সিরিয়ার গোলান মালভূমিকে ইসরায়েলি ভূখণ্ড হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে যে স্বীকৃতি দিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। ট্রাম্পের স্বীকৃতির পর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ইস্যুতে তাদের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ট্রাম্পের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কাতার, লেবাননও ট্রাম্পের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা বিষয়ক দূত মিখাইল বোগডানোভ বলেছেন, গোলান নিয়ে রাশিয়ার অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এ ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিকে আরও অবনতির দিকে নিয়ে যাবে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব স্বীকার করে না। আমাদের এ সংক্রান্ত অবস্থান পরিবর্তনের কোনও পরিকল্পনা নেই।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের পক্ষে ট্রাম্প যে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফ্রান্স এই দখলদারিত্ব স্বীকার করে না।
জার্মানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে।
গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের স্বীকৃতি না দেওয়ার ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেছে কানাডা।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেছেন, ইসরায়েলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আরও একবার আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করলো। কিন্তু তাদের সিদ্ধান্ত কখনও ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে বৈধতা দেবে না।
কাতার সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গোলান মালভূমি থেকে ইসরায়েলকে অবশ্যই সরে যেতে হবে।
লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন বলেছেন, অন্য দেশের ভূখণ্ডের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার বিদেশি নেতাদের নেই।
এর আগে ২৫ মার্চ সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে দখলকৃত গোলান মালভূমিকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডের স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এদিন এ সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় সিরীয় ভূখণ্ড গোলান মালভূমি দখল করে নেয় ইসরায়েল। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কখনও ইসরায়েলের এই দখলদারিত্বের স্বীকৃতি দেয়নি। তবে দীর্ঘদিনের মার্কিন নীতি থেকে সরে এসে ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে গোলান মালভূমির ওপর ইসরায়েলি দখলদারিত্বের স্বীকৃতি দেন তিনি। হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং ট্রাম্পের জামাতা ও উপদেষ্টা ইহুদি ধর্মাবলম্বী জ্যারেড কুশনারের উপস্থিতিতে এ সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প।
টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েল রাষ্ট্র ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গোলান মালভূমির কৌশলগত ও নিরাপত্তাজনিত গুরুত্ব রয়েছে। অঞ্চলটিতে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেওয়ার এখনই সময়।
গোলান মালভূমি কেন এতটা গুরুত্বপূর্ণ:
দক্ষিণ পশ্চিম সিরিয়ার একটি পাথুরে মালভূমি হচ্ছে গোলান। জায়গাটা বেশি বড় নয়। কিন্তু এর কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে। গোলান থেকে মাত্র ৪০ মাইল দূরে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক এবং দক্ষিণ সিরিয়ার একটি বড় অংশ স্পষ্ট দেখা যায়। সিরিয়ান সেনাবাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য এটি একটি আদর্শ জায়গা। তাছাড়া পার্বত্য এলাকা বলে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর যে কোনও হামলার পথে এটি একটি চমৎকার প্রাকৃতিক বাধা হিসেবে কাজ করবে।
এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক পানির একটি চমৎকার উৎস গোলান মালভূমি। এখান থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে জর্ডান নদীতে। জায়গাটি উর্বর এবং এখানে আঙুরসহ বিভিন্ন ফলের চাষ হয়, পশুপালন হয়।
১৯৬৭ সালে ইসরায়েল জায়গাটি দখল করার পর এখানকার সিরিয়ান আরব বাসিন্দারা অধিকাংশই পালিয়ে যায়। ১৯৭৩ সালের যুদ্ধে সিরিয়া এটি পুনর্দখলের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ১৯৮১ সালে ইসরায়েল গোলানকে নিজের অংশ করে নেয় একতরফাভাবে। তবে ইসরায়েলের এই দখলদারিত্বের স্বীকৃতি দেয়নি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
অঞ্চলটিতে ৩০টিরও বেশি ইসরায়েলি বসতি আছে, যাতে ২০ হাজার ইসরায়েলি বাস করে। এছাড়াও এখানে বাস করে প্রায় ২০ হাজার সিরিয়ান দ্রুজ সম্প্রদায়ের মানুষ। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, বিবিসি, ফ্রান্স ২৪।