কোনোরকমে প্রধানমন্ত্রিত্ব টিকে যাওয়ার পর ব্রেক্সিট পরিকল্পনা অনুমোদনের স্বার্থে সম্ভাব্য বিকল্প পথ নিয়ে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। বুধবারের (১৬ জানুয়ারি) আস্থা ভোটের দিনের একটা পর্যায় পর্যন্ত তিনি অনড় ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে গত বছর নভেম্বরে স্বাক্ষরিত তার পুরনো ব্রেক্সিট পরিকল্পনা নিয়ে। তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে, দিনশেষে থেরেসা মে বিকল্প পথ নিয়ে আলোচনা করতে বিভিন্ন দলের আইনপ্রণেতাদের দ্বারস্থ হতে শুরু করেছেন। এরইমধ্যে লিবারেল ডেমোক্র্যাট, এসএনপি ও প্লাইড ক্যামরি পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) নিজ দলের চুক্তিহীন ব্রেক্সিটপন্থী টোরি সদস্য ও ডিইউপি’র এমপিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তবে মে পুরনো পরিকল্পনায় থাকা কোন কোন বিষয়ে ছাড় দিতে সম্মত, কিংবা আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলোচনার বিষয় কী কী তা এখনও কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি। এদিকে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের সম্ভাবনা খারিজ না করা পর্যন্ত থেরেসার সঙ্গে বৈঠকে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন।
২০১৯ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে যাওয়ার কথা। পরবর্তী সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে গত নভেম্বরে জোটটির সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মে। সে ব্রেক্সিট খসড়া পরিকল্পনা নিয়ে মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) পার্লামেন্টে শোচনীয় পরাজয়ের পর আস্থা ভোটের মুখে পড়েছিলেন থেরেসা মে। তবে বুধবার (১৬ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত সে আস্থা ভোটে মাত্র ১৯ ভোটে টিকে যান তিনি। এতে সরকার নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা কেটে গেলেও ব্রেক্সিট সংক্রান্ত অচলাবস্থার এখনও সুরাহা হয়নি। এমন অবস্থায় আত্মস্বার্থে মগ্ন না থেকে জাতীয় স্বার্থের দিকে নজর দিতে আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। থেরেসা তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভবিষ্যতের স্বার্থে ‘সম্ভাব্য সমস্ত বিকল্প পথ’ নিয়ে আলোচনায় রাজি তিনি।
পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর এখন চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এমন বাস্তবতায় আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে ‘সম্পূর্ণ নতুন একটি ব্রেক্সিট পরিকল্পনা’ নিয়ে ইউরোপকে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ আছে থেরেসা মে সরকারের। তবে ২১ জানুয়ারির মধ্যে সেই পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে হবে। নতুন করে বেক্সিটের খসড়া হাজিরের ব্যাপারে শুরু থেকেই অসম্মত থাকলেও আস্থা ভোটে উৎরে যাওয়ার পর তিনি পুরনো অবস্থান থেকে পিছু হটেছেন। সম্ভাব্য বিকল্প নিয়ে আলোচনার স্বার্থে আইনপ্রণেতাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি।
মঙ্গলবার বিরোধী দল লেবার পার্টি ছাড়াও নিজ দলের চুক্তিহীন ব্রেক্সিটপন্থী টোরি সদস্য ও ডিইউপি’র এমপিরাও থেরেসার ব্রেক্সিট পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) এ দুই পক্ষের এমপিদের সঙ্গেই বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে তার। বুধবার রাতেই লিবারেল ডেমোক্র্যাট, এসএনপি ও প্লাইড ক্যামরি পার্টির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন থেরেসা।
বিভিন্ন দলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি ‘গঠনমূলক উদ্যম’ নিয়ে আলোচনা করতে চান। ‘নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়কে’ দূরে রেখে ব্রেক্সিটের জন্য কোনও উপায় খুঁজে বের করতে গঠনমূলকভাবে একসঙ্গে কাজ করার জন্য এমপিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। থেরেসা মে বলেন, ‘এটা কোনও সহজ কাজ নয়। তবে এমপিরা জানেন, জাতীয় স্বার্থে কাজ করা, ঐকমত্যে পৌঁছানো ও তা বাস্তবায়ন করাটা তাদের দায়িত্ব।’
নতুন ব্রেক্সিট পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে সংকট সমাধান করতে চাইলে তা নির্ধারিত ২৯ মার্চের মধ্যে সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত আইন ‘আর্টিকেল ৫০’-এর সংযোজনী (এক্সটেনশন) এনে তা বিলম্বিত করতে হবে। বিলম্বিত ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সফল করতেপ্রথমত, সময়সীমা বাড়ানোর জন্য ইইউ-এর কাছে আবেদন জানাতে হবে। ইউরোপীয় কাউন্সিলে আয়োজিত ভোটাভুটিতে সবগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের সমর্থন পেলেই কেবল ব্রেক্সিট বিলম্বিত করা যাবে। দ্বিতীয়ত, ইইউ উইথড্রয়াল অ্যাক্টে ‘বিচ্ছিন্ন হওয়ার দিন’র সংজ্ঞা পরিবর্তনের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ তারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভোটাভুটিতে অংশ নিতে পারবেন ব্রিটিশ এমপিরা। তবে নতুন আলোচনায় অংশ নিতে ইইউ রাজি না হলে ব্রিটিশ সরকারকে অন্য উপায় খুঁজতে হবে।
ব্রেক্সিটের সমর্থক ও বিরোধী এ দুই পক্ষের এমপিরাই থেরোসা মে-কে সতর্ক করে বলেছেন, হাউস অব কমন্সে যদি তিনি ব্রেক্সিট পরিকল্পনা পাস করাতে চান তবে তাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন আলোচনার ব্যাপারে সম্মত হবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। পার্লামেন্টে থেরেসার বিকল্প প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে হাঁটতে হবে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের (নো ডিল ব্রেক্সিট) পথে। তবে, পার্লামেন্টের ব্রেক্সিট বিরোধী অংশ খুব সহজে তা হতে দিতে চান না। নো ডিল ব্রেক্সিটের সম্ভাব্য প্রাপ্তি নিয়ে ব্রিটিশ এমপিদের অনেকের মধ্যে হতাশা রয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি পার্লামেন্টে উত্থাপিত সরকারের একটি কর বিল আটকে দিয়েছে তারা। বিলটি পাস না হওয়ার কারণে নো ডিল ব্রেক্সিটের পর নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে কর বাড়াতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়বে। এ পদক্ষেপকে প্রতীকী হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, টাকা তুলতে অন্য পথ খুঁজে নিতে পারবে সরকার। তবে বিলটি পাস না করার মধ্য দিয়ে এ ইঙ্গিত মিলেছে যে,এমপিরা নো ডিল ব্রেক্সিটকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবেন।