নাউ ইন বাংলাদেশ, প্রাইস- টুয়েন্টি ফাইভ থাউজেন্ড টাকা অনলি। ফ্রি হোম ডেলিভারি সার্ভিস।পণ্যটি বুঝে নিয়ে পেমেন্ট করার সুবিধা।’ উত্তেজক ভঙ্গিতে বসা সেক্স ডলের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে এসব বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে নামে বেনামে অনেক ফেসবুক পেজে।
একলা জীবনযাপন করা নর ও নারীকে প্রলুব্ধ করে অনলাইনে বেচা-কেনা করা হচ্ছে নানা ধরনের যৌন সহায়ক সামগ্রী। এসব পণ্যের পরিচিতি অংশে বর্ণনা করা হয়েছে, সেক্স ডল, পুরুষ ও নারীর বিভিন্ন কৃত্রিম যৌন অঙ্গের ব্যবহার বিধি ও সুবিধাদি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নিঃসঙ্গতায় ভোগা অনেক নারী পরকীয়া প্রেমের মতো জটিল সম্পর্কে না জড়িয়ে গোপনে নিজের যৌন তৃপ্তি মেটাতে কিনছেন ওই সব সেক্স সহায়ক সামগ্রী।
নিজের ফেসবুক পেজে সেক্স ডলের ছবি পোস্ট করে প্রচার চালাচ্ছেন এশিয়ান স্কাইশপ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান খান রাজ।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের কাছে ডলটা এসেছে নতুন। একজন বিদেশ থেকে নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে সেক্স ডলের চাহিদা কেমন তা বুঝতেই আমরা ডলের একটি ছবি ফেসবুকে আমাদের একটা গ্রুপে প্রকাশ করেছি। আমাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এখনো ডলটি বিক্রির আইটেম তালিকায় তোলা হয়নি। আমরা বুঝতে চাইছি, এই ডলের চাহিদাটা কি রকম।
এশিয়ান স্কাইশপ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বলেন, সেক্স ডল নয়- এখন বাংলাদেশের বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ডিলডোর’র নামের সেক্স টয়ের। নারী গ্রাহকদের অর্ডারের সংখ্যা অনেক বেশি। কেবল নারী গ্রাহক নয়- পুরুষ গ্রাহকদের অর্ডারও নিতান্ত কম নয়।
গ্রাহকদের সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজ বলেন, সাধারণভাবে সেক্স টয় জাতীয় পণ্যের বেশির ভাগ ক্রেতাই কোনো না কোনো কারণে নিঃসঙ্গতায় ভুগছেন। নারী ও পুরুষ- দু’ ক্ষেত্রেই এটা কমন কারণ। অনেক নারী আছেন যারা পরকীয়ায় লিপ্ত। আর আছে কিছু নারী- যাদের হাজবেন্ড বিদেশে থাকে। এখন আমরা যেসব প্রোডাক্ট সেল করি- এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে ভেবে দেখুন যেসব নারীর সব থেকেও পাশে তার হাজবেন্ড নেই, সেই নারীরা যদি পরকীয়ায় জড়িয়ে যায় তাহলে দু’টো পরিবার ধ্বংসের মুখে পড়ার ঝুঁকিতে পড়ে। এটা নিশ্চিতভাবেই খুব খারাপ। আমরা প্রোডাক্ট সেল করছি এটা খারাপ হলেও তা করছি সমাজের আরো খারাপ এড়ানোর অংশ হিসেবে। আমাদের প্রোডাক্ট যিনি ব্যবহার করছেন তিনি তা নিজে ব্যবহার করছেন গোপনে। কেউ তা জানতে পারছে না। এ ধরনের নারী বা পুরুষ যদি বিশেষ চাহিদা পূরণে আর একজনের কাছে যায়- এ জিনিসটা তো খারাপ। আর ছেলেদের ক্ষেত্রেও প্রায় সেম রিজন কাজ করে। ছেলেরা যৌন সম্ভোগ করার জন্য তো র্যামডন আবাসিক হোটেলে যায়। আসলে পুরো বিষয়টিই তো খারাপ। আমি যদি তুলনা করি তাহলে ব্যাপারটা ফেনসিডিল ও বিয়ারের মতো হবে। আপনাকে বিবেচনা করতে হবে জনস্বাস্থ্যের জন্য কোন্টি বেশি ক্ষতিকর।
ঢাকাতে সবমিলিয়ে প্রায় একশ’র বেশি স্কাইশপ আছে জানিয়ে রাজ বলেন, মিরপুর এলাকার শপগুলো আমাদের কোম্পানি হ্যান্ডেল করে। এভাবে ধানমন্ডি, গুলশান বিভিন্ন ভাগের শপগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। আমাদের মূল কোম্পানির নাম হচ্ছে- সানি অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেড। তিনি বলেন, বর্তমানে বিজনেসটা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, এ ব্যবসাটাও এখন আর আগের মতো মনোপলি নেই। দেখা যায়, অনেক স্টুডেন্ট সরাসরি চকবাজার চলে যায়। ওখান থেকে নন ব্রান্ড পণ্য কিনে নেন। এরপর তারা ফেসবুকে নামমাত্র মূল্য ধার্য করে পণ্যগুলো বিক্রির ঘোষণা দেয়। ফেসবুকে যেখানে আমার নাম লেখা আছে ইমরান খান রাজ সেখানে তারা নিজেদের নাম ও আমাদের এশিয়ান স্কাইশপ বা টিবিসি স্কাইশপের নাম জুড়ে দেয়। ওই সব পণ্য কিনে অনেক ক্রেতা পরে আমাদের কাছে গ্যারান্টি কার্ড নিয়ে চলে আসে। আমরা দেখি, ওই সব গ্যারান্টি কার্ড সিম্পল কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট করা। ক্রেতাদের প্রশ্নের মুখে পড়ি আমরা। ভুয়াদের তো আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
বৈধতার ব্যাপারে ইমরান খান রাজ বলেন, আমরা নিয়ম মেনে ব্যবসা করি। সত্যি বলতে কি, আমরা সাংবাদিকদের ভয় পাই না। প্রশাসনকেও না। গত বছর অক্টোবরে আমাদের নিয়ে আরটিভিতে একটা নিউজ হয়েছিল। ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের ৬ লাখ টাকা জরিমানাও করেছিল। তবে তাতে আমাদের উপকার হয়েছে। আসলে তখন আমরা নানা অবৈধ পথে পণ্য আনতাম। সরকারকে ট্যাক্স দিতাম না। ফলে ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের জরিমানা করেছিল। সেই থেকে আমরা আর অবৈধ পথে পণ্য আনি না। সব পণ্যই নির্ধারিত শুল্ক পরিশোধ করে আমদানি করা। ফলে বুক ফুলিয়ে ব্যবসা করি।
সেক্স ডলের মতো পণ্য বেচা-কেনা করে এমন আর একটি প্রতিষ্ঠানের সিইও বলেন, ‘বাংলাদেশে সেক্স সামগ্রীর বেচাকিনি ভালো। তবে মানহীন বেনামি পণ্য কিনে কিছু মানুষ প্রতারিত হলেও ব্রান্ডের পণ্য কিনে কেউ ঠকছেন না। ফলে দিন দিন আমাদের ব্যবসার প্রসার হচ্ছে।