নজমুল কবির : বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের সময়ের সাথে সমন্বয় করে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস ২০ ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কোতে একটি বিশাল কলেবরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই বছরের দিবসটির উদযাপন শুরু করে । এ বছর দিবসটির মুল প্রতিপাদ্য ছিল Safeguarding Indigenous Languages for Promoting Multilingualism through Transforming Education যার মাধ্যমে জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত International Decade of Indigenous Language এর প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
স্বাগত বক্তব্যে ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত ও ইউনেস্কোতে স্থায়ী প্রতিনিধি খন্দকার তালহা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ সকল ভাষা আন্দোলনকারীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন যে, মাতৃভাষার বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের ইতিহাস অত্যন্ত আবেগঘন। বাংলাদেশের উদ্যোগে ১৯৯৯ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষনা করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৮০ টি কূটনৈতিক মিশন যারা বিশ্বে স্থানীয় কমিউনিটিকে সাথে নিয়ে এ দিবসটি উদযাপনের মাধ্যমে মাতৃভাষার গুরুত্বকে তুলে ধরে আসছেন। প্রতি ৪০ দিনে বিশ্বের একটি ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্বের ৪০ শতাংশ শিশু এখনো তাঁদের মাতৃভাষায় লেখাপড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এ বিষয়ে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তৎপর ও কার্যকরী ভূমিকা রাখার আহবান জানান। রাষ্ট্রদূত এবং ইউনেস্কোর স্থায়ী প্রতিনিধি খোন্দকার তালহা অনুষ্ঠানশেষে সাংবাদিকদের সাথে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় জানান, প্যারিসে একটি স্থায়ী শহীদমিনার স্থাপনের চেষ্টা চলছে। এটি হয়ে গেলে আমরা কমিউনিটির সকলকে নিয়ে দিনটি উদযাপন করতে পারবো। তিনি বলেন, কেউ কেউ আছেন দূতাবাস এবং কমিউনিটির মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করতে চান। দূতাবাস কমিউনিটির প্রতিপক্ষ নয়।
১২ টি দেশের শিল্পী ও কলাকুশলীদের অংশগ্রহণে আয়োজিত মনমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনেস্কো’র শিক্ষা বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং সহকারী মহাপরিচালক স্টেফানিয়া জিয়ান্নিনি।
অনুষ্ঠানে ইউনেস্কো সাধারণ পরিষদ এবং নির্বাহী পরিষদের সভাপতিগণ, হাইতির শিক্ষামন্ত্রী এবং বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রসমূহের স্থায়ী প্রতিনিধিগণ সহ বিভিন্ন পর্যায়ের কূটনৈতিকগণ অংশগ্রহণ করেন। প্যারিসে বসবাসরত বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ এই সাংস্কৃতিক আয়োজন উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল, উজবেকিস্তান, শ্রীলংকা, সার্বিয়া, আজারবাইজান, ইউক্রেন, ইন্দোনেশিয়া ও সৌদি আরবের শিল্পীগণ তাদের বৈচিত্রময় পরিবেশনায় উপস্থিত দর্শকদের মাতিয়ে তোলে। এছাড়াও, এই অনুষ্ঠানে ‘বহুভাষাবাদ’ এবং ‘ভাষার প্রতি ভালবাসা’ প্রতিপাদ্যের উপর দূতাবাস নির্মিত একটি অংশগ্রহণমূলক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় যেখানে ইউনেস্কোতে নিযুক্ত ৩৩টি দেশের রাষ্ট্রদূত তাদের নিজ নিজ ভাষার প্রতি ভালবাসা ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ দূতাবাসের সার্বিক পরিকল্পনায় এবারে ফ্রান্সপ্রবাসী নানাস্তরের মানুষের উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়। উপস্থিত প্রায় চার শতাধিক অতিথি বাংলাদেশ দূতাবাসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আয়োজিত অনুষ্ঠানটির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ফ্রান্সে বসবাসরত নানাস্তরের মানুষকে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর ফলে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী উপস্থিত হয়। ইউনেস্কো সদরদপ্তরটি আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। উপস্থিত সকলেই দূতাবাসের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। ভবিষ্যতের আয়োজনগুলোতেও যেন সার্বজনীন উদ্যোগটি থাকে সেটির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।