল গ্রিন অ্যাকাডেমি স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল শামীমা। ২০১৫ সালে আমিরা আবাসে ও খাদিজা সুলতানা নামের আরও দুই কিশোরীকে সঙ্গে নিয়ে আইএসে যোগ দিয়েছিল সে। পরিবারকে একদিনের জন্য বাইরে যাওয়া কথা বলে প্রথমে তুরস্ক যায় তারা। সেখান থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে সিরিয়ায় প্রবেশ করে ওই তিন কিশোরী। জিহাদিদের বিয়ে করে সন্তানদের যুদ্ধে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের।
শামীমা স্কাই নিউজকে বলেছিল, রাকায় পৌঁছে ইংরেজি জানা যোদ্ধাকে বিয়ের আবেদন করে সে। ১০ দিন পর ২৭ বছর বয়সী এক ডাচ নাগরিকের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। শামীমার স্বামী পরে সিরীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমপর্ণ করে। পরে বাঘুজ থেকে পালিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয় তারা। অপুষ্টি ও অযত্নে তার দুইটি সন্তান জন্মের আগেই মারা গেছে। সর্বশেষ সে জন্ম দেয় জেরাহকে।
গত মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয় যুক্তরাজ্য সরকার। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনের ভাষ্য, শামীমা বেগমের বাবা বর্তমানে বাংলাদেশে বসবাস করছেন। তার মায়ের মতো তার বাবার জন্মও বাংলাদেশে। সুতরাং ২১ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত শামীমা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার দাবিদার। শামীমার বর্তমান বয়স ১৯ বছর। বয়স ২১ বছর হয়ে যাওয়ার পর শামীমা তার স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাওয়া বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখা না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ গত বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শামীমার নাগরিকত্বের বিষয়ে বলেছেন, যুক্তরাজ্য তার নাগরিকত্ব কেড়ে নিলেও সে রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বে না। যুক্তরাজ্যের আইনে বলা আছে, সরকার মনে করলে ঝুঁকিপূর্ণ যে কারওর নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারে। কিন্তু এ কাজ তখনই করা যায়, যখন তার অন্য কোনও দেশের নাগরিকত্ব থাকে। শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করার অর্থ হচ্ছে, তার অন্য কোনও দেশের নাগরিকত্ব আছে বলে মনে করে যুক্তরাজ্য।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এ বিষয়ে টুইটারে লিখেছেন, ‘আইএসে যোগ দেওয়া শামীমা বেগম বাংলাদেশের নাগরিক নয়।’ জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্সের’ কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতির ভাষ্য, ‘শামীমা বেগমকে ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক হিসেবে আখ্যায়িত করার বিষয়টি গভীরভাবে উদ্বেগজনক। শামীমা বেগম বাংলাদেশের নাগরিক নয়। জন্মসূত্রে সে যুক্তরাজ্যের নাগরিক। দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়ে সে কখনও বাংলাদেশের কাছে আবেদন করেনি। এমন কি বাবা-মায়ের জন্মস্থান হলেও, শামীমা আগে কখনও বাংলাদেশে আসেনি। সুতরাং তাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না।’
শামীমা নিজেও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার পক্ষেও কোনও মন্তব্য করেনি। বরং যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়ে সে বলেছে, ‘আমার মাত্র একটিই নাগরিকত্ব আছে। সেটাও যদি কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে আমার আর কিছু থাকবে না।’ শামীমা অন্য দেশের নাগরিকত্ব পাওয়া না পাওয়ার বিষয়ে বরং নেদারল্যান্ডের নাম নিয়েছে। কারণ যে আইএস জঙ্গিকে সে বিয়ে করেছিল সে নেদারল্যান্ডের নাগরিক।
এদিকে, নেদারল্যান্ড তাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের অপারগতা জানিয়ে দিয়েছে। তাদের ভাষ্য, একে তো নেদারল্যান্ডে প্রবেশের বিষয়ে শামীমার কাছে প্রয়োজনীয় নথিপত্র নেই, তার ওপর সে জঙ্গিবাদে জড়িত। সুতরাং এমনিতেই তার নেদারল্যান্ডে প্রবেশের কোনও সুযোগ নেই।
নাগরিকত্ব বাতিল করতে গিয়ে আগেও আইনি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। দেশটির বিরোধী দল লেবার পার্টির পক্ষ থেকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই ব্যক্তির নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছিল আদালত।