বাংলাদেশি শেফদের ব্রিটেনে পাড়ি দেওয়ার সুযোগ আবারও উন্মুক্ত হচ্ছে। ব্রিটেনে বাংলাদেশি কারি শিল্পের স্টাফ সংকট নিরসনে নতুন ভিসা চালুর ঘোষনা দিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল। বিন্দালু ভিসা নামে এ প্রস্তাবিত এ ওয়ার্ক পারমিট ভিসাতে বর্তমানে চালু থাকা বহু শর্ত সহজ ও শিথিলের প্রস্তাব দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বলেছেন, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পর ব্রিটেনে নতুন পয়েন্ট ভিত্তিক ভিসা ব্যবস্থা চালুর আগে রেষ্টুরেন্ট শিল্পে সহজ শর্তে দক্ষ জনশক্তি আনার সুযোগ দেবে ব্রিটিশ সরকার।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দক্ষ শেফ ও কর্মীর অভাবে ব্রিটেনে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বহু রেস্টুরেন্ট। এসব রেস্টুরেন্টের শতকরা ৯৫ শতাংশই বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন আর কর্মীরাও শতভাগ বাংলাদেশি।
নতুন ভিসা ব্যবস্থা নিয়ে নিজের প্রস্তাবনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বলেন, নতুন বিন্দালু ভিসায় সাধারণ ওয়ার্ক পারমিটের ক্ষেত্রে চালু থাকা ৩৫ হাজার ৮০০ পাউন্ডের আয়সীমার শর্ত পূরণ করার প্রয়োজন পড়বে না। ফলে এটি কার্যকর হলে দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে জনশক্তি আসার পথ নতুন করে উন্মুক্ত হবে বলে ধারণা করছেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী, বিভিন্ন ক্যাটারার্স সংগঠনের নেতারা।
ব্রিটেনে বাংলাদেশি কারি শিল্পের বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএ) সভাপতি এম এ মুনিম বলেন, ‘বিন্দালু ভিসা চালুর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি ব্রিটেনে আসার সুযোগ তৈরি হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। বিসিএ এরকম একটি প্রক্রিয়া চালুর জন্য দীর্ঘদিন ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে লবিং করে আসছে’।
সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ব্রিটেনে বসবাস করা বাংলাদেশির সংখ্যা লক্ষাধিক। ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ক্ষমতায় এসেই বৈধ কাগজপত্র ছাড়া সেখানে অবস্থানরত ৫ লাখ অভিবাসীকে বৈধতা দেওয়ার বিষয়টি দ্রুত বিবেচনার ঘোষণা দিয়েছেন। ব্রেক্সিট পরবর্তী পরিস্থিতিতে তাদের বৈধতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। অনেকেই ধারণা করেছেন, নতুন জনশক্তি না এনে পুরনোদের বৈধতা দিলে লাভবান হবে ব্রিটিশ অর্থনীতি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নতুন ভিসা ব্যবস্থা চালুর ঘোষণার ফলে প্রধানমন্ত্রীর আগের ঘোষণাটি নিছক রাজনৈতিক আশ্বাস কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রিটেনের অর্থনীতি এখন এমন অবস্থায় নেই যে নতুন জনশক্তি আনার সঙ্গে সঙ্গে তারা একসঙ্গে পাঁচ লাখ মানুষকে বৈধতা দেবে।
এ বিষয়ে বুধবার অভিবাসন আইনজীবী বিপ্লব কুমার পোদ্দার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ব্রেক্সিট ইস্যুতে ব্রিটেনের রাজনীতি, অর্থনীতি এখন টালমাটাল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নতুন ভিসার রূপরেখা ঘোষণা দিলেও ব্রেক্সিট ইস্যুতে এ সরকার আদৌ কতদিন ক্ষমতায় থাকবে, কোন ধরনের ব্রেক্সিট কবে বাস্তবায়ন হবে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
প্রসঙ্গত, ডেভিট ক্যামেরনের মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ব্রিটেনের অভিবাসন নীতিতে স্মরণকালের সবচেয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেন থেরেসা মে। এ কারণে গত দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ব্রিটেনে অভিবাসনের হার নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়।
বাংলা ট্রিবিউন