আজ ফুটবল ভক্তদের চোখ মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামের দিকে। ফ্রান্স দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জিতবে, নাকি নতুন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ক্রোয়েশিয়াকে বরণ করবে ফুটবলের শ্রেষ্ঠ মঞ্চ? উত্তর মিলবে আজ রাতেই। আরেকটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত ফুটবলপ্রেমীরা। মারিও জাগালো এবং ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের পর খেলোয়াড়-কোচ দুই ভূমিকায় বিশ্বকাপ জিততে পারবেন দিদিয়ের দেশম?
১৯৯৮ বিশ্বকাপে দেশমের নেতৃত্বে শিরোপা জিতেছিল স্বাগতিক ফ্রান্স। ২০০১ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে বুট তুলে রাখলেও ফুটবল থেকে দূরে থাকতে পারেননি। সে বছরই কোচের দায়িত্ব নেন ফরাসী ক্লাব মোনাকোর। মোনাকো, জুভেন্টাস, মার্সেই ঘুরে ২০১২ সাল থেকে তিনি ফ্রান্সের কোচ। ছয় বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন ‘লে ব্লুজ’ নামে পরিচিত ফ্রান্সের জাতীয় ফুটবল দলকে। দুই বছর আগে সুযোগ এসেছিল শিরোপা জয়ের। কিন্তু ঘরের মাঠে ইউরোর ফাইনালে ফ্রান্স হারাতে পারেনি ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকে।
এবার ফুটবলের সেরা আসর বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ। সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে পারবেন দেশম? ফ্রান্স কোচ যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। অতীত নয়, তিনি তাকিয়ে সামনের দিকে, ‘আমাদের বর্তমান নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। আমরা ইতিহাস নিয়ে পড়ে থাকতে চাই না। হয়তো সেটা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা জোগাবে আমাদের। আমি বলছি না যে ২০ বছর আগের স্মৃতি নিয়ে গর্বিত নই। তবে রাশিয়ায় নতুন কিছু উপহার দেওয়ার অপেক্ষায় আছি।’
দুই বছর আগে ইউরো ফাইনালের ব্যর্থতা আজ মস্কোতে ভুলতে উন্মুখ দেশম, ‘২০১৬ ইউরোর ফাইনালে হারের প্রায়শ্চিত্ত রাশিয়া বিশ্বকাপে হতে পারে। আমি এখানে এসেছি ইতিহাসের নতুন পাতা উন্মুক্ত করতে। আমার বিশ্বাস, খেলোয়াড়রা তা করতে পারবে। ইউরোর ফাইনাল না জেতা ছিল দুঃখজনক। রাশিয়া বিশ্বকাপ জিতে সেই দুঃখ ভুলে যেতে চাই, ফ্রান্সের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।’
আজ ফ্রান্স জিতলে বিশ্বকাপ দেখবে নতুন ধরনের ‘হ্যাটট্রিক’। মাত্র তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে খেলোয়াড়-কোচ দুই ভূমিকায় বিশ্বকাপ জয়ের মধুর স্বাদ পাবেন দেশম।
ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে প্রতিভার অভাব কখনোই হয় না। তবু তাদের মধ্যে জাগালো অন্য উচ্চতায়। ১৯৫৮ আর ১৯৬২ বিশ্বকাপ জিতেছিলেন খেলোয়াড় হিসেবে, আর ১৯৭০ বিশ্বকাপে কোচ হিসেবে ব্রাজিলকে এনে দিয়েছিলেন জুলে রিমে ট্রফি।
জাগালো অবশ্য অধিনায়কের ভূমিকায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। যেটা করে দেখিয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার বেকেনবাওয়ার। ১৯৭৪ সালে তার নেতৃত্বেই শিরোপা জিতেছিল পশ্চিম জার্মানি। ১৬ বছর পর জার্মানির তৃতীয় শিরোপা জয়ে তিনি ছিলেন কোচের ভূমিকায়।
দেশম এখন ঠিক একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। ২০ বছর আগে ফ্রান্সের অধিনায়কের সামনে কোচ হিসেবেও বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি। ফরাসিদের ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জয়ে জিদান-অঁরি-পেতি-থুরামদের পাশাপাশি দেশমের অবদানও কম ছিল না। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের ভূমিকায় প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকানোই শুধু নয়, ফ্রান্সের আক্রমণ গড়ার কাজটিও করেছিলেন এমবাপে-গ্রিয়েজমান-উমতিতি-লরিসদের কোচ।
আর মাত্র একটি বাধা সামনে। ফাইনালে জিতলেই ইতিহাস গড়বেন দেশম, অসাধারণ অর্জনে সমৃদ্ধ হবে তার ক্যারিয়ার। অধিনায়কের পর কোচ হিসেবেও স্বপ্নের সোনালী ট্রফি স্পর্শ করতে পারবেন তিনি।