সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকলাস সারকোজি দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার হওয়ার পর তদন্তকারীদের বলেছেন, ২০০৭ সালের নির্বাচনি প্রচারণা অর্থায়নের জন্য তিনি গাদ্দাফির কাছ থেকে কোনও অর্থ গ্রহণ করেননি। লিবিয়ার ওই অসত্য দাবি তার জীবনকে দোযখ বানিয়ে ছেড়েছে। ২০১২ সালের নির্বাচনে জিততে না পারার কারণ হিসেবেও তিনি ওই অসত্য প্রচারণাকে দায়ী করেছেন। তদন্তকারীদের দুইদিন ব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদে সারকোজির জানানো তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ফরাসি সংবাদপত্র লা ফিগারো দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের বরাতে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে ১০ বছরের জেল হয়ে যেতে পারে সাবেক এই ফরাসি প্রেসিডেন্টের।
শেষে ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট থাকা ৬৩ বছর বয়সী নিকোলাস সারকোজিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তদন্তকারীরা তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে প্রশ্রয় দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে সারকোজিকে তার বিরুদ্ধে থাকা লিবিয়ার গোয়েন্দা সদস্যের সঙ্গে প্রেম, অস্ত্র বেচাকেনা, গাদ্দাফির কাছ থেকে লাখ লাখ ইউরো ভর্তি ব্যাগ নেওয়াসহ অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। অবশ্য সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন। তিনি তদন্তকারীদের বলেছেন, নির্বাচনি ব্যয় নির্বাহের জন্য গাদ্দাফির কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অসত্য অভিযোগটি শুধু যে তার রাজনৈতিক ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে তা-ই নয়; ওই মিথ্যা প্রচারণার কারণে তার জীবনটা দোযখ হয়ে গেছে।
সারকজির বক্তব্য নিয়ে ফরাসি সংবাদপত্র লা ফিগারো দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে এ বিষয়ে তারা সারকোজিকে উদ্ধৃত করেছে, ‘এর জন্য আমাকে অনেক বড় মূল্য চুকাতে হয়েছে। মাত্র ১.৫ শতাংশের জন্য ২০১২ সালের ভোটে আমাকে হেরে যেতে হয়েছে। গাদ্দাফি আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা আমার ওই ১.৫ শতাংশ ভোটে হারার জন্য দায়ী।’
২০০৭ সালে প্যারিসে গাদ্দাফিকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়েছিলেন সারকোজি। সারকোজির মতে, পরবর্তীতে গাদ্দাফি বিরোধীদের আশ্রয় দেওয়া, গাদ্দাফিকে উৎখাতে ন্যাটোর ভূমিকা রাখার বিষয়ে জোর দাবি জানানো এবং বিদ্রোহীদের হাতে গাদ্দাফির মৃত্যু হওয়ার ঘটনাই তার জন্য কাল হয়েছে। যে ফরাসি বংশোদ্ভূত লিবীয় নাগরিক নিজেকে ‘আড়ালে থাকা মধ্যস্থতাকারী’ আখ্যা দিয়ে ফরাসি ও লিবীয় গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যকার যোগসূত্র হওয়ার দাবি জানিয়েছেন, তার ভাষ্যকেও সম্পূর্ণ অসত্য আখ্যা দিয়েছেন সারকোজি।
ফরাসি এই সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে প্রথম বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছিল। এত বছর পরে শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে ‘সন্দেহভাজন’ আখ্যা দিল তদন্তকারীরা। এরকম অবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মামলা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আর তা হলে, সারকোজির দশ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।