দর্পণ ডেস্ক: – বুধবার, ১৬ জুলাই শহিদ আবু সাঈদেরপ্রথম শাহাদাতবার্ষিকী ও জুলাই শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে দেশের জন্যজীবন উৎসর্গকারী সকল শহিদ স্মরণে এবং আহতদের সুস্থতাকামনায় এক বিশেষ দোয়া মাহফিল ও অসহায় হতদরিদ্র, ভিখারী, ছিন্নমূল মানুষের মাঝে ঢাকায় ও রংপুরে আড়াই হাজার প্যাকেট রান্নাকরা খাবার বিতরণ করেছেন “অখণ্ড বাংলাদেশ আন্দোলন” এরছাত্র সংগঠন “অখণ্ড বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন” এর সদস্যরা।
গভীর আবেগঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে উপস্থিত সকলেশ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন সেইসব বীর শহিদদের, যারা সকলঅন্যায়–অবিচারের বিরুদ্ধে যুগে যুগে গর্জে উঠে রক্ত ঝরিয়েছেন।মোনাজাতের মাধ্যমে সংগঠনের প্রথম শহিদ আবরার ফাহাদ এবংসংগঠনের দ্বিতীয় ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহিদ আবুসাঈদসহ সকল শহিদ ও আহত সকলের জন্য দোয়া এবং দেশেরকল্যাণ কামনা করা হয়। পাশাপাশি দেশের স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্রেরসুরক্ষা এবং সমগ্র জাতির শান্তি ও কল্যাণে বিশেষ মোনাজাত করাহয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি এক হৃদয়বিদারক আবহে সম্পন্ন হয়, যাউপস্থিত সকলকে আলোড়িত করে।
২০১৯ সালের ২৬ মার্চ বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে আহবায়কও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে থাকা রংপুর সরকারি কলেজেরপ্রাক্তন শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে সদস্য সচিব করে সংগঠনটি যাত্রাশুরু করে। শহিদ আবু সাঈদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যেসংগঠনের সদস্যরা শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর শোকের মধ্য দিয়ে সকালেফুল হাতে শহিদ আবু সাঈদের কবরের কাছে যান এবং ফুল দিয়ে শ্রদ্ধানিবেদন শেষে কবর জিয়ারত করেন। আবু সাঈদের স্মৃতিচারণ করেসংগঠনের সদস্যরা বলেন, “সাঈদ ভাইয়ের কতটা শূন্যতা অনুভবকরি, তা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। দুই হাত দুই দিকে টান করে বুকচিতিয়ে দেওয়া সাঈদ ভাইকে কাছ থেকে যেভাবে গুলি করে হত্যা করাহয়েছে, সেই দৃশ্য মনে হলে আজও নিস্তব্ধ ও নির্বাক হয়ে যাই।অর্থসংকট থাকায় সাঈদ ভাই প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্তদু’টি টিউশনি করতেন। প্রতিটি মিছিল–মিটিং তিনি অসাধারণ ওবলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে সুচারুরূপে সংগঠিত করতেন। অসাধারণআত্মবিশ্বাস নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ বক্তৃতা দিয়ে তিনি সকলকে উজ্জ্বীবিতকরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সফল করতে সাহসযোগাতেন। বিপদ–আপদে সবসময় তিনি সবার পাশে থাকতেন। যেকোনো বিষয়ে সাহায্য সহযোগিতায় তিনি এগিয়ে আসতেন। তিনিছিলেন এক আলোকবর্তিকা। বুলেটের সামনে তিনি বুক পেতেদিয়েছিলেন। এই জাতি সারাজীবন তাঁকে মনে রাখবে।’ এ সময়শোকে ভারি হয়ে ওঠে গোটা পরিবেশ। কবর জিয়ারত শেষে ছা্ত্রদেরবিভিন্ন শ্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে পুরো এলাকা।
এদিকে বাংলাদেশের মাটিতে শহিদ আবু সাঈদের আত্মত্যাগ ম্লানহতে না দেওয়ার অঙ্গীকার করা সংগঠনের সদস্যরা ঢাকায় তুমুল বৃষ্টিউপেক্ষা করে এক শোক র্যালি বের করেন। শোক র্যালি থেকেতাঁরা শহিদ আবু সাঈদের প্রতি সন্মান প্রদর্শনে দেশের সাহসীদেরমানুষদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে “আবু সাঈদ সাহসিকতা পুরস্কার” চালুকরার দাবি করেন। সেইসাথে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে শহিদ আবুসাঈদের নামে একটি হলের নামকরণের দাবি করেন।
সংগঠনের সদস্যরা বলেন, “বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন শুধুমাত্রএকটা চাকরীর জন্য আন্দোলন ছিলো না। আপনারা এরশ্লোগানগুলো খেয়াল করলে দেখবেন, এই আন্দোলন ছিলো দেশেবিরাজমান সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন, দিল্লির গোলামী থেকেমুক্তির আন্দোলন, দেশের জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়েদেওয়ার আন্দোলন, দেশের নাগরিকদের সমমর্যাদার আন্দোলন, নিজের দেশে তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে বাঁচতে না চাওয়ারআন্দোলন, কল্যাণবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীনরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েমের আন্দোলন, এবংগণতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের সমাজ ওসংস্কৃতি বিনির্মাণের আন্দোলন। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিতগণঅভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক গভীর ক্ষতচিহ্ন রেখেগেছে। আমরা চাই না, আর কখনো এমন মর্মান্তিক অধ্যায়েরপুনরাবৃত্তি হোক। আমাদের লক্ষ্য একটি ন্যায়ভিত্তিক, বৈষম্যহীন ওমানবিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে সকল নাগরিকের অধিকারসুরক্ষিত থাকবে। শহিদদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়—এইদায়বোধ থেকে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ অখণ্ডবাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করব।”
সংগঠনের সদস্যরা আরো বলেন, “অখণ্ড বাংলাদেশ আন্দোলন”এর প্রধান হাসনাত আরিয়ান খানের নির্দেশেই তাঁরা তাদের সকলইউনিট নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আজকের এইদিনেউত্তরবঙ্গের গর্বিত সন্তান শহিদ আবু সাঈদ নিজের জীবন দিয়েফ্যাসিবাদীদের মসনদে প্রথম পেরেক মেরেছিলেন। দিল্লির তাবেদারসরকারের পলায়নের মাধ্যমে ইন্ডিয়ান আধিপত্যবাদ দূর হয়েছে। এইদেশের মানুষ আর ইন্ডিয়ার তাঁবেদার কোন সরকারকে রাষ্ট্রক্ষমতায়দেখতে চায় না। দেশ এখন মুক্ত স্বাদ গ্রহণ করছে। ২৪ এরগণঅভ্যুত্থানের শহিদরা রক্ত দিয়ে দেশকে ইন্ডিয়ার আধিপত্যবাদমুক্ত করে আত্মত্যাগ ও সাহসিকতার এক অনন্য নজির সৃষ্টিকরেছেন। আবু সাঈদের মত শহিদেরা প্রতিদিন জন্মান না। তাঁরাক্ষণজন্মা। কালে কালে জাতির মুক্তির জন্য তাঁরা একজন করেইজন্মান। নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে যাঁরা জাতিকে উদ্ধার করেন, তাঁরা সাধারণ কোনো মানুষ নন। আমরা মনে করি, তাঁদেরমহাকাব্যিক বীরত্বগাথা জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে মনে রাখবে। শহিদআবু সাঈদের আত্মত্যাগ আমাদের উজ্জ্বীবিত করেছে। আমরাসাক্ষাৎ মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই আন্দোলনে শরীক থাকি। আবু সাঈদেরদেখানো পথে আমরা সাহসিকতার সাথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।আমরা রাজপথ ছাড়িনি।