স্টাফ রিপোর্টার
সাহসের সাথে সাংবাদিকতা করতে হবে কারো কাছে মাথা নত করে নয় এবং সত্যের পথে হাঁটতে হবে।
নীতি এবং নৈতিকতার জায়গা থেকে সাংবাদিক পেশার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে। আমরা সাংবাদিক আল্লাহ বাদে পৃথিবীর সবাই কে প্রশ্ন করতে পারব! কিন্তু আমরা কারো চামচামি করতে পারব না বলে মন্তব্য করেন খালেদ মুহিউদ্দিন। ফ্রান্সে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী সাংবাদিকদের পেশাগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথম বারের মত বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স ২০২২ আয়োজন করে ফ্রান্স বাংলাদেশ প্রেসক্লাব, এ প্রশিক্ষণে বাংলাদেশী বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন। জার্মান ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গনমাধ্যম সংস্থা ডয়েচে ভেলে বাংলা বিভাগের প্রধান ও জনপ্রিয় টকশো উপস্থাপক, সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন উপস্থিত থেকে এই প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। প্রশিক্ষণের একপর্যায়ে খালেদ মহিউদ্দিন বলেন আমরা সাংবাদিক আল্লাহ বাদে পৃথিবীর সবাই কে প্রশ্ন করতে পারব! কিন্তু আমরা কারো চামচামি করতে পারবোনা। সাংবাদিক নাম ব্যবহার করে কোন ধরনের চাঁদাবাজি করা যাবে না। সাংবাদিকদের ক্ষমতা বা পাওয়ার প্রয়োগ করতে নেই কারণ সাংবাদিকরা হচ্ছে সমাজের দর্পণ ,সমাজের বিবেক সে অনুযায়ী তাদের তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে হবে বস্তুনিষ্ঠভাবে এবং তা দর্শকদের মধ্যে পৌঁছে দিতে হবে। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান সাংবাদিকতা নিয়ে নানান সমালোচনা করেন এবং এগুলো নিয়ে নিজেই বিব্রত হন অনেক সময় বলে জানান । আপনাকে যে পাত্তা দেয় না আপনিও তাকে পাত্তা দেবেন না। সাংবাদিকতা হল বিভিন্ন ঘটনাবলী, বিষয়, ধারণা, মানুষ, প্রকৃতি, পরিবেশ, সমাজ, রাস্ট্র সম্পর্কিত প্রতিবেদন তৈরি ও পরিবেশন, যা উক্ত দিনের প্রধান সংবাদ এবং তা সমাজে প্রভাব বিস্তার করে। এই পেশায় শব্দটি দিয়ে তথ্য সংগ্রহের কৌশল ও সাহিত্যিক উপায় অবলম্বনকে বোঝায়। খালেদ মহিউদ্দিন বলেন,সাহসের সাথে সাংবাদিকতা করতে হবে কারো কাছে মাথা নত করে নয় এবং সত্যের পথে হাঁটতে হবে।
নীতি এবং নৈতিকতার জায়গা থেকে সাংবাদিক পেশার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে। সাংবাদিকতা করতে হলে অবজেক্টিভ এবং সাবজেক্টিভ দুইটা বিষয়ের উপর জ্ঞান থাকতে হবে এবং এগুলো প্রয়োগ করতে হবে। সিঙ্গেল সোর্সের ভিত্তিতে কখনো সংবাদ প্রকাশ করা উচিত নয় যতক্ষণ না পর্যন্ত ডাবল সোর্সের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ এবং এর বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত না হওয়া যাবে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সে অভিযোগকারীর বক্তব্য নিতে হবে এবং ভিকটিমের বক্তব্য পর্যালোচনা করে সংবাদ প্রকাশ করতে হবে। প্রকৃত সাংবাদিক হচ্ছেন তিনি! যিনি দীর্ঘদিন সংবাদ সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত থেকে তার জন্য সর্বদা নিরলস ভাবে সংবাদ সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট বার্তা বিভাগে তা প্রেরণ করেন। যার সংবাদে সমাজের নির্যাতিত- নিষ্পেষিত অসহায় দরিদ্র মানুষের আহাজারি প্রকাশ পায়’ যার সংবাদে সমাজে ঘাপটি মেরে বসে থাকা মুখোশদারীর কালো মুখোশ উন্মোচিত হয় তিনিই প্রকৃত সাংবাদিক। অপ-সাংবাদিক হচ্ছেন তিনি যিনি সমাজের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের দোষত্রুটি দেখেও না দেখার ভান করেন, সর্বদা তোষামোদ বা চামচামি (তৈল মর্দন) করতে ব্যাস্ত থাকেন। নির্যাতিত নিষ্পেষিত মানবতার চিৎকারের বিলাপ কানে পৌছলেও যিনি তুলা দিয়ে কান বন্ধ করে রাখেন- সাদাকে কালো আর কালো-কে সাদা বলে যিনি লিখেন তিনিই অপ-সাংবাদিক। উপস্থিত সাংবাদিকরা হলুদ সাংবাদিকতা নিয়ে প্রশ্ন করলে এর জবাবে খালেদ মহিউদ্দিন বলেন – হলুদ সাংবাদিকতা বলতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভিত্তিহীন রোমাঞ্চকর সংবাদ পরিবেশন বা উপস্থাপনকে বোঝায়। এ ধরনের সাংবাদিকতায় ভালমত গবেষণা বা খোঁজ-খবর না করেই দৃষ্টিগ্রাহী ও নজরকাড়া শিরোনাম দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। এগুলো নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের পরিহার করতে হবে । তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন এই প্রবাসের মাটিতে সাংবাদিকতা করে যদি আপনাদের লাভ হয় তাহলে আপনার এই পেশায় নিয়োজিত থাকেন। আর যদি মনে করেন এই পেশায় আপনারা লাভবান হচ্ছে না তাহলে এই পেশা ছেড়ে দেওয়া আপনাদের জন্য উত্তম। উপস্থিত সাংবাদিকরা খালেদ মহিউদ্দিন এর কাছে নানান ধরনের প্রশ্ন করেন তার ব্যক্তির জীবন সম্পর্কে জানতে চান এসবগুলোর উত্তর তিনি একে একে দেয়ার চেষ্টা করেন এবং সবাই তাকে অনুকরণ এবং অনুসরণ করবে বলে জানালে-খালেদ মহিউদ্দিন বলেন আমাকে অনুসরণ করেন কিন্তু আমার মতো হবার চেষ্টা করবে না। আমাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন আপনাদের মেধা বুদ্ধি এবং প্রজ্ঞা দিয়ে।
উল্লেখ্য যে গত ২৬ জুলাই প্যারিসের সেন্ট ডেনিস এলাকার একটি অত্যাধুনিক একটি হলে এই বুনিয়াদি প্রশিক্ষন চলাকালীন সময়ে এসব মন্তব্য করেন খালেদ মুহিউদ্দীন ।
ফ্রান্স বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শেষে ফ্রান্স-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি ফেরদৌস করিম আখঞ্জীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন সাইফুলের উপস্থাপনায় প্রশিক্ষণ নিতে আসা সিনিয়র-জুনিয়র এবং নতুন সাংবাদিকদের মধ্যে সার্টিফিকেট বিতরন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্সে বাংলাদেশ দুতাবাসের মিনিস্টার (রাজনীতি )কাজী এহসানুল হক ।
বিশেষ অথিতি ছিলেন দুতাবাসের হেড অব চ্যান্সারি ওয়ালিদ বিন কাসিম।
উপস্থিত সবাই ফ্রান্স বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের এই বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ এর আয়োজনের জন্য ভূয়সী প্রশংসা করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং এর ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আয়োজকদের স্মরণ করিয়ে দেন।