যুক্তরাজ্যে আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগাম সাধারণ নির্বাচন। দেশটির মুসলিমরা ৩১টির বেশি আসনে ভোটের ফলাফল পাল্টে দিতে পারে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। গত সোমবার দ্য মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) একটি তালিকা প্রকাশ করে। যেসব আসনে মুসলিম ভোটাররা ‘উচ্চ’ ও ‘মাঝারি’ প্রভাব বিস্তার করতে পারে সেসব আসনের নাম ছিল ওই তালিকায়।
তালিকার শীর্ষে আছে ওয়েস্ট লন্ডন। আসনটিতে মোট জনগোষ্ঠীর ৯ শতাংশ মুসলিম, যাদের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার ৪৩১। এই আসনে লেবার পার্টির হয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির বিরুদ্ধে লড়ছেন ইম্মা ডেন্ট কোয়াড। তালিকায় ডাডলি নর্থ আসনের কথাও উল্লেখ রয়েছে। ওই আসনে মুসলিম ভোটার ৪ শতাংশ। তালিকার ৩১ আসনের মধ্যে লেবার ও কনজারভেটিভ ১৪টি করে এবং ৩টিতে এসএনপি পার্টির আধিপত্য রয়েছে।
আর এই তিন পার্টির কাছেই অন্যতম বিরোধী দল এমসিবি। মুসলিমরা যে পার্টিতে ভোট দেবে, সেই পার্টিই আসনে জয় পাবে। ফিঞ্চলে ও গোল্ডার্স গ্রিনে কনজারভেটিভ প্রার্থী লুসিয়ানা বার্জারের প্রচারণা দল ২০ শতাংশ ইহুদি ভোটারকে লক্ষ করে প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু এমসিবির তথ্য অনুসারে, ওই আসনে মুসলিম ভোটার ৮ শতাংশ।
এমসিবির সাধারণ সম্পাদক হারুন খান দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘সমাজে সক্রিয়তার দিক দিয়ে মুসলিমরা তাদের সব বৈচিত্র দিয়ে আসন্ন নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে পারে। আমরা আশা করি পার্টিগুলো আমাদের কথা শুনবে এবং দেশব্যাপী মুসলিম স¤প্রদায় তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে পারবে।’
নির্বাচনে মুসলিম ভোটারদের অংশগ্রহণ ও নির্বাচনী বিতর্কে তাদের অংশীদারত্ব নিশ্চিতে ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছে এমসিবি। উচ্চ-প্রভাব পড়বে এমন অঞ্চলের তালিকার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে- কেনসিংটন, ডডলি নর্থ এবং রিচমন্ড পার্ক। উচ্চ-প্রভাবিত আসনগুলোতে মুসলিম ভোটারদের অনুপাতের আলোকে বর্তমান বিজয়ীর প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধানটি সামান্য।
কেনসিংটনে লেবার প্রার্থী এমা ডেন্ট কোড ২০১৭ সালের নির্বাচনে মাত্র ২০ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। ডডলি নর্থ ও রিচমন্ড পার্ক উভয় নির্বাচনী এলাকায় যথাক্রমে ২২ ও ৪৫ ভোটের ভোটের ব্যবধান ছিল গত নির্বাচনে। মুসলমানরা এ আসনে উচ্চ-প্রভাব ফেলতে পারে।
যুক্তরাজ্যের মুসলমানদের প্রধান প্রতিনিধি সংস্থা ‘মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনস’ নির্দলীয় থাকবে। এমসিবি হলো ব্রিটেনের বৃহত্তম ও সর্বাধিক বৈচিত্রময় মুসলিম সংস্থা। এর অধীনে ৫০০ এরও বেশি অনুমোদিত, জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় সংস্থাসহ মসজিদ, দাতব্য সংস্থা ও স্কুল রয়েছে। এটি কোনো রাজনৈতিক দল বা সম্ভাব্য সংসদীয় প্রার্থীকে সমর্থন করে না।
এমসিবির ৩১টি প্রান্তিক আসনের একটি তালিকা প্রকাশের পর ব্রিটেন মুসলিম কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল হারুন খান বলেছেন, আমাদের সমাজে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে মুসলমানরা তাদের সামগ্রিক বৈচিত্রে আসন্ন নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারেন। আমরা আশা করছি, নির্বাচনে মুসলিম প্রার্থীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি সারা দেশের মুসলিম স¤প্রদায়ের কাছে পৌঁছে যাবে এবং তারা গুরুত্ব দেবে। নির্বাচনে মুসলিম ভোটারদের ‘উচ্চ’ বা ‘মাঝারি’ মানের প্রভাব থাকতে পারে। যে ৩১টি আসন মুসলিমদের দখলে আসতে পারে সেগুলোর ১৪ করে লেবার ও কনজারভেটিভের এবং বাকি তিনটি এসএনপির।
লেবার নেতা জেরেমি করবিনের ইলিংসটন নর্থের ফিন্সবুরি পার্ক মসজিদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কোজবার। তার মতে, ‘একটি নির্দিষ্ট স¤প্রদায়কে রাজনীতি থেকে দূরে রাখলে ওই স¤প্রদায়ভুক্ত মানুষকে এর মূল্য দিতে হয়। মুসলিমদের কণ্ঠস্বর পৌঁছে দেওয়ার এখনই সময়।’
ব্রেক্সিট ইস্যুতে যুক্তরাজ্য এমনিতেই ব্যাপক অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ব্রেক্সিট জটিলতা ক্রমশ বাড়তে শুরু করায় সামাজিক অন্য সমস্যাগুলোও মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অধিকারের প্রশ্নে যুক্তরাজ্যের ইউনাইটেড চরিত্র হুমকির মুখে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
ইহুদি বিদ্বেষের কারণে লেবার পার্টিকে ইহুদিদের ভোট টানতে সমস্যায় পড়তে হবে। কনজারভেটিভ পার্টির ভেতরে ইসলাম বিদ্বেষের অভিযোগের কারণে তাদেরও মুসলিমদের ভোট পেতে অসুবিধা হবে। যদিও ইসলাম বিদ্বেষের জন্য ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ও প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
চলতি নির্বাচনে আটটি দল অংশ নিচ্ছে। দলীয় প্রার্থী ছাড়াও নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন ২০৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। বর্তমানে ব্রিটেনে মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। এ অবস্থায় ৩১ আসনে তাদের বিজয়ী হওয়ার পূর্বাভাস রাজনীতিতে মুসলমানদের শক্ত অবস্থানের ইঙ্গিত। সূত্র : আরব নিউজ ও দ্য গার্ডিয়ান।