চতুর্থবারের মতো সাতক্ষীরার আম ইউরোপের বাজারে রফতানির কার্যক্রম উদ্বোধন হলো শনিবার (১৯ মে)। সাতক্ষীরা সদরের ধুলিহর গ্রামের আমচাষী জাহাঙ্গীর আলমের বাগান থেকে ইউরোপের বাজারে চার টন হিমসাগর আম রফতানি করা হয়। রফতানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন।
প্রথম ধাপে এই জেলার আম পাঠানো হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ইতালি, ফ্রান্স, জার্মান, যুক্তরাজ্য ও স্পেনে। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন সুপার শপেও সাতক্ষীরার আম পাওয়া যাবে।
আম রফতানির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারণে সাতক্ষীরার আম কোয়ালিটি সম্পন্ন ও এই আম তাড়াতাড়ি পুরুষ্ট হয় এবং বাজারে ওঠে। গত বছর যে পরিমাণ আম রফতানি করার কথা ছিল, সে পরিমাণ রফতানি হয়নি। বিদেশি ক্রেতারা আম নেওয়ার কথা বলেও শেষ মুহূর্তে এসে তারা আর আম নেয়নি। কিন্তু এবছর বিদেশি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, অন্য বছরের তুলনায় এবার বেশি আম রফতানি হবে।’
তিনি বলেন, কৃষকরা লাভের কথা মাথায় রেখেই আম উৎপাদন করে থাকেন। আশা করি, তারা তাদের নায্য মূল্য পাবেন। গত বছর বাজারজাত করণে যে সমস্যা ছিল, সেটার সমাধানে আমরা কাজ করছি। বিদেশের আম রফতানির খবর বাজারে প্রচার হলে আমের দাম আরও বাড়বে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন। এই রফতানিযোগ্য আমের বেশিরভাগই বিদেশে রফতানি কর হয়।’
মোহাম্মদ মহসীন আরও বলেন, ‘গুণগত ও মানসম্পন্ন আম উৎপাদন করতে কৃষি মন্ত্রণালয় অনুমোদিত অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি নীতিমালা রয়েছে। এই নীতিমালা মেনে যে সব কৃষক আম উৎপাদন করবেন,তাদের আম বিদেশে রফতানি করা হবে।’
রফতানি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন— ঢাকা খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংনিরোধক উইংয়ের পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো আজহার আলী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক নিত্য রঞ্জন বিশ্বাস, সাতক্ষীরা জেলা কৃষি অফিসার আব্দুল মান্নান, সলিডারিডাডের কান্ট্রি ম্যানেজার সেলিম রেজা হাসান ও উত্তরণের পরিচালক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
আম চাষী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি বিষমুক্ত আম উৎপাদন করি।আমার বাগানের আম বিদেশে রফতানি হচ্ছে, এটা ভেবে খুব ভালো লাগছে। এই কাজে প্রথম থেকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও বেসরকারি সংস্থা উত্তরণ আমাকে সব সময় সাহায্য করেছে। আমের ফলন বেশী হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছি। দেশী মার্কেটে যে আমের দাম প্রতিমণ ২২০০ টাকা, বিদেশের মার্কেটে সেই আমের দাম পাচ্ছি ৩২০০ টাকা করে।’
সলিডারিডাডের কান্ট্রি ম্যানেজার সেলিম রেজা হাসান বলেন, ‘বিদেশে রফতানি করতে সব আম চাষীকে বিষমুক্ত আম চাষ করতে হবে। কৃষকদের বাঁচাতে হলে বিদেশের মার্কেট ধরার বিকল্প নেই।’
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, ‘জেলার আম সারাদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। গত তিন বছর ধরে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এই জেলার আম্রপলি, ল্যাংড়া, হিমসাগর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে ২০০ মেট্রিক টন রফতানি হবে। জেলার ৮৪ জন চাষীর ৬৪ হেক্টর জমির আম বিদেশে পাঠানোর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলতি মৌসুমের প্রথমে হিমসাগর, পরে ল্যাংড়া এবং আম্রপলি বিদেশে রফতানি করা হবে। এ বছর ইসলাম এন্টারপ্রাইজ, এনআর এন্টারপ্রাইজ, এনএইচ কপোরেশনসহ ১৪টি প্রতিষ্ঠান বিদেশে রফতানির জন্য আম নিচ্ছে।’