দুই কুর্দি সংগঠন পিওয়াইডি (ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন পার্টি) ও ওয়াইপিজি’র (গেরিলা সংগঠন পিপলস ডিফেন্স ইউনিট) প্রতিনিধিদের সঙ্গে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাক্ষাতের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে তুরস্ক। দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান দাবি করেছেন, কুর্দিদের বিষয়ে সম্পূর্ণ ভুল অবস্থান নিয়েছে। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। আর তুর্কি উপপ্রধানমন্ত্রী ও সরকারের মুখপাত্র বলেছেন, তুরস্কের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দিচ্ছে ফ্রান্স। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি ও ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ফরাসি প্রেসিডেন্টের দফতর এলিসি প্রাসাদের দেওয়া বিবৃতির সূত্রে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুর্দি-নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সের (এসডিএফ) সঙ্গে দেখা করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। আইএসবিরোধী যুদ্ধে পিওয়াইডি ও ওয়াইপিজিকে এসডিএফ নামে ডাকে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা। এসডিএফ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর উত্তরাঞ্চলীয় সিরিয়ায় কুর্দি বিদ্রোহীদের সঙ্গে তুরস্কের চলমান সংঘাত নিরসনে ভূমিকা রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। তবে সংগঠন দুটিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে দীর্ঘদিন তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে আঙ্কারা।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর তুরস্কের ডেপুটি বোজদাগ টুইটারে লেখেন, এই বৈঠকের আসল মানে হলো সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য সমর্থন; সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে বৈধ করার একটি প্রচেষ্টা; এবং তুরস্ককে আক্রমণকারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পরিস্কার সহযোগিতা ও সংহতি।
সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াইয়ে তুরস্ক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ জানিয়ে তিনি বলেন, এই ধরণের গোষ্ঠীর সঙ্গে যারা বন্ধুত্ব দৃঢ় করবে তুরস্কের বন্ধুত্ব হারাবে তারা।
পিওয়াইডি ও ওয়াইপিজিকে কুর্দি স্বাধীনতাপন্থি সংগঠন কুর্দিস্থান ওয়ার্কাস পাটির (পিকেকে) সিরীয় শাখা হিসেবে বিবেচনা করে তুরস্ক। গত ৩০ বছরে পিকেকের সঙ্গে তুরস্কের যুদ্ধে ৪০ হাজার নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে বলে দাবি করে থাকে আঙ্কারা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আঙ্কার সতর্কতা দিয়ে রেখেছে পিওয়াইডি/পিকেকে, ওয়াইপিজি/পিকেকে এবং এসডিএফ/পিকেকে আসলে ভিন্ন ভিন্ন নামে পিকেকের পরিচালিত সংগঠন।
কুর্দিদের সঙ্গে বৈঠকের পর ফরাসি প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ম্যাক্রোঁ আইএসবিরোধী যুদ্ধে এসডিএফ-এর আত্মত্যাগ আর দায়িত্বশীল ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। ফ্রান্স সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইএসের ধারাবাহিক হামলার শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৫ সালে প্যারিসে আইএসের হামলায় প্রাণহানি হয় ১৩০ জনের।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মার্কিন সমর্থিত কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ওয়াইপিজিকে হটানোর লক্ষ্যে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ আফরিনে সেনা অভিযান শুরু করে তুরস্ক ও এফএসএ। গত ২০ জানুয়ারি ‘অপারেশন অলিভ ব্রাঞ্চ’ নামে শুরু হওয়া অভিযানে বেশ কিছু মানুষ হতাহত হয়। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ১৮ মার্চ রবিবার কুর্দি বিদ্রোহীদের কাছ থেকে শহরটির নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয় এফএসএ। রবিবার সকালেও উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এসডিএফকে সহায়তার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষুব্ধ তুরস্ক। ন্যাটোভুক্ত এই দুই মিত্র দেশের মধ্যে এ নিয়ে টানাপোড়েন চলছে কূটনৈতিক সম্পর্কে। ফ্রান্স এবার বিরোধী দুইপক্ষ তুরস্ক ও কুর্দিদের মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ নিলো। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছে তুরস্ক।