বড় হয়ে একজন সেনা মেজর হওয়ার স্বপ্ন ছিল। পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কাজ করার স্বপ্নও দেখতেন তিনি। যদিও তা পূরণ হয়নি, একটি দুর্ঘটনা তাকে কাঁদিয়েছে বহু বছর। বলছিলাম আরিফ রহমান শিবলীর কথা। যিনি স্কুল জীবন থেকে গান, কবিতা আবৃত্তি দিয়ে দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন দেশ থেকে দেশান্তরে।
নিজেকে নিয়ে বলতে গিয়ে আরিফ রহমান শিবলী বলেন, গুরু আজম খান বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুলে পড়ার সময় এক স্টেজ শো’তে তার গান শুনে বলেছিলেন পাগল তুমি গান ছেড়ো না। পরবর্তীতে শুরুতে কাজ করার সুযোগ পান বেসরকারী টিভি চ্যানেল একুশে টিভি’র মুক্ত খবর-এ। যা বদলে দেয় তার পুরো ক্যারিয়ার।
সেই ব্যাংক স্কুলের সাবেক শিক্ষিকা ফাতেমা মমতাজ বলেন, আরিফ ছোট থেকেই সব বিষয়ে পারদর্শী। আরিফের ক্রিয়েটিভ বিষয়গুলো আমার নজরে আসার পর পরই সব শিক্ষককে আমি তাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য বলি।
এছাড়া কলেজ জীবনে কাজ করেছেন আরটিভি’র অনুষ্ঠান সহকারী হিসেবে। এরপর মাইটিভি, এটিএন বাংলা, দেশ টিভি সহ দেশের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। বর্তমানে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান কিডস মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করছে তিনি।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে অনুষ্ঠান বিভাগের পাশাপাশি সংবাদ প্রযোজনা বিভাগে কাজ করার পাশাপাশি অল্প সময়ের মধ্যে মিডিয়া জগতে বেশ পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন তিনি। তার করা দেশের প্রথম ইংরেজী ভাষায় ‘ইংলিশ রক টাউন’ অনুষ্ঠানটি তরুণ প্রজন্মের কাছে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। এদিকে লিংকিন পার্ক ব্যান্ডের একটি বায়োগ্রাফি নির্মাণ করে তা ব্যান্ডটির অফিসিয়াল ফেসবুকে ইনবক্স ও ই-মেইল করার পর, ব্যান্ডটির পক্ষ থেকে র্যাপ ভোকাল মাইক সিনোডা আরিফকে নিয়ে নিজেদের অফিসিয়াল পেজে পোস্ট করেন। যা আরিফের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশে বন্যা, নেপালের ভুমিকম্প, শ্রীলংকার সুনামি এবং ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য ত্রাণসহায়তা ও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করায় দেশগুলোর দুঃসময়ের বন্ধু হিসেবে আরিফের স্বীকৃতি প্রদান করা হয় দেশগুলোর পক্ষ থেকেও। তাছাড়া নিজের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবেও দেশের ভাবমূর্তিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে এই বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছে। এছাড়া রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনে মিডিয়া কর্মী হিসেবে রিপোর্ট করতে গিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সাথে উদ্ধার ভুমিকা পালনে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও আরিফকে করেছে প্রশংসীত।
এ নিয়ে তিনি বলেন, রিপোর্ট করার চেয়ে জীবন বাঁচানোর জন্য উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া আমার কাছে বেশি জরুরী মনে হয়েছিল এই দুটি ঘটনায়।
বাংলাদেশের অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন আরিফ তার চাকুরী জীবনের শুরু থেকে।
আরিফের মা মিসেস আইনুন বলেন, ছোটবেলা তার বাবা ব্যবসা করতে গিয়ে প্রচুর টাকার ক্ষতির সন্মুখীন হোন নিজের বন্ধুদের প্রতারণায়। তখন অবস্থা এমনই করুন ছিলও যে সন্তানদের স্কুল, কলেজে বেতনের টাকা সময়মতো দিতে পারিনি তার বাবা। যার ফলে জাতীয় পত্রিকার সুত্র ধরে চেষ্টা করে আমার এই মেঝো সন্তান আরিফ, নিজের সামর্থ্য অনুসারে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর। আর একটি কথা আমাদের সবসময়ই বলে আরিফ তা হচ্ছে, সরকারের পক্ষে একা সব কাজ করা সম্ভব না।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ছেলের প্রতিটা মূহুর্ত কাজ করতে পারছে বলে মা হিসেবে আমি সত্যি ই আনন্দিত।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে পরীক্ষামুলকভাবে শুরু করেন আরিফ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম শিশু গণমাধ্যম সংস্থা ‘এ আর কিডস’।এ ব্যাপারে আরিফ বলেন, আমার মনে হচ্ছিল বাচ্চাদের জন্য ভালো আন্তর্জাতিক মানের একটি প্লাটফর্ম দরকার সেই হিসেবে আমি যোগাযোগ করি দেশবরেণ্য সাংবাদিক, সম্পাদক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের হেড অব নিউজসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের অনেকের সঙ্গেই। অনেক বাধা পেড়িয়ে যাত্রা শুরুর মাত্র তিন মাসেই কোয়ালিটি ধরে রেখে ‘এ আর কিডস’ জনপ্রিয় ব্রান্ড হিসেবে সাড়া ফেলে পুরো দেশসহ পুরো দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে । তবে আলজাজিরা, এবিসি, রয়টার্স, সিনহুয়া, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে কাজ করা সিনিয়র কিছু বিদেশী সাংবাদিক বন্ধুদের পরামর্শ নিয়ে পুরো সার্ক অঞ্চল নিয়ে ইনশা আল্লাহ কিডস মিডিয়া কাজ শুরু করবে প্রতিটা দেশের সরকারের সহায়তা নিয়ে। এমনটাই আশার কথা শোনালেন দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের আলোচিত এই ক্ষুদে গণমাধ্যম এক্সপার্ট।
তিনি এ ব্যাপারে আরও বলেন, বাংলাদেশের বাইরে প্রথমত নেপাল, ভুটান নিয়ে আমরা কাজ শুরু করব তারপর বাকী দেশগুলোতে আমাদের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমি চাই এমন একটি প্লাটফর্ম তৈরি করতে যেখানে সার্ক অঞ্চলের শিশুরা একে ওপরের সম্পর্কে জানতে পারবে এবং নিজেদের নানা বিষয় দেশগুলোর সরকারের কাছে তুলে ধরতে পারবে। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের শিশুদের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করাই আমার ও কিডস মিডিয়ার প্রধান লক্ষ্য। নিজে সেনা অফিসার হিসেবে শান্তি মিশনে কাজ করতে না পারলেও বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা পেলে ইনশা আল্লাহ জাতিসংঘতে শিশুদের মুখপাত্র হয়ে কথা বলার স্বপ্ন দেখি। এ ব্যাপারে শিশুবান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তা কামনা করেন তিনি।
সবশেষ তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার শিশু কিশোরদের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সরকারের তুলনায় অনেক বড় ভুমিকা পালন করছে। একজন বাংলাদেশী তরুণ হিসেবে বিশ্ব দরবারে আমার দেশের সরকারের কাজগুলো তুলে ধরতে পারলে অবশ্যই ভালো লাগবে।