বদরুল জামানঃ “পোড়া মাটির গন্ধ শুঁকে দেখো- /অসমাপ্ত বিপ্লবের আহ্বান,/তাই বিজয় সূচনা সোপানে দাঁড়িয়ে/ কবিকে লিখতেই হবে চূড়ান্ত বিজয়ের কবিতা।”
গতকাল ১৫ সেপ্টেম্বর রবিবার সন্ধ্যায় ‘বাংলা সাহিত্য সংসদ ফ্রান্সে’র আয়োজনে প্যারিসের একটি হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে-
“জুলাই বিপ্লবের কবিতাপাঠ ও আলোচনা” সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ।
কবি ও সম্পাদক বদরুজ্জামান জামানের সঞ্চালনায় জুলাই বিপ্লবে নিহত
শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবে স্ব স্ব ধর্মরীতিতে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়।
তারপর জুলাই বিপ্লব নিয়ে লেখা স্ব কন্ঠে কবিতাপাঠ , বিপ্লবের উপর লিখিত প্রসিদ্ধ কবিতাপাঠ
এবং বিপ্লব ও বিপ্লব পরবর্তী বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হয়।
এতে অংশ নেন- আবৃত্তিশিল্পী মুনির কাদের, কবি ও ছড়াকার লোকমান আহমেদ আপন, কবি বদরুজ্জামান জামান,
নাট্যশিল্পী সোয়েব মোজাম্মেল, সংগঠক রাকিবুল ইসলাম, সংগঠক মোহাম্মেদ আহমেদ সেলিম,
আবৃত্তিকার ও সংগীতশিল্পী মারুফ বিন ওয়াহিদ, কবি মেরি হাওলাদার, নারীনেত্রী তৌফিকা শাহেদ, কবি সোহেল আহমেদ,
সংগঠক জুয়েল দাস লেলিন, সংগঠক এলান খান চৌধুরী, আবৃত্তিশিল্পী ও অভিনেতা আবু বকর মুহাম্মদ আল-আমিন,
সেলিম আহমদ, রুবিনা বেগম, ইমন আহমেদ প্রমূখ ।
বক্তারা বলেন- ছাত্রজনতার তুমুল আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর প্রায় চার দিন বাংলাদেশে কোন সরকার ছিল না
এই অবস্থায় বাংলাদেশের অবস্থা স্থিতিশীল ছিল এটা বিরল ঘটনা । সুতরাং একটা পরিবর্তন আমরা আশা করতে পারি।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় দিতে হবে সংস্কারসহ ভালো কিছু দেখার জন্য।
কেননা এই সরকারের আজ ৪০ দিন অতিবাহিত হচ্ছে, এত অল্প সময়ে দেশের ভিতর ভেঙে পড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ
বিভিন্ন উশৃঙ্খলা দমন করে এ পর্যন্ত তারা এসেছেন। সুতরাং আমরা আশা করতে পারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে
এই সরকার সংস্কারের পর একটা সুন্দর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে
তারা বিদায় নিবেন। বক্তারা আশা প্রকাশ করেন বিগত পঞ্চাশ বছরের পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির শাসন ব্যবস্থা
থেকেও বাংলাদেশ বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবে।
বক্তারা আরো বলেন ভারত একটি উগ্রধর্মীয় মৌলবাদী রাষ্ট্র। ভারতের সংখ্যালঘু নির্যাতন হত্যা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার
অথচ বাংলাদেশে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটলে ভারত বাংলাদেশকে ধর্মীয় মৌলবাদী জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে প্রচার করতে থাকে।
গত কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশের কুলাউড়া সীমান্তে বি এস এফের গুলিতে স্বর্ণা দাস হত্যার তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
ভারতের আগ্রাসী রাজনীতি ও মনোভাবের কারণে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য বরাবরই তারা আওয়ামীলীগকে বেছে নেয়।
অথচ এই আওয়ামী লীগের আমলেই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়। তাছাড়া আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণের
অধিকার ক্ষুন্ন করে প্রতিবেশী ভারতের সাথে নতজানু পররাষ্ট্র নীতিতে দেশ চালায়। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সরকার
অধিকার ও সমতার ভিত্তিতে প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
তাছাড়া জুলাই বিপ্লবে যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবার এবং পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তাদের চিকিৎসা ও পরিবারের
সহায়তার জন্য সরকারের সাথে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে সমাপ্তিতে কবির কবিতায় ব্যক্ত করা হয়-
“অচিরেই এই সন্ধিক্ষণ কেটে যাবে
সূর্যোদয়ের সোনালী আভা পূর্বাকাশে
সূর্য উঠবেই পাখি ডাকবেই ।
কবি তার কবিতা দিয়ে রাঙাবে প্রভাত
আর সুর সঙ্গীতের মূর্ছনায় উদ্ভাসিত হবে মানুষ।
আসুন, আমরা সকল ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে
বাংলাদেশী বাঙালি পরিচয় উজ্জীবিত হই ,
সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘু পরিচয়ে নয়।
আজ এই সন্ধিক্ষণে রাষ্ট্রের কাছে আমাদের চাওয়া
বন্ধ হোক এই ধ্বংসলীলা হত্যাযজ্ঞ অগ্নি খেলা।
মসজিদে আজান হোক। মন্দিরে উলুধ্বনি হোক নির্ভয়ে।
ইবাদত প্রার্থনা আরাধনায় আমরা একবৃন্তে রাষ্ট্রের নাগরিক ।
গোলাপের ঘ্রাণ আর সৌন্দর্যে ছড়িয়ে পড়ুক আমাদের ঐতিহ্য।”