‘প্রাক্তন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্যারিস-ফ্রান্স।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ। এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ২৫/৩০। ছোট পরিবার। সুখী সংসার বলতে পারেন।
ফ্রান্স হলো সংগঠনের মানে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দেশ। আর বাংলাদেশের মানুষ আমরা যারা এদেশে আছি তারাও মোটামুটি কয়েকজন একত্রিত হতে পারলেই হলো। তৈরি হয়ে গেলো একটি কমিউনিটিভিত্তিক গ্রুপ। শুনতে পাই এদেশে বাংলাদেশীদের নিয়ে গড়া নিবন্ধিত সংগঠনই আছে দুইশত এর ওপরে।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়া এই ‘মিনিয়েচার টাইপের মেসেঞ্জার গ্রুপকে’ কমিউনিটিভিত্তিক কোন সংগঠন মনে করবার কোন কারন নেই। কেননা এখানে প্রচলিত কোন সভাপতি সাধারন সম্পাদক নেই। আর সহসভাপতি বা সহসাধারণ সম্পাদক হিসেবে জনা বিশেক নামও নেই। বাকি পাদ পদবী’র কথা না-ই বা বললাম।
ফ্রান্সে কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা আসে না? আমার মনে হয় উল্লেখযোগ্য কোন সংখ্যা নেই। হাতের কড় গুনেই বলা যাবে। আমেরিকা, কানাডা অস্ট্রেলিয়ায় কিন্তু এই সংখ্যা অনেক। বলা যায় পছন্দের দেশ হিসেবে ফ্রান্সকে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা তালিকায় রাখতে খুব আগ্রহী নয় তা ঠিক। তারপরও আমরা নগন্য সংখ্যক প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আছি। আর কোন সতীর্থের কথা জানি না। তবে ‘আমি পথভোলা এক পথিক এসেছি’ – বলতে পারি।
আমরা প্রাক্তন ঢাবিয়ানরা একত্রিত হবো আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে না – তাকি হয়! আর তা যদি হয় ‘বাংলা নববর্ষ বরন ও মিলনমেলা!’ আয়োজন ছোট্ট কিন্তু অনুভূতির গভীরতা অনেক।
গানপর্বে সবসময়ই যিনি অনিবার্যভাবেই থসকেন তিনি আমাদের অগ্রজ শাহাদাত হোসেন রনি ভাই। তার দরাজ গলায় গান শুনে কখনও ক্লান্ত হই না। পলাশ গাঙ্গুলির মন ছোঁয়া সংগীত সত্যিই আলোড়িত করে। গাইলেন হোমায়রা শারমীন কাকলিও। আর তবলায় অনুভব বড়ুয়া অনুভূতিতে ঝংকার তুলে উদ্বেল করে দেয়। ‘কমলা রানীর সাগর দীঘি’ পালা গানে শোয়েব মোজাম্মেল আমাদের নিয়ে যান আবহমান বাংলার প্রাচীন লোকগাঁথার রাজ্যে। অগ্রজ মুনীর কাদের, মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ আর খালেদুর রহমান সাগর এর আবৃত্তি ছোট্ট আয়োজনে এক রাসভারী আবহ তৈরি করে। সম্মিলিত এই আয়োজন যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনের সড়কদ্বীপের সাংস্কৃতিক আয়োজনের স্মৃতিকাতরতায় টেনে নিয়ে যায়। আমরা সবাই যেন মধুর স্মৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন তারিক হাসান।
আমাদের সকলের শ্রদ্ধাভাজন শরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আমাদের আয়োজনটির প্রধান আকর্ষণ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। স্কলারশিপ নিয়ে চলে আসেন ফ্রান্সে। থেকে যান এখানেই, এই প্যারিস শহরে।
প্রাক্তন ঢাবিয়ানদের এই অনুষ্ঠান একেবারেই সাদামাটা, ছোট্ট। কিন্তু এই মিলনমেলা আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে নিয়ে যায়। কলা ভবনের সামনে বটতলা, মধুর ক্যান্টিন, টিএসসি। প্যারিসের একটা মিলনায়তন আজকের (রোববার) এই ছোট্ট আয়োজনটি এমনই ব্যাপ্তি নিয়ে আমাদের অনুভূতিতে ধরা দেয়। আমরা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। প্রিয় ক্যাম্পাসের সুখস্মৃতি আমাদের মনোজগতে গর্বের লহড়ি তোলে।