মোহাম্মদ জাফরুল হাসানঃ বাংলাদেশ কী সাংবাদিকদের জন্য নিরাপদ? দেশেতো স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে হুমকি দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমান সরকার বা তার দলীয় কোন নেতা-কর্মীর দূর্ণীতি বা আপরাদের ব্যাপারে প্রতিবেদন করলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের এ প্রতিবেদনের জন্য হামলা, মামলার সম্মুখীন এমনকী জীবন নাশও হতে পারে। তাহলে অপরাধীরা, দূর্নিতীবাজরা কী ধরা-ছোঁয়ার বাইরে?
গণমাধ্যম যদি দূর্নিতীবাজ, অপরাধীদের ব্যাপারে না লিখতে পারে তাহলে গনমাধ্যমের প্রয়োজন কী? আচ্ছা ম্যাডাম হাসিনা, আপনি কী চাচ্ছেন? যেসব সাংবাদিক আপনাদের আপরাধের ব্যাপারে লিখবে তাদের হাত কেটে ফেলতে, ছাত্রলীগ/পুলিশলীগ দিয়ে হামলা করতে, দেশ ছাড়া করতে নাকী জীবনের তরে শেষ করে দিতে?
সরকারি পদক্ষেপের কারণে বন্ধ থাকা আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান একটি মানহানির মামলায় কুষ্টিয়ার আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আদালত প্রাঙ্গণে তাঁর ওপর ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা চালায়। হামলায় তাঁর মাথা ও মুখ জখম হয়েছে। এ ছাড়া তাঁকে বহনকারী গাড়িটি ভেঙে দেয় হামলাকারীরা। গত রোববার বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে আদালতের বারান্দা থেকে বের হয়ে প্রাইভেট কারে ওঠার পর এ হামলা হয়। এ সময় সেখানে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দীন, আদালতের পরিদর্শক মনির উজজামানসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ নীরবে দাঁড়িয়ে ছিল।
এ ক্ষেত্রে প্রথমেই দেখা প্রয়োজন যে, আদালতে বিচারাধীন মামলা অন্য কারও বিচার করার অধিকার আছে কি না? যদি না থাকে, তাহলে আদালত যাঁকে জামিন দিয়েছেন, তাঁকে এজলাসের বাইরে যাঁরা শায়েস্তা করার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের নিন্দা করা জরুরী এবং আইনের আওতায় আনা উচিত। তা না হলে আইনের শাসনের বদলে দেশে বিভিন্ন গোষ্ঠীর দলবদ্ধ উগ্রতার শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে।
আদালতের ভেতর হামলার জন্য পুলিশকে দোষারোপ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে পুলিশ আমাকে গুন্ডাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। পরিকল্পিতভাবে আমার ওপর হামলা হয়েছে। এর জন্য একদিন তাদেরও আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’ এ সময় সদর থানার ওসি নাসির উদ্দিন তাঁকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তাঁকে বলেন, ‘হামলার সময় কোথায় ছিলেন। আপনারা তো আমাকে মার খাওয়ালেন। হাসপাতালেও নিয়ে যাচ্ছেন না। আমার সারা মুখ থেকে রক্ত ঝরছে, আমি যন্ত্রণায় দাঁড়াতে পারছি না।’
প্রকাশ্য দিবালোকে আদালত চত্ত্বরে একজন বরেণ্য ব্যক্তির উপর এ ধরণের বর্বর হামলার ঘটনা কোন সভ্য সমাজে হতে পারে না। রাষ্ট্র আজ ফ্যাসিবাদী চেতনা লালন করে চলছে এটা তারই প্রমাণ। আমি এ জঘন্য ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
কুষ্টিয়ার সাংবাদিক মওদুদ, তিনি কুষ্টিয়ায় একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করার সময় স্থানীয় পুলিশ এবং প্রভাবশালী রাজনীতিকদের দুর্নীতির খবর প্রকাশ করে তাদের আক্রোশে পড়েছিলেন। এর জের ধরে গত বছর ৫৭ ধারায় মামলা করা হলে তাঁকে বাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়। সাংবাদিক মওদুদ রানা ঢাকায় উচ্চ আদালত থেকে মামলায় জামিন পেলেও আর কুষ্টিয়ায় যেতেই পারেননি। এছাড়াও চাঁদপুরের “কচুয়া বার্তার” সম্পাদক আলমগির তালুকদার ও “চাঁদপুর দর্পনের” প্রতিনিধি মফিজুল ইসলাম আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে লাঞ্চিত হন। বরিশালে লাঞ্চিত হন তারেক রহমান এবং বাংলাদেশর বাভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা অন্য কারনে সাংবাদিকরা বিভিন্নভাবে লাঞ্চিত হচ্ছেন। তাছাড়া ১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে কোন সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় নি। বিবেকের কাছে প্রশ্ন, আমরা সাংবাদিকরা কী মানুষ নই? এমন শত হাজারো সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে বাংলাদেশে। গেল ২৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক মানবজমিনে বিশিষ্ট সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী একটা লেখায় বারবার এ কথা বলেছেন যে, এখন সাংবাদিকরা হাত খোলে লিখতে পারছেন না। কেউ সাহস করে লিখলে আর চাকরি থাকছি না। সম্পাদকের অজান্তেই বিশেষ নোটিশে সাংবাদিকের চাকরি চলে যায়।
এই যদি হয় একটা দেশের চিত্র। সে দেশের তৃণমূলের সাংবাদিকরা কেমন আছেন, আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
লেখকঃ সাংবাদিক, প্রধান প্রতিবেদক, ফ্রান্স দর্পণ