ঢাকা ০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
প্যারিসে সাংবাদিকদের নতুন সংগঠনট “ফ্রান্স বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন” শিওরখাল ওয়ান কমিউনিটির মানবিক উদ্যোগ: পবিত্র রমজানে ১০০ পরিবারে নগদ সহায়তা বালাগঞ্জে পুলিশের অভিযানে পলাতক আসামি গ্রেফতার আজ অধ্যাপক বদরুজ্জামান’র জন্মদিন: একজন শিক্ষকই নন, এক অনুপ্রেরণার নাম হবিগঞ্জে করিম-মাহমুদা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল দর্শক থেকে সমর্থক হোন, সমর্থক থেকে সহযোদ্ধা হোন, তারপর জাতির সেনাপতি হোন। এ লড়াইসবার: হাসনাত আরিয়ান খান প্রবাসিদের ভোটাধিকার এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখার সুযোগ দিতে হবে : বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা ফ্রান্সে এফএফবিএ সম্মাননায় ভূষিত হলেন বাংলাদেশি নয়ন এনকে ফ্রান্স- বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা ফ্রান্সে বিএনপির ৩১ দফা নিয়ে কর্মশালা ও লিফলেট বিতরণ

প্যারিসে এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিন তরুণ প্রবাসীর মৃত্যু, শোক-স্তব্ধ কমিউনিটি

  • আপডেট সময় ১০:২৭:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল ২০২২
  • ২০৬ বার পড়া হয়েছে

নজমুল কবির ঃফ্রান্সে প্রবাসী তরুন বাংলাদেশীদের মৃত্যুর খবর ঘন ঘন আসছে। মার্চ মাসের শেষ লগ্নে পর পর ৩ টি ও এপ্রিলের শুরুতে ১টি মৃত্যুর খবরে কমিউনিটির ভেতর শোক-বিহ্বলতা জেঁকে বসেছে। একটি মৃত্যু সংবাদে ‘ইন্না-লিল্লাহ…,’ পড়তে না পড়তেই আবার একটি মৃত্যু সংবাদের ধাক্কা। আবার সেটি সামলাতে না সামলাতেই আবার একটি মৃত্যু সংবাদ! কী এক দুঃসহ বিধ্বস্ত অনুভূতি।

সাইফুর রহমান বিপুল, আবুল মুকিত, নাজিম উদ্দীন। কেউ মধ্য বয়সী, কেউ অল্প বয়সী। একেবারে তরতাজা, তরুন। মৃত্যুর কী অদ্ভুত এবং রহস্যঘেরা সিডিউল! কাকে কখন ডাক দেবে কেউ জানিনা!

মার্চ মাসের ২৫ তারিখ ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটিকে হতবিহবল এবং স্তব্ধ করে দেয় দুটো মৃত্যু সংবাদ। কমিউনিটির প্রিয়মুখ মুকিত আর বিপুল। একই দিনে অর্থাৎ ২৫ মার্চ তাদের মৃত্যু হয়। ৫ দিনের ব্যবধানে ৩০ মার্চ নাজিম উদ্দীন নামে আরো এক যুবকের মৃত্যুসংবাদ কমিউনিটির ভেতর আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।

মাথার টিউমার কেড়ে নিলো ফেনীর বিপুলকেঃ
ফেনী জেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের অত্যন্ত পরিচিত মুখ সাইফুর রহমান বিপুল। সদা হাস্যোজ্জল, চিরসবুজ ভদ্র, নম্র এবং সদালাপি হিসেবেই কমিউনিটিতে তার ব্যপক পরিচিতি।

কিছুদিন আগে তার মাথায় একটি টিউমার সনাক্ত হয়। চিকিৎসকরা নানা পরীক্ষা শেষে গত ২৩ মার্চ বুধবার সাইফুর রহমান বিপুলের মাথায় টিউমার অপসারণের লক্ষ্যে অস্ত্রপোচার করা হয়। এরপর সে কোমায় চলে গেলে তাকে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে রাখা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৫ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যু কালে স্ত্রী ও দুই সন্তান সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।

দক্ষ সংগঠক আব্দুল মুকিতের আকস্মিক মৃত্যুঃ
ফ্রান্স প্রবাসী বিয়ানীবাজার উপজেলার পরিচিত মুখ, সবার প্রিয় আব্দুল মুকিত প্যারিসের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন বলে জানা যায়।

আব্দুল মুকিত (পিতা: মরহুম ময়নুল হক কটন)। তার বাড়ি মোল্লাটিকর, ছোটদেশ আদর্শ গ্রাম, বিয়ানীবাজার, সিলেট। তিনি সপরিবারে ফ্রান্সে থাকতেন।

আবদুল মুকিত ছোটদেশ প্রবাসী জনকল্যাণ ট্রাস্টের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। বিয়ানীবাজার উপজেলা সমাজকল্যাণ সমিতি, ফ্রান্স শাখার সাথেও যুক্ত ছিলেন।

সিলেটের নাজিম উদ্দীনের মৃত্যু ঘুমের মধ্যেইঃ
প্যারিসের উপকন্ঠে বাংলাদেশী অধ্যুষিত ওভারবিলিয়ে এলাকায় তাকতেন সিলেটের নাসির উদ্দীন। ২৯ মার্চ রাতে বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে পড়েন। সেই ঘুম আর ভাঙেনি। ৩০ মার্চ সকালে তার বন্ধুরা ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু এই নিদ্রা চিরনিদ্রা। ঘুমের ভেতরই স্ট্রোক করার কারনে মৃত্যুবরন করে বলে তার বাসার লোকদের মাধ্যমে জানা যায়।

এদিকে ফ্রান্স তথা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী তরুন যুবক বাংলাদেশী কেন অকাল মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করে? এটিকে অর্থাৎ মৃত্যুকে কেবল ‘অমোঘ নিয়ম’ বলে মেনে নিতে পারছে না অনেকেই। মৃত্যু অনিবার্য কিন্তু কোন না কোন অবাঞ্ছিত কারন বা তার সমষ্টি মৃত্যুযমকে টেনে আনে। আমরা ‘ফ্রান্স দর্পণ’ পত্রিকার পক্ষ থেকে কমিউনিটির কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে জানতে চেয়েছি, প্রবাসে বসবাসকারী তরুণ-যুবকদের আকস্মিক মৃত্যুর পেছনে কোন বিশেষ কারন ক্রিয়াশীল কিনা? আমরা সেগুলো তুলে ধরছি।

অধ্যাপক নয়ন এনকে যোগ করে বলেন, কাজের ক্ষেত্রেও একধরনের চাপ নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হয়। ভাষাগত দূর্বলতা, কাজের পরিধি, ধরন নিয়ে একধরনের অসন্তোষ বিরাজ করে। যে কাজ তার করার কথা নয় সেই কাজ করা, কলিগদের সাথে বনিবনা না হওয়াও একটা কারন বলে আমি মনে করি। বিশেষতঃ কর্মক্ষেত্রে স্বজাতি এবং বিজাতীয় লোকদের দ্বারা চাপের সম্মুখীন হতে হয়।

ফ্রান্সে বসবাসরত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব শাহাদাত হোসেন সাইফুল বলেন, এমন তরতাজা যুবকদের মৃত্যু আমাদের ভাবিয়ে তোলে। আমরা বাংলাদেশীরা অনেক চাপ নিয়ে প্রবাসে বসবাস করি। অনেক দুঃখ, বেদনা আমরা নিজেদের ভেতর চেপে রাখি। ফলে আমাদের এমন দুঃখজনক মৃত্যু ঘটে। তিনি বলেন, ফ্রান্সে আমাদের বাংলাদেশী অনেক ডাক্তার আছেন। তারা একটি মেসেঞ্জার বা ফেসবুক গ্রুপ খুলে পরামর্শ দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন। এটা খুব ভাল একটি কাজ হবে যদি এমন একটি গ্রুপ খুলে সমস্যাগ্রস্তদের পরামর্শ দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে।

কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করে যাওয়া সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব নয়ন এনকে জানান, এই সব পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে আমাদের সংস্থা Solidarité Asie France (SAF) একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। আমরা এই সিচুয়েশনে বসবাস করা ব্যক্তির জন্য আমরা একটি হটলাইন ব্যবস্থা চালু করবো যাতে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিরা তাদের পরিচয় গোপন রেখে সমস্যাগুলো তুলে ধরবে। আর যাকে কথাগুলো খুলে বলবে তারা পরস্পর বিশ্বাস স্থাপন করে মন খুলে কথাগুলো বলতে পারলে আমরা আশা করছি অনেকটা চাপমুক্ত হতে পারবে। আমাদের ধারনা এর ফলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু কিম্বা অসুস্থতার প্রকোপ অনেকটা কমে আসবে।

নয়ন এনকে বলেন, একজন প্রবাসী এদেশে পৌঁছানোর পরপর তাকে আশ্রয় আবেদন করার সাথে সাথেই টাকা পাওয়া শুরু করে না। এরজন্য সময় লেগে যায়, অনেকক্ষেত্রে টাকা পায়ও না। অথচ তাকে দেশে টাকা পাঠানোর কথা চিন্তা করতে হয়। কারন এদেশে আসতে তার অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে। অনেক আশা নিয়ে সে এদেশে এসেছে। ফলে তার অনেক কষ্ট হলেও একধরনের কাজ করতে হচ্ছে যা খুবই কষ্টকর। দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে নিজে কষ্ট করে, খেয়ে না খেয়ে দেশে নিজের স্বজনদের জন্য টাকা পাঠাতে বাধ্য হয়। এটি অনেক বড় চাপ তৈরি হয় যা দেশে থাকা পরিবারকে বোঝাতে সক্ষম হয় না। এই মেন্টাল প্রেশারটা নিতে না পারার কারনে স্ট্রোকের মত মারাত্বক অসুস্থতার ঝুঁকিতে পড়ে। ফলে আমরা এদেশে আসা তরুন যুবকদের অসুস্থতা এমনকী মৃত্যু ঘটতে শুনি।

ডাঃ হাবীবা জেসমিনঃ

দীর্ঘদিন ফ্রান্সে বসবাসরত এবং একটি সনামধন্য হাসপাতালে কর্মরত হাবীবা জেসমিন তার অনুভূতি জাবাতে গিয়ে লেখেনঃ

মৃত্যু, মৃত্যু আর মৃত্যু! এই ২৭ বছরের প্রবাস জীবনে এতো মৃত্যু আর দেখি নাই। মানুষ মরনশীল, জন্মিলে মরিতে হইবে, এটা চিরন্তন সত্য। তবুও কিছু মৃত্যু আমাদের ভাবায়। কারন এখানে ৫০/৬০% মৃত্যু হচ্ছে ব্রেইন স্ট্রোক অথবা হার্ট এট্যাক এ। আর এটা নিয়ে এখন আমাদের ভাববার সময় এসেছে।
তিনি জানান, প্রবাস জীবন ভীষন কষ্টের। পরিবার ছেড়ে, নিজের দেশ ছেড়ে হাজার হাজার মাইল দুরে থাকা অনেক কঠিন। এরপর অজানা, অচেনা একটি দেশে এসে শুরু হয় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই, যেখানে ভাষা আবহাওয়া সবটাই একেবারেই নতুন। মানুষ দেশ থেকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে আসে এই বিদেশে। কিন্তু এখানে আসার পরই তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়, যখন শুনে পেপার্স (রেসিডেন্ট কার্ড) ) ছাড়া এখানে কিছুই করা যাবে না। এমনকি বাইরে বের হলে ও পুলিশের হাতে ধরা পরে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা। আর পেপার্স পাওয়া সেটা পুরোটাই ভাগ্য।

এই দুশ্চিন্তা দিয়েই শুরু হয় প্রবাস জীবন। জীবন হয়ে যায় অনিশ্চিত। অনিয়ম ও শুরু হয় সেখান থেকেই। নিজের স্বাস্থ্যের দিকে তাকানোর মন বা সময় কোনটাই তার আর থাকে না। কালো কাজ করে (অনুমোদনহীন কাজ) লুকিয়ে, থাকে সর্বদা পুলিশের ভয়।এতো কিছু কিন্তু সে দেশের পরিবার পরিজন কে বোঝাতে পারে না। দেশ থেকে ভাবা হয় বিদেশে টাকা হাওয়ায় উড়ে। পরিবারের প্রথম চাপ থাকে এতো টাকা খরচ করে এসেছে সেই টাকা পরিশোধ করার চাপ, সাথে নিত্য নতুন চাহিদা। যেগুলো পূরোন না করতে পারলে দেশ থেকেও এই অভাগার জোটে গালমন্দ।
এই ভদ্রলোক একদিন হয়তো বা পেপার্স পেয়ে যায়, এরপর সে আবারও নিরাশ হয়, কারন তার কল্পনায় ছিল তার রেসিডেন্ট কার্ড পাওয়ার সাথে সাথেই সে অনেক বেতনের চাকরি করবে, অনেক কিছু তার হবে। কিন্তু সেখানে ও অনেকের হতাশ হতে হয়। কারন এখন ভাল বেতনের ভাল কাজ পাওয়া ও অনেক কঠিন।

তিনি জাবান, রেসিডেন্স পারমিট পাবার পর আবার চিন্তা দেশে পরিবার থাকলে তাদের এখানে আনা, আনতে দেরী হলে দেশ থেকে ও থাকে অনেক চাপ তাড়াতাড়ি আনার। আর ব্যাচেলর হলে তাড়াতাড়ি দেশে সুন্দর বাড়ি ঘর বানিয়ে তারপর বিয়ে করার চাপ। এরপর পরিবার নিয়ে আসলে তখন স্বপ্নভঙ্গ হয় এখানে আসা পরিবারের লোকজনের, আর যারা দেশে থেকে যায় তাদের ও। কারন তারা বিদেশী টাকায় অলরেডি বিলাস বহুল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। পরিবারের যে অংশ এখানে আসে তারা অখুশি কারন জীবন এখানে অনেক কষ্টের, আর যারা দেশে থাকে তাদের জন্য যুক্তিসঙ্গত ভাবেই টাকা পাঠানো কমে যায়, এটা দেশ থেকে মেনে নিতে পারে না। আর এই প্রবাসী ভদ্রলোক তখন না রাখতে পারে একুল না ওকুল।
এগুলো ছাড়া ও আছে অনিয়ন্ত্রিত, একঘেয়ে জীবন। নিজের দিকে, নিজের স্বাস্থ্যের দিকে অনেক প্রবাসী তাকিয়ে ও দেখেন না বা দেখার সুযোগ পান না। তারা কাজ করলেও সহজে ছুটি নেন না তাহলে বেতন কমে যাবে।

তিনি আরো যোগ করেন, আর যারা ব্যবসা করেন তাদের জীবন যাপন আর ও ভয়ংকর। তারা সপ্তাহে ৭দিনে ৭দিন কাজ করে। তাদের কোন ছুটি নাই, কোন বিনোদন নাই। তাদের অনেককে দেখলে মনে হয় এই ব্যবসাই তাদের জীবন মরণ, এর বাইরে আর কিছু নাই। বিনোদন বলতে তাদের জন্যে সপ্তাহে একদিন বা দুইতিন রিচ ফুড খাওয়া। এমনকি তারা ডাক্তার এর কাছে যাওয়ার সময় ও পান না। কিন্তু যে দেশে তারা থাকেন সে দেশের লোকদের দিকে তারা যদি লক্ষ্য করেন তাহলে তারা দেখবেন ফরাসীরা কখনোই সপ্তাহে ৫ দিনের বেশি কাজ করে না, প্রতি ৩ মাস পরপর ছুটি নিয়ে তারা বাইরে যায় একটু বিনোদন এর জন্যে।কারন তারা জানে জীবনের জন্যে কাজ, কাজের জন্য জীবন না।

এতক্ষণ আমি লিখলাম একজন শুধুমাত্র এই সমাজের মানুষ হিসেবে, অবশেষে ডাক্তার হিসাবে কয়েকটি কথা বলতে চাই। এই যে অকাল মৃত্যু এর পিছনে আছে ডায়াবেটিস, হাই ব্লাডপ্রেসার, হৃদরোগ ইত্যাদি। এগুলো থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত জীবন ব্যবস্থা, অতিরিক্ত চাপ না নেওয়া। জীবনকে উপভোগ যার যার সামর্থ অনুযায়ী। আমরা এই দুনিয়াতে একবারের জন্যই এসেছি, আর আসা হবে না। আর যাদের এই রোগগুলি অলরেডি আছে তাদের উচিত রেগুলার চেক আপ করা। ঔষধ ঠিকমতো খাওয়া আর যতটা পারা যায় চাপহীন জীবন যাপন করা। রেগুলার একটু ব্যায়াম করা, তা না পারলে ও ঘন্টা খানেক হাঁটা।
এতো করে এতো ভেবে যে মৃত্যুর দিকে অনেকটা নিজেই নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন তাহলে এটাও ভাবেন আপনি না থাকলে আপনার এই রেখে যাওয়া পরিবারের কি অবস্থা হবে?

ফেসবুক স্টাটাসে জিলাল আহমদ নামে ফ্রান্সপ্রবাসী একজন তার টাইমলাইনে লেখেন, ফ্রান্স প্রবাসী কুলাউড়া নিবাসী আমাদের সকলের পরিচিত মুখ নাজিম উদ্দিন ভাই আমাদের মাঝে আর নেই গতো কাল রাতে স্ট্রোক করে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।

উল্লেখ্য যে, ইদানীং নাজিম ভাইদের মতো অনেক ভাই অনেক কষ্ট করে ১৫/১৬ লক্ষ টাকা রিনের চাপ নিয়ে নতুন স্বপ্ন গড়ার লক্ষ্যে ইউরোপে পাড়ি জমান কিন্ত আসার পরেই আরো বড় সমস্যা দেখা দেয়া বৈধ্যতা সাথে সাথে না থাকায় কাজ খুঁজে বের করা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়। অন্যদিকে নিজের বাসা বাড়া থাকা খাওয়ার পয়সা জোগান দেয়াও অনেক বেশি কষ্টের। তাছাড়া মা বাবার শেষ সম্পদ বিক্রি করে ইউরোপে আসা দেশে মা বাবা ভাই বোনদের লেখা পড়ার জোগান দেয়া সব মিলিয়ে একটা মানুষ আপনা আপনিই নিজের সব কিছু হারিয়ে ফেলে। এই গুলির পেছনে আমাদের একটি দুর্বলতা আছে আমাদের মধ্যেই। আমরা ভালো কোনো কমিটমেন্ট গড়ে তুলতে পারিনা আমরা কে হবো সভাপতি কে হবো সেক্রেটারী কে কোনটা নেত্রীত্ব দিবো এ নিয়েই বছরের পর বছর চলে যায়, অকালেই ঝরে যায় দেশ থেকে আসা নতুন নাজিমরা।

সুতরাং আমাদের একটা ভালো সংগঠন থাকলেই, তাদেরকে পেছন থেকে একটু সার্পোট দিলেই কিন্ত নাজিমদের স্বপ্ন গুলি পরিপূর্ণ হতো।রেমিটেন্স যুদ্ধারা না ফেরার দেশে চলে যেতো না।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

লক ডাউন পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফ্রান্সে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি

যুক্তরাজ্যে করোনার মধ্যেই শিশুদের মাঝে নতুন রোগের হানা

প্যারিসে সাংবাদিকদের নতুন সংগঠনট “ফ্রান্স বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন”

প্যারিসে এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিন তরুণ প্রবাসীর মৃত্যু, শোক-স্তব্ধ কমিউনিটি

আপডেট সময় ১০:২৭:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল ২০২২

নজমুল কবির ঃফ্রান্সে প্রবাসী তরুন বাংলাদেশীদের মৃত্যুর খবর ঘন ঘন আসছে। মার্চ মাসের শেষ লগ্নে পর পর ৩ টি ও এপ্রিলের শুরুতে ১টি মৃত্যুর খবরে কমিউনিটির ভেতর শোক-বিহ্বলতা জেঁকে বসেছে। একটি মৃত্যু সংবাদে ‘ইন্না-লিল্লাহ…,’ পড়তে না পড়তেই আবার একটি মৃত্যু সংবাদের ধাক্কা। আবার সেটি সামলাতে না সামলাতেই আবার একটি মৃত্যু সংবাদ! কী এক দুঃসহ বিধ্বস্ত অনুভূতি।

সাইফুর রহমান বিপুল, আবুল মুকিত, নাজিম উদ্দীন। কেউ মধ্য বয়সী, কেউ অল্প বয়সী। একেবারে তরতাজা, তরুন। মৃত্যুর কী অদ্ভুত এবং রহস্যঘেরা সিডিউল! কাকে কখন ডাক দেবে কেউ জানিনা!

মার্চ মাসের ২৫ তারিখ ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটিকে হতবিহবল এবং স্তব্ধ করে দেয় দুটো মৃত্যু সংবাদ। কমিউনিটির প্রিয়মুখ মুকিত আর বিপুল। একই দিনে অর্থাৎ ২৫ মার্চ তাদের মৃত্যু হয়। ৫ দিনের ব্যবধানে ৩০ মার্চ নাজিম উদ্দীন নামে আরো এক যুবকের মৃত্যুসংবাদ কমিউনিটির ভেতর আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।

মাথার টিউমার কেড়ে নিলো ফেনীর বিপুলকেঃ
ফেনী জেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের অত্যন্ত পরিচিত মুখ সাইফুর রহমান বিপুল। সদা হাস্যোজ্জল, চিরসবুজ ভদ্র, নম্র এবং সদালাপি হিসেবেই কমিউনিটিতে তার ব্যপক পরিচিতি।

কিছুদিন আগে তার মাথায় একটি টিউমার সনাক্ত হয়। চিকিৎসকরা নানা পরীক্ষা শেষে গত ২৩ মার্চ বুধবার সাইফুর রহমান বিপুলের মাথায় টিউমার অপসারণের লক্ষ্যে অস্ত্রপোচার করা হয়। এরপর সে কোমায় চলে গেলে তাকে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে রাখা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৫ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যু কালে স্ত্রী ও দুই সন্তান সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।

দক্ষ সংগঠক আব্দুল মুকিতের আকস্মিক মৃত্যুঃ
ফ্রান্স প্রবাসী বিয়ানীবাজার উপজেলার পরিচিত মুখ, সবার প্রিয় আব্দুল মুকিত প্যারিসের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন বলে জানা যায়।

আব্দুল মুকিত (পিতা: মরহুম ময়নুল হক কটন)। তার বাড়ি মোল্লাটিকর, ছোটদেশ আদর্শ গ্রাম, বিয়ানীবাজার, সিলেট। তিনি সপরিবারে ফ্রান্সে থাকতেন।

আবদুল মুকিত ছোটদেশ প্রবাসী জনকল্যাণ ট্রাস্টের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। বিয়ানীবাজার উপজেলা সমাজকল্যাণ সমিতি, ফ্রান্স শাখার সাথেও যুক্ত ছিলেন।

সিলেটের নাজিম উদ্দীনের মৃত্যু ঘুমের মধ্যেইঃ
প্যারিসের উপকন্ঠে বাংলাদেশী অধ্যুষিত ওভারবিলিয়ে এলাকায় তাকতেন সিলেটের নাসির উদ্দীন। ২৯ মার্চ রাতে বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে পড়েন। সেই ঘুম আর ভাঙেনি। ৩০ মার্চ সকালে তার বন্ধুরা ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু এই নিদ্রা চিরনিদ্রা। ঘুমের ভেতরই স্ট্রোক করার কারনে মৃত্যুবরন করে বলে তার বাসার লোকদের মাধ্যমে জানা যায়।

এদিকে ফ্রান্স তথা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী তরুন যুবক বাংলাদেশী কেন অকাল মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করে? এটিকে অর্থাৎ মৃত্যুকে কেবল ‘অমোঘ নিয়ম’ বলে মেনে নিতে পারছে না অনেকেই। মৃত্যু অনিবার্য কিন্তু কোন না কোন অবাঞ্ছিত কারন বা তার সমষ্টি মৃত্যুযমকে টেনে আনে। আমরা ‘ফ্রান্স দর্পণ’ পত্রিকার পক্ষ থেকে কমিউনিটির কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে জানতে চেয়েছি, প্রবাসে বসবাসকারী তরুণ-যুবকদের আকস্মিক মৃত্যুর পেছনে কোন বিশেষ কারন ক্রিয়াশীল কিনা? আমরা সেগুলো তুলে ধরছি।

অধ্যাপক নয়ন এনকে যোগ করে বলেন, কাজের ক্ষেত্রেও একধরনের চাপ নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হয়। ভাষাগত দূর্বলতা, কাজের পরিধি, ধরন নিয়ে একধরনের অসন্তোষ বিরাজ করে। যে কাজ তার করার কথা নয় সেই কাজ করা, কলিগদের সাথে বনিবনা না হওয়াও একটা কারন বলে আমি মনে করি। বিশেষতঃ কর্মক্ষেত্রে স্বজাতি এবং বিজাতীয় লোকদের দ্বারা চাপের সম্মুখীন হতে হয়।

ফ্রান্সে বসবাসরত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব শাহাদাত হোসেন সাইফুল বলেন, এমন তরতাজা যুবকদের মৃত্যু আমাদের ভাবিয়ে তোলে। আমরা বাংলাদেশীরা অনেক চাপ নিয়ে প্রবাসে বসবাস করি। অনেক দুঃখ, বেদনা আমরা নিজেদের ভেতর চেপে রাখি। ফলে আমাদের এমন দুঃখজনক মৃত্যু ঘটে। তিনি বলেন, ফ্রান্সে আমাদের বাংলাদেশী অনেক ডাক্তার আছেন। তারা একটি মেসেঞ্জার বা ফেসবুক গ্রুপ খুলে পরামর্শ দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন। এটা খুব ভাল একটি কাজ হবে যদি এমন একটি গ্রুপ খুলে সমস্যাগ্রস্তদের পরামর্শ দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে।

কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করে যাওয়া সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব নয়ন এনকে জানান, এই সব পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে আমাদের সংস্থা Solidarité Asie France (SAF) একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। আমরা এই সিচুয়েশনে বসবাস করা ব্যক্তির জন্য আমরা একটি হটলাইন ব্যবস্থা চালু করবো যাতে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিরা তাদের পরিচয় গোপন রেখে সমস্যাগুলো তুলে ধরবে। আর যাকে কথাগুলো খুলে বলবে তারা পরস্পর বিশ্বাস স্থাপন করে মন খুলে কথাগুলো বলতে পারলে আমরা আশা করছি অনেকটা চাপমুক্ত হতে পারবে। আমাদের ধারনা এর ফলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু কিম্বা অসুস্থতার প্রকোপ অনেকটা কমে আসবে।

নয়ন এনকে বলেন, একজন প্রবাসী এদেশে পৌঁছানোর পরপর তাকে আশ্রয় আবেদন করার সাথে সাথেই টাকা পাওয়া শুরু করে না। এরজন্য সময় লেগে যায়, অনেকক্ষেত্রে টাকা পায়ও না। অথচ তাকে দেশে টাকা পাঠানোর কথা চিন্তা করতে হয়। কারন এদেশে আসতে তার অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে। অনেক আশা নিয়ে সে এদেশে এসেছে। ফলে তার অনেক কষ্ট হলেও একধরনের কাজ করতে হচ্ছে যা খুবই কষ্টকর। দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে নিজে কষ্ট করে, খেয়ে না খেয়ে দেশে নিজের স্বজনদের জন্য টাকা পাঠাতে বাধ্য হয়। এটি অনেক বড় চাপ তৈরি হয় যা দেশে থাকা পরিবারকে বোঝাতে সক্ষম হয় না। এই মেন্টাল প্রেশারটা নিতে না পারার কারনে স্ট্রোকের মত মারাত্বক অসুস্থতার ঝুঁকিতে পড়ে। ফলে আমরা এদেশে আসা তরুন যুবকদের অসুস্থতা এমনকী মৃত্যু ঘটতে শুনি।

ডাঃ হাবীবা জেসমিনঃ

দীর্ঘদিন ফ্রান্সে বসবাসরত এবং একটি সনামধন্য হাসপাতালে কর্মরত হাবীবা জেসমিন তার অনুভূতি জাবাতে গিয়ে লেখেনঃ

মৃত্যু, মৃত্যু আর মৃত্যু! এই ২৭ বছরের প্রবাস জীবনে এতো মৃত্যু আর দেখি নাই। মানুষ মরনশীল, জন্মিলে মরিতে হইবে, এটা চিরন্তন সত্য। তবুও কিছু মৃত্যু আমাদের ভাবায়। কারন এখানে ৫০/৬০% মৃত্যু হচ্ছে ব্রেইন স্ট্রোক অথবা হার্ট এট্যাক এ। আর এটা নিয়ে এখন আমাদের ভাববার সময় এসেছে।
তিনি জানান, প্রবাস জীবন ভীষন কষ্টের। পরিবার ছেড়ে, নিজের দেশ ছেড়ে হাজার হাজার মাইল দুরে থাকা অনেক কঠিন। এরপর অজানা, অচেনা একটি দেশে এসে শুরু হয় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই, যেখানে ভাষা আবহাওয়া সবটাই একেবারেই নতুন। মানুষ দেশ থেকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে আসে এই বিদেশে। কিন্তু এখানে আসার পরই তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়, যখন শুনে পেপার্স (রেসিডেন্ট কার্ড) ) ছাড়া এখানে কিছুই করা যাবে না। এমনকি বাইরে বের হলে ও পুলিশের হাতে ধরা পরে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা। আর পেপার্স পাওয়া সেটা পুরোটাই ভাগ্য।

এই দুশ্চিন্তা দিয়েই শুরু হয় প্রবাস জীবন। জীবন হয়ে যায় অনিশ্চিত। অনিয়ম ও শুরু হয় সেখান থেকেই। নিজের স্বাস্থ্যের দিকে তাকানোর মন বা সময় কোনটাই তার আর থাকে না। কালো কাজ করে (অনুমোদনহীন কাজ) লুকিয়ে, থাকে সর্বদা পুলিশের ভয়।এতো কিছু কিন্তু সে দেশের পরিবার পরিজন কে বোঝাতে পারে না। দেশ থেকে ভাবা হয় বিদেশে টাকা হাওয়ায় উড়ে। পরিবারের প্রথম চাপ থাকে এতো টাকা খরচ করে এসেছে সেই টাকা পরিশোধ করার চাপ, সাথে নিত্য নতুন চাহিদা। যেগুলো পূরোন না করতে পারলে দেশ থেকেও এই অভাগার জোটে গালমন্দ।
এই ভদ্রলোক একদিন হয়তো বা পেপার্স পেয়ে যায়, এরপর সে আবারও নিরাশ হয়, কারন তার কল্পনায় ছিল তার রেসিডেন্ট কার্ড পাওয়ার সাথে সাথেই সে অনেক বেতনের চাকরি করবে, অনেক কিছু তার হবে। কিন্তু সেখানে ও অনেকের হতাশ হতে হয়। কারন এখন ভাল বেতনের ভাল কাজ পাওয়া ও অনেক কঠিন।

তিনি জাবান, রেসিডেন্স পারমিট পাবার পর আবার চিন্তা দেশে পরিবার থাকলে তাদের এখানে আনা, আনতে দেরী হলে দেশ থেকে ও থাকে অনেক চাপ তাড়াতাড়ি আনার। আর ব্যাচেলর হলে তাড়াতাড়ি দেশে সুন্দর বাড়ি ঘর বানিয়ে তারপর বিয়ে করার চাপ। এরপর পরিবার নিয়ে আসলে তখন স্বপ্নভঙ্গ হয় এখানে আসা পরিবারের লোকজনের, আর যারা দেশে থেকে যায় তাদের ও। কারন তারা বিদেশী টাকায় অলরেডি বিলাস বহুল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। পরিবারের যে অংশ এখানে আসে তারা অখুশি কারন জীবন এখানে অনেক কষ্টের, আর যারা দেশে থাকে তাদের জন্য যুক্তিসঙ্গত ভাবেই টাকা পাঠানো কমে যায়, এটা দেশ থেকে মেনে নিতে পারে না। আর এই প্রবাসী ভদ্রলোক তখন না রাখতে পারে একুল না ওকুল।
এগুলো ছাড়া ও আছে অনিয়ন্ত্রিত, একঘেয়ে জীবন। নিজের দিকে, নিজের স্বাস্থ্যের দিকে অনেক প্রবাসী তাকিয়ে ও দেখেন না বা দেখার সুযোগ পান না। তারা কাজ করলেও সহজে ছুটি নেন না তাহলে বেতন কমে যাবে।

তিনি আরো যোগ করেন, আর যারা ব্যবসা করেন তাদের জীবন যাপন আর ও ভয়ংকর। তারা সপ্তাহে ৭দিনে ৭দিন কাজ করে। তাদের কোন ছুটি নাই, কোন বিনোদন নাই। তাদের অনেককে দেখলে মনে হয় এই ব্যবসাই তাদের জীবন মরণ, এর বাইরে আর কিছু নাই। বিনোদন বলতে তাদের জন্যে সপ্তাহে একদিন বা দুইতিন রিচ ফুড খাওয়া। এমনকি তারা ডাক্তার এর কাছে যাওয়ার সময় ও পান না। কিন্তু যে দেশে তারা থাকেন সে দেশের লোকদের দিকে তারা যদি লক্ষ্য করেন তাহলে তারা দেখবেন ফরাসীরা কখনোই সপ্তাহে ৫ দিনের বেশি কাজ করে না, প্রতি ৩ মাস পরপর ছুটি নিয়ে তারা বাইরে যায় একটু বিনোদন এর জন্যে।কারন তারা জানে জীবনের জন্যে কাজ, কাজের জন্য জীবন না।

এতক্ষণ আমি লিখলাম একজন শুধুমাত্র এই সমাজের মানুষ হিসেবে, অবশেষে ডাক্তার হিসাবে কয়েকটি কথা বলতে চাই। এই যে অকাল মৃত্যু এর পিছনে আছে ডায়াবেটিস, হাই ব্লাডপ্রেসার, হৃদরোগ ইত্যাদি। এগুলো থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত জীবন ব্যবস্থা, অতিরিক্ত চাপ না নেওয়া। জীবনকে উপভোগ যার যার সামর্থ অনুযায়ী। আমরা এই দুনিয়াতে একবারের জন্যই এসেছি, আর আসা হবে না। আর যাদের এই রোগগুলি অলরেডি আছে তাদের উচিত রেগুলার চেক আপ করা। ঔষধ ঠিকমতো খাওয়া আর যতটা পারা যায় চাপহীন জীবন যাপন করা। রেগুলার একটু ব্যায়াম করা, তা না পারলে ও ঘন্টা খানেক হাঁটা।
এতো করে এতো ভেবে যে মৃত্যুর দিকে অনেকটা নিজেই নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন তাহলে এটাও ভাবেন আপনি না থাকলে আপনার এই রেখে যাওয়া পরিবারের কি অবস্থা হবে?

ফেসবুক স্টাটাসে জিলাল আহমদ নামে ফ্রান্সপ্রবাসী একজন তার টাইমলাইনে লেখেন, ফ্রান্স প্রবাসী কুলাউড়া নিবাসী আমাদের সকলের পরিচিত মুখ নাজিম উদ্দিন ভাই আমাদের মাঝে আর নেই গতো কাল রাতে স্ট্রোক করে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।

উল্লেখ্য যে, ইদানীং নাজিম ভাইদের মতো অনেক ভাই অনেক কষ্ট করে ১৫/১৬ লক্ষ টাকা রিনের চাপ নিয়ে নতুন স্বপ্ন গড়ার লক্ষ্যে ইউরোপে পাড়ি জমান কিন্ত আসার পরেই আরো বড় সমস্যা দেখা দেয়া বৈধ্যতা সাথে সাথে না থাকায় কাজ খুঁজে বের করা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়। অন্যদিকে নিজের বাসা বাড়া থাকা খাওয়ার পয়সা জোগান দেয়াও অনেক বেশি কষ্টের। তাছাড়া মা বাবার শেষ সম্পদ বিক্রি করে ইউরোপে আসা দেশে মা বাবা ভাই বোনদের লেখা পড়ার জোগান দেয়া সব মিলিয়ে একটা মানুষ আপনা আপনিই নিজের সব কিছু হারিয়ে ফেলে। এই গুলির পেছনে আমাদের একটি দুর্বলতা আছে আমাদের মধ্যেই। আমরা ভালো কোনো কমিটমেন্ট গড়ে তুলতে পারিনা আমরা কে হবো সভাপতি কে হবো সেক্রেটারী কে কোনটা নেত্রীত্ব দিবো এ নিয়েই বছরের পর বছর চলে যায়, অকালেই ঝরে যায় দেশ থেকে আসা নতুন নাজিমরা।

সুতরাং আমাদের একটা ভালো সংগঠন থাকলেই, তাদেরকে পেছন থেকে একটু সার্পোট দিলেই কিন্ত নাজিমদের স্বপ্ন গুলি পরিপূর্ণ হতো।রেমিটেন্স যুদ্ধারা না ফেরার দেশে চলে যেতো না।