প্যারিস, সোমবার প্রতিনিধি: বিশ্বখ্যাত লুভর জাদুঘরে রবিবারের মাত্র সাত মিনিটের দুঃসাহসিক ডাকাতির পর ফ্রান্সে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক দোষারোপের ঝড়। ফ্রান্সের রাজনীতি এখন সরগরম — বিশেষ করে ডানপন্থী নেতারা রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সরকারকে অপরাধ দমনে ব্যর্থ ও জাতীয় ঐতিহ্য রক্ষায় উদাসীন বলে অভিযুক্ত করছেন।
চুরি হওয়া জিনিসের মধ্যে ছিল ফ্রান্সের রাজমুকুটের রত্নসমূহ — যা দেশের গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। ঘটনাটি ঘটেছে দিনের আলোয়, বিশ্বের সর্বাধিক দর্শনীয় জাদুঘরের ভেতরে, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থার বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য মারিয়ন মারেশাল ঘটনার পর প্রস্তাব দিয়েছেন, উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য চালু থাকা ২০০ ইউরোর সাংস্কৃতিক ভাউচার বাতিল করে সেই অর্থ “জাতীয় ঐতিহ্য রক্ষায়” ব্যয় করা হোক। তিনি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, “আজ ফ্রান্স বিশ্ববাসীর হাসির পাত্রে পরিণত হয়েছে,” এবং একই সাথে তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রী রাশিদা দাতির কাছে জাদুঘরের পরিচালক ও নিরাপত্তা প্রধানের পদত্যাগ দাবি করেন।
সংস্কৃতি মন্ত্রী দাতি স্বীকার করেছেন যে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি ছিল। তিনি বলেছেন, “৪০ বছর ধরে দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে। এটা এই ধারাবাহিকতার ওপরেই বর্তায়। আমরা সবসময় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় গুরুত্ব দিয়েছি, কিন্তু শিল্পকর্মের সুরক্ষায় তা করিনি।”
ন্যাশনাল র্যালি দলের সিনিয়র নেতা জ্যঁ-ফিলিপ তাঙ্গি অভিযোগ করেছেন, “রাজনৈতিক ও গণমাধ্যম ব্যবস্থার নরম নীতিই এই চুরির জন্য দায়ী।” তিনি সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের জাদুঘর ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের ভেতরের সম্পদের মান অনুযায়ী সুরক্ষিত নয়।”
দলের সভাপতি জর্ডান বার্দেলা ঘটনাটিকে “জাতীয় অপমান” বলে আখ্যা দিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, “রাষ্ট্রের এই ভাঙন কতদূর গড়াবে?”
অন্যদিকে, রক্ষণশীল সংসদ সদস্য আলেক্সান্দ্র পোর্তিয়ে ফরাসি ঐতিহ্য ও জাদুঘর নিরাপত্তা নিয়ে সংসদীয় তদন্তের প্রস্তাব আনার ঘোষণা দিয়েছেন।
লুভর জাদুঘরের নিরাপত্তা নিয়ে এর আগেও কর্মী ইউনিয়নগুলোর অভিযোগ ছিল। তারা পর্যাপ্ত জনবল, কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা সরঞ্জামের ঘাটতি নিয়ে বারবার সতর্ক করেছে। ক্রমবর্ধমান পর্যটক চাপের কারণে জুন মাসেও নিরাপত্তাকর্মীরা ধর্মঘটে গিয়েছিলেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ “লুভর — নুভেল রেনেসাঁ” নামে একটি আধুনিকায়ন প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন, যার মধ্যে নতুন প্রবেশদ্বার, মোনা লিসার জন্য আলাদা কক্ষ এবং অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এখনও পর্যন্ত ডাকাতদের শনাক্ত করা যায়নি। ঘটনাটির পর দ্বিতীয় দিনের মতো লুভর জাদুঘর সাধারণের জন্য বন্ধ রয়েছে।