ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ পুরনো। শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ইউনস্কতে নানা অনুষ্টানের নামে এসব দূর্নীতির কথা ফ্রান্সের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে চাউর আছে বহুদিন থেকে। তাছাড়া আওয়ামীলীগের সময় তিনি দূতাবাসকে সে দলের কার্যালয় বানিয়ে রেখেছিলেন এমন অভিযোগ সবসময়ই ছিল। খবরের কাগজের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তালহা সহ তিন রাষ্ট্রদূতের দূর্নীতির আদ্যোপান্ত। দর্পণ পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
দুর্নীতির অভিযোগে ফেঁসে যাচ্ছেন ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার মোহাম্মদ তালহা, কাতারে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম ও ডেনমার্কে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এ কে এম শহীদুল করিমসহ ১০টি দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের ৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, রাষ্ট্রের অর্থ আত্মসাৎ, আর্থিক ক্ষতিসাধনসহ বিভিন্ন দুর্নীতি করার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। এ বিষয়ে অনেক দিন ধরেই তার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হলেও সম্প্রতি প্রকাশ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রদূত ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিষয়ে কয়েক বছর আগে আসা অভিযোগের ভিত্তিতে বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা। সেই সব তথ্য-উপাত্তে অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতাও মিলেছে। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে অভিযোগসংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রদূত ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে যোগদানের তথ্য, দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখা ও পূর্বের কর্মস্থল ও পদবি, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানাসহ চাকরিসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মিশন অডিট অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছে দুদক। তথ্য সরবরাহ করতে আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, দুবাই, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, ফিলিপিন্সে বাংলাদেশি দূতাবাস/হাইকমিশনে কর্মরত রাষ্ট্রদূত, হেড অব চ্যান্সেলর/প্রধান কনস্যুলার, মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বর্তমান কর্মস্থল, পদবি, স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা সংগ্রহ করা প্রয়োজন।
চিঠিতে রাষ্ট্রদূতসহ ৩৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিষয়ে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। চিঠিতে অভিযোগসংশ্লিষ্টদের নামের পাশে অভিযোগকালীন পদবি উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় অভিযোগসংশ্লিষ্টরা হলেন ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার মোহাম্মদ তালহা (অভিযোগকালীন যুক্তরাজ্যের ডেপুটি রাষ্ট্রদূত), কাতারে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম (সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের দায়িত্বে ছিলেন) ও ডেনমার্কে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এ কে এম শহীদুল করিম (সৌদি আরবের জেদ্দায় কনস্যুলার জেনারেল ছিলেন), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মো. হালিমুজ্জামান (প্রথম সচিব), আব্দুল কাদের (গাড়িচালক), ডা. জাকির হোসেন খন্দকার (কাউন্সেলর), জসিম উদ্দিন (উপসচিব), কাজী মুনতাসির মোর্শেদ (সহকারী সচিব), আব্দুল লতিফ ফকির (পিও), আতিকুর রহমান (এমএলএসএস), ইব্রাহিম খলিল (স্টেনোটাইপিস্ট), আসগার হোসেন (সচিব), লুৎফর রহমান (প্রশাসনিক কর্মকর্তা), কামাল হোসেন (পিও)।
অভিযোগের তালিকায় আছেন আকরামুল কাদের (রাষ্ট্রদূত, ওয়াশিংটন), কামরুল আহসান (রাষ্ট্রদূত, অটোয়া, কানাডা), ইয়াকুব আলী (সাবেক রাষ্ট্রদূত), মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন (রাষ্ট্রদূত, ওয়াশিংটন), সামসুল আলম (কনস্যুলার, ওয়াশিংটন ডিসি), ড. এ কে এম আব্দুল মোমেন (কনস্যুলার, নিউইয়র্ক), শামীম আহসান (কনস্যুলার জেনারেল, নিউইয়র্ক), সুলতানা লায়লা হোসাইন (কনস্যুলার জেনারেল, লস এঞ্জেলস), আব্দুল হান্নান (রাষ্ট্রদূত, যুক্তরাজ্য), সরিফা খান (কনস্যুলার জেনারেল, বাণিজ্যিক), ফয়সাল আহম্মেদ (সহকারী রাষ্ট্রদূত, বাকিংহাম), শহীদুল ইসলাম (রাষ্ট্রদূত, সৌদি আরব), এ কে এম মোকাম্মেল হোসেন (কনস্যুলার লেবার উইং), সরোয়ার হোসেন (কনস্যুলার, লেবার উইং, রিয়াদ, সৌদি আরব), এম ফজলুল করিম (রাষ্ট্রদূত, চীন), এম দেলেয়ার হুসাইন (কনস্যুলার), তারেক আহম্মেদ (কনস্যুলার), রোজিনা আহমেদ (কনস্যুলার জেনারেল, ইতালি), নাফিসা মনসুর (ভাইস কনস্যুলার, ইতালি), শাহাদাত হোসেন (রাষ্ট্রদূত, ইতালি), শহীদুল ইসলাম (রাষ্ট্রদূত, ফ্রান্স), হযরত আলী খান (কনস্যুলার এবং হেড অব চ্যান্সেরি, ফ্রান্স), শামিম আহসান (রাষ্ট্রদূত, সুইজারল্যান্ড) এবং আলিমুজ্জামান (কনস্যুলার, সুইজারল্যান্ড)।
গতকাল রবিবার দুদকের উচ্চ পদস্থ এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ ২০১২ সালে কয়েকজন রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। এরপর অনেক রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ আসে।
অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট। ২০২০ সাল পর্যন্ত জমা হওয়া এসব অভিযোগ ও গোয়েন্দা প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে বিভিন্ন দেশে থাকা রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সুপারিশসহ একটি তালিকা কমিশনে জমা দেয় যাচাই-বাছাই কমিটি (যাবাক)। প্রায় চার বছর পর এই তালিকার মধ্য থেকে ৩৮ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। বাকিদের বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতে পারে।