এম. এ. মতিন :: সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটে উত্তরের সীমানা রেখা ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশ অবস্থিত প্রকৃতি কন্যা জাফলং। পৃথিবীর প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে জাফলং এক পরিচিত নাম। প্রতিদিন হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসেন জাফলংয়ের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য।
গত ২১শে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ টানা তিন দিনের ছুটিতে শুধু মাত্র জাফলং এলাকায় প্রায় ৫ লাখ পর্যটকের আগমন হয়েছিল। টানা চারদিন দেশ-বিদেশ থেকে আসা লক্ষ লক্ষ পর্যটকের উপস্থিতি থাকায় পর্যটনকেন্দ্র জাফলংয়ের বল্লাঘাট, মামার দোকান, জাফলং বাজারসহ পার্শ্ববর্তী প্রায় সকল হাট বাজারে খাবার পন্যসহ সুপেয় জলের সংকট দেখ াদেয়। এছাড়া বিভাগীয় শহর সিলেটের প্রতিটি আবাসিক হোটেল পর্যটকপূর্ণ ছিল। অসংখ্য পর্যটক সিলেট নগরীতে নিজেদের পরিচিতদের বাসায় অবস্থান নেন। আবার অনেকে আবাসনের ব্যবস্থা না পেয়ে নগরীর মসজিদ, মন্দির, মাদরাসা শাহজালাল (রহ.) মাজার, শাহপরান (রহ.) এর মাজারসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেন।
অনেক কষ্ট আর দূর্দশা ঠেলে প্রকৃতিকন্যা জাফলং দেখতে আসা লক্ষ লক্ষ পর্যটক মূলত হতাশ হয়েছেন। অনেকেই জাফলংয়ের বাস্তব দৃশ্যপট কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বোমা মেশিন, পে-লোডার ও এস্কেবেটর দিয়ে পাথর উত্তোলন করায় জাফলং যেন আজ ধর্ষিত মনোবালা।
জাফলং পর্যটনস্পট সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, সরকার ঘোষিত ইকোলজিক্যল ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) এলাকায় চলছে অবৈধ বোমা মেশিন ও এস্কেবেটর দিয়ে পাথর উত্তোলনের মহা উৎসব। পিয়াইন ও ভারত থেকে নেমে আসা ডাউকি নদীর পানির গতি পথ হারিয়ে যাওয়ায় পুরো জাফলং এলাকা ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে প্রায় চার বছর আগেই জাফলংকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বিবেচনা করে ইকোলজিক্যাল ক্রিটিকেল এরিয়া ঘোষনা করেছে সরকার।
ঘোষিত ঝূঁকিপূর্ণ নির্ধারিত এলাকাজুড়ে রয়েছে প্রায় শতাধিক পাথর উত্তোলনের ৩০-৩৬ ফুট গভীর গর্ত। প্রতিটি গর্তে রাখা হয়েছে ৪-৫ টি করে বোমা মেশিন। এছাড়া জাফলং পিকনিক সেন্টার ঘেষে অর্ধশতাধিক পান-সুপারির বাগানবাড়ি উজাড় করে আহরণ করা হচ্ছে পাথর। ছাঁদ মেম্বারের বাঁধসহ সরকারি সড়ক, ছোটবড় জুমপার, গ্রামের ভিতর, কান্দুবস্তি ও নয়াবস্তি, সংগ্রামপূঞ্জি, বল্লাপুঞ্জিসহ পুরো জাফলং এলাকাজুড়ে চলমান এ ধ্বংসযজ্ঞ যেন দেখার কেউ নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, নয়াবস্তি, কান্দুবস্তি, ছোটবড় জুমপার, ছাদ মেম্বারের বাঁধ, বাগানবাড়ি, লামাপুঞ্জি ও ইসিএ এলাকাজুড়ে প্রায় ৩ শতাধিক পাথরের গভীর গর্ত রয়েছে। সিংহভাগ পাথরের গর্তে বোমা মেশিন ও পে-লোডার চলে। এছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে শতাধিক এস্কেবেটর দিয়ে পাথর উত্তোলন করাহয়। দিনের বেলায় এস্কেবেটরগুলি গোপনীয় ও নিরাপদ স্থানে রাখা হয়।
ব্যবসায়ীরা আরো জানানম প্রতিটি গর্ত থেকে ছাতকের আলাউদ্দিন, জাফলংয়ের আলিম উদ্দিনসহ ১৫-১৬ জনের একটি চক্র প্রশাসনের নামে ১০ হাজার টাকা করে উত্তোলন করেন। প্রতিটি গর্ত থেকে উত্তোলিত পাথর সরবরাহের সময় গাড়ি প্রতি তাদেরকে আরো ৫ শত টাকা দিতে হয়। একটি পে-লোডার প্রতিদিন চার হাজার এবং স্কেবেটর প্রতি দিনে ২৫ হাজার টাকা করে দিতে হয়। এছাড়া যে গর্তে পাথর বেশি বের হয় সে গর্তেই এ চক্রটি টাকা না দিয়েও অংশীদার রয়েছেন। প্রতিদিন প্রায় ১২-১৩ লাখ টাকা শুধুমাত্র জাফলং কোয়ারি থেকে আদায় হয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আলাউদ্দিন ও আলিম উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তারা ফোন কল রিসিভ করেননি।
গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল জলিল বলেন, আমরা জাফলং কোয়ারিতে নিয়মিত অভিযান করছি।
উপজেলা নির্বাহি অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, জাফলং কোয়ারি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে চালানোর আদেশ দিয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট। তাই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কোয়ারি এলাকা তেকে পাথর উত্তোলন হচ্ছে। অবৈধভাবে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের খবর আমাদের কাছে আসলেই আমরা মোবাইল কোর্ট ও টাস্কফোর্সের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করি।
সিলেট ভিউ ২৪ থেকে