মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফরের প্রতিবাদে লন্ডনে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। তারা কমলা রঙের একটি বিশাল বেলুনের মাধ্যমে ট্রাম্পকে রাগান্বিত শিশু হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। ট্রাম্পের সফরের দিন শুক্রবার (১৩ জুলাই) প্রতিবাদ জানাতে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এদিন সংসদ ভবনে ট্রাম্পের সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র বৈঠেকর সময়ও বাইরে অনেক মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
ট্রাম্পের সফরের প্রতিবাদ জানাতে শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা কেন্দ্রীয় লন্ডনের পোর্টল্যান্ড প্লেসে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র প্রধান কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে দুটি বড় মিছিল বের করা হয়। একটি মিছিল যায় পার্লামেন্টের দিকে আর বড় মিছিলটি যায় ত্রাফালগার চত্বরের দিকে। “দ্য উইমেন্স মার্চ অন লন্ডন-ব্রিং দ্য নইজ” এবং “টুগেদার এগেইনস্ট ট্রাম্প” নামের দুইটি সংগঠন দুই মিছিলে নেতৃত্ব দেয়। মিছিলগুলো উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। লোকজন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান তুলে ধরার জন্য স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি ঢোল, বাঁশি ও ভুভুজেলা বাজাচ্ছিলেন।
লন্ডনের ত্রাফালগার চত্বরটি বিক্ষোভকারীদের মাধ্যমে পূর্ণ হয়ে যায়। চত্বরটি তার ধারণ ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ বলেছে, তারা সেখানকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। পুলিশ আরও বলেছে, তারা বিশেষ করে জমায়েতের মধ্যে বিক্ষোভকারী, সেখানে আসা ব্যক্তি ও সামগ্রিকভাবে লন্ডনের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার ভারসাম্য রাখার প্রয়োজন বোধ করছে।
থেরেসা মে’র সঙ্গে বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সম্পর্ককে ট্রাম্প বলেন, ‘খুব খুব শক্তিশালী’ আর ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিশেষ’। তবে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেন, ‘আমরা প্রতিবাদের অধিকার সীমিত করেছি, স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকারও সীমিত রেখেছি কারণ একজন বিদেশি নেতার ওপর হামলা হওয়ার সম্ভবনা খুব বেশি ছিল’। তিনি আরও বলেন, ‘এই বিক্ষোভ আমেরিকান বিরোধী নয়, এটা আলাদা। বিশেষ সম্পর্ক মানে আমরা একে অপরের কাছে সর্বোচ্চ মান আশা করি। আর এর মানে এটাই বুঝায় যে, নিজেদের প্রিয় মূল্যবোধ হুমকির মুখে পড়লে তা নিয়ে আমাদের কথা বলা দরকার।’ এর আগে ট্রাম্পের নামে বেলুন উড়ানোর অনুমতি দেন সাদিক খান।
ট্রাম্প বেলুনের অর্থ শোধ করার জন্য আন্দোলনকারীরা ২৯ হাজারের বেশি ব্রিটিশ পাউন্ডের তহবিল সংগ্রহ করেছেন। তারা বলেছেন, ট্রাম্পের সৃষ্টি করা বিশৃঙ্খলার কৌতুকপূর্ণ প্রতিবাদের জন্যই এটা করা হয়েছে। ট্রাম্প বেবিশিটারস নামে একটি দলের ভারতীয় বংশোদ্ভূত সদস্য শিলা মেনন বলেন, ‘আমার কাছে এটা সবচেয়ে সুন্দর ব্রিটিশ রাজনৈতিক বিদ্রুপ’। তিনি বলেন, ‘আপনি এটা শিশুসুলভ বা আক্রমণাত্মক বলে উড়িয়ে দিতে পারেন না। সত্যিকারের রাজনৈতিক বিবৃতি দেওয়া ও অত্যাচারীদের ধরার জন্য এটা একটা সৃজনশীল, নিরাপদ ও অহিংস উপায়’।
বেলুন ক্যাম্পেইন শুরু করা লিও মুরারি বলেন, ‘ট্রাম্পের সফরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো অনেকটা নির্বুদ্ধিতা হতো কারণ এখন এটা পরিষ্কার যে, ট্রাম্পের বিবেচনা প্রত্যাশা করা অনেকটা অরণ্যে রোদন করার মতো’। তিনি আরও বলেন, ‘ছোট্ট ট্রাম্পের আবেগ ও মানসিক বিকাশ থেমে যাওয়ায় ব্যক্তিগত অপমানে তিনি বিশেষভাবে বিপন্ন বোধ করেন’।
ট্রাম্পের লন্ডন সফরের প্রতিবাদের অনেক মানবাধিকার সংগঠনও বিক্ষোভ করেছে। তাদের মধ্যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, লির্বাটি, ওয়াক-আউট এগেইনিস্ট ট্রাম্পসহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। বিবিসির প্রধান কার্যালয় থেকে পার্লামেন্ট ভবন ও ত্রাফালগার চত্বরের দিকে যাওয়া দুই মিছিলের সঙ্গে অসংখ্য ছোট ছোট মিছিলও যোগ দেয়।
এই বিক্ষোভকারীদের থেকে যুক্তরাজ্য পার্লামেন্ট ভবন রক্ষায় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মাধ্যমে রক্ষাবূহ্য তৈরি করা হয়। তারা পুরো পার্লামেন্ট ভবন ঘিরে রাখে। এছাড়া মিছিলের কয়েকটি সড়কেও ইস্পাতের বেড়া দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে।
লন্ডনে মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, ট্রাম্পের সফরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সহিংস হয়ে উঠতে পারে।