প্যারিসে রোববার (৩০ এপ্রিল) এর সন্ধ্যাটি অন্য রং এ রাঙায়ে নিয়েছে ফ্রান্সে অভিবাসী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
একইদিনে আমার ছোট মেয়ে রুবাবা কবির এর ১৪ বছরে পদার্পণ উদযাপন। সতীর্থদের নিজস্ব আয়োজন, আমার মেয়েকে না জানিয়েই! সে যারপরনাই বিস্মিত, অভিভূত!
আবার অন্যদিকে, একেবারে বৈশাখ মাসের প্রথম দিনেই তারিক হাসান এর পুত্র সন্তান লাভ! সব মিলিয়ে একটা চমৎকার সন্ধ্যা কাটলো গতকাল রোববার (৩০ এপ্রিল)। প্যারিসের একটি মিলনায়তনে ফ্রান্সপ্রবাসী প্রাক্তন ঢাবিয়ানরা একসাথে মিলে মিষ্টিমুখ আর জন্মদিনের কেক কাটার আয়োজন করে।
শুরুতেই হাসনাত জাহান অতি অল্প কথায় সকলকে স্বাগত জানালেন, ফ্রান্সপ্রবাসী ঢাবিয়ানদের নিয়ে এমন একটি আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানালেন।
তারিক হাসানের সঞ্চালনায় একে একে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার দিকে অগ্রসর হলো। কবিতা, গান আর স্মৃতিচারণ দিয়ে সাজানো সন্ধ্যাটি আরো মোহময় হয়ে উঠতে থাকে।
পলাশ গাঙ্গুলির সুললিত কন্ঠে লালন সংগীত, ‘ধন্য ধন্য বলি তারে’ আমাদের মগ্ন চৈতন্যে শীষ দিয়ে যায়। আর পলাশ গাঙ্গুলির সহধর্মিণী সুবর্ণা চক্রবর্তী গেয়ে ওঠেন, ‘বরিষ ধরামাঝে শান্তির বারী’ – অনবদ্য রবীন্দ্রসংগীত।
খালেদুর রহমান সাগর আবৃত্তি করেন রবীন্দ্রনাথের কবিতা – বৃক্ষ ও বন্দনা।
হুমায়রা শারমীন কাকলী গেয়ে ওঠেন, ‘সর্বোত মঙ্গল রাধে,’। শাফিউল আলম সুমন তার বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। জান্নাতুল ফেরদৌস কবিতায় কৈফিয়ত চান কবি সৈয়দ শামসুল হক এর কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে, ‘আমি কার কাছে গিয়া জিগাবো সে দুঃখ দেয় ক্যান’
- মুনীর কাদের তার আবৃত্তির গভীরতায় মুগ্ধতা ছড়ান কবি শম্খ ঘোষের ‘রাধাচূড়া’ কবিতা দিয়ে।
মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহও কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর – ‘আল্লাহ পরম প্রিয়তম মোর’ পরিবেশন করেন।
পলাশ গাঙ্গুলি – সুবর্না চক্রবর্তী – এই শিল্পী-দম্পতিকে আবারও মাইক্রোফনের সামনে আসতে হলো।
সুবর্না চক্রবর্তী গাইলেন রবীন্দ্রনাথ গান, ‘আমারই পথ চাওয়াতেই আনন্দ, ফিরে যায় রৌদ্রছায়া বর্ষা আসে বসন্ত’। আর পলাশ গাঙ্গুলি – ‘তোমরা একতারা বাজাইও না, দোতারা বাজাইও না’ গানটি ধরলেন! সকলকে বাধ্য করলেন তার সাথে গাইতে। অতঃপর তা কোরাসে রূপ নিলো। উপস্থিত সবাই তখন সংগীতের মায়াবী সূরে শিল্পী হয়ে উঠলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই ছোট্ট সংগঠনের ছোট্ট আয়োজনে যে এত উপলব্ধির গভীরতা থাকে তা অনুভব করবার শক্তি বোধ করি কেবল ঢাবিয়ানদেরই আছে।
এই আয়োজন, এক অতৃপ্তির তৃষ্ণার ঝড় তোলে। যেন রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের চরিত্রে রূপ নেয়, ‘শেষ হয়ে হইলো না শেষ’ – এমন উচ্চমার্গীয় আয়োজনের এত ক্ষন মেয়াদের! ‘শেষ হয়েও শেষ না হওয়ার অতৃপ্তি নিয়েই আমাদের বাড়ি ফেরা! যেন ‘এসেছিলে তুমি আসো নাই জানায়ে গেলে….’। ‘ডাকবে না ডাকবে না, অমন করে বাইরে থেকে ডাকবে না’ – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কিছু, কোন আয়োজন, কোনো আবাহন উপেক্ষা করবার সাধ্য কোনো ঢাবিয়ানদের আছে? নেই, তাই আবার আমরা জড়ো হবো, আবার কোনো আয়োজনে, অন্য কোথা, অন্য কোনোখানে।