মোহাম্মদ জাফরুল হাসান ঃবলা হয়ে থাকে, মাদকে প্রবেশের প্রথম ধাপ তামাক। সেই তামাকের সহজলভ্যতায় তারুণ্য আজ ধ্বংসের মুখে। যত্রতত্র তামাকের ব্যবহার ও আইন প্রয়োগ না করাই এ সমস্যার কারণ। ভয়ানক বিষয় হচ্ছে, আজকাল অনুর্ধ্ব আঠারো বছর বয়সের অনেক কিশোর এবং স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরও তামাক হাতে দেখা যায়।
পাবলিক প্লেসে তামাক ব্যবহার আরেকটি বিপদজনক অধ্যায়। দিনে দিনে এটি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। যদিও আইনে পাবলিক প্লেসে তামাক ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, তবুও তামাকের হাত থেকে রেহাই পাই না আমরা। আপনি, আমি, কিছুদিন আগে জন্মনেয়া শিশু অপেক্ষা করছি বাসের জন্য, কিন্তু অন্যদিকে কে যেন তামাকের ধোঁয়ায় শুধু নিজেকে নয় আমাদেরও বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তামাক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম একটি মাধ্যম তামাকের মূল্য বাড়িয়ে দেয়া এবং খুচরা তথা সলা সলা করে সিগারেট বিক্রি না করা। উন্নত দেশগুলোতে তাই-ই করা হয়। অথচ আমাদের দেশে যত্রতত্র যেমন তেমন করে সিগারেট কেনা যায় বিক্রি করা যায়। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, কারো পকেটে মাত্র একটি টাকা থাকলেই সেই নিম্নমানের এক সলা সিগারেট কিনতে পারছে। অথচ উন্নত দেশগুলোতে এভাবে তামাক বিক্রি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
১৯৫০ সালে রিচার্ড ডল (Richard Doll) নামক বিজ্ঞানী ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে একটি গবেষণায় প্রকাশ করেন ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য ধূমপানই দায়ী। যেসমস্ত বস্তুর ব্যবহার বাদ দিলে অকাল মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস করা যায় তামাক এর মধ্যে শীর্ষে। যত লোক তামাক ব্যবহার করে তার প্রায় অর্ধেক এর ক্ষতিকর প্রভাবে মৃত্যুবরণ করে। এছাড়া তামাক মূলত হৃৎপিণ্ড, লিভার ও ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। ধূমপানের ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) (এমফাইসিমা ও ক্রনিক ব্রংকাইটিস সহ), ও ক্যান্সার (বিশেষত ফুসফুসের ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার, ল্যারিংস ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার) এর ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়। তামাক উচ্চ রক্তচাপ ও প্রান্তীয় রক্তনালীর রোগ করতে পারে ও যৌনমিলনের সময় লিঙ্গ উত্থানে অক্ষমতার সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার হার ৮৫% বেশি।
সমাজ, পরিবার, তারুণ্য ও সর্বোপরি দেশকে তামাকের বিষাক্ত আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা উচিত। এ জন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও তরুণরা অগ্রগামী ভূমিকা পালন করতে পারে। তামাক বিক্রি ও এর ব্যবহার নীতিকে সরকারের আরও কঠোর করা উচিত। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের কাছে তামাক বিক্রি বন্ধ করতে হবে। তামাকের সহজলভ্যতা দূরীকরণে এর মূল্য বৃদ্ধি এবং আইনের যথাযত পর্যবেক্ষনও সুফল বয়ে আনতে পারে।
লেখক: প্রধান প্রতিবেদক, ফ্রান্স দর্পন।