এসএম হেলাল : শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফি শেষ করে সোমবার দেশে ফিরেছেন। সেই ভ্রমণ ক্লান্তি দূর হতে না হতেই গতকাল ছুটে আসলেন নিজ গ্রাম সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানবাজার ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামে। যদিও জন্ম ও বেড়ে উঠা সিলেট শহরতলীতে। তাতে কি হবে। নিজ গ্রাম ও এলাকার মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসা বিদ্যমান। সেই ভালোবাসার টানেই এলাকার মানুষের ডাকে সব সময়ই সাড়া দেন। এবার সাড়া দিয়ে উপস্থিত হলেন মুক্তিযোদ্ধা স্মরণে টি-১০ ক্রিকেট টুণামেন্ট ২০১৮ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্টানে। বাবা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাই হয়তো মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এমন ক্রীড়া অনুষ্টানে শত ভ্রমণক্লান্তি উপেক্ষা করেও চলে আসা।
তবে এলাকাবাসি যে তাদের প্রিয় ক্রিকেটারকে শুধু পুরস্কার বিতরণী অনুষ্টানে ডেকেছেন তা নয়। তাকে বড় করে সংবর্ধিত ও করেছেন। সেই সংবর্ধনা অনুষ্টানে এলাকার মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। প্রিয় ক্রিকেটারকে কাছে পেয়ে কেউ দু’একটি কথা বলতে, কেউ সেলফি তুলতে, কেউ কেউ গ্রুপ ছবি তুলার সুযোগ খুঁজতে মহা ব্যস্ত। তবে রাহী কাউকেই নিরাশ করেননি। সবার সাথে খোলামনে মিশেছেন। হাসি মুখে কথা বলেছেন। এমন ভাবেই মিশেছেন যেনো এই এলাকাতেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। তাঁর এমন মেলামেশায় এলাকাবাসি মহা খুশি। তাঁকে নিয়ে অনেকে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করেছেন।
রাহী ও এলাকার মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। তাঁর সেই মুগ্ধতা থেকে সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে তিনি তাঁর বক্তৃতায় তাকে সম্মান দেখানোর জন্য এলাকার সর্বস্তরের মানুষের প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তাঁর বাবার স্মৃতি টেনে তিনি বলেন, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে নিজেকে ধন্য মনে করি। আমার পিতার কবর এ গ্রামে রয়েছে। তাই এখানে সময় পেলেই আসতে ইচ্ছে হয়। তবে এখন থেকে শুধু বাবার টানে নয়, আপনাদের টানে ও আসব। এলাকার রাস্তা-ঘাট ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নিজ বাড়িতে আসার রাস্তা, সিলেট-সুলতানপুর সড়কের করুণ অবস্থার জন্য হতাশা প্রকাশ করে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও মেরামতের জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান।
রাহীর সংবর্ধনা অনুষ্টানে এলাকার সর্বস্তরের জনগণ সহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ এর মতো গুণী রাজনীতিবিদও ছিলেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ তাঁর বক্তৃতায় বলেন, রাহী হচ্ছেন সিলেট বাসীর গর্ব। তা ছাড়া সে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এমন একজনের সংবর্ধনা অনুষ্টানে থাকতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। পাশাপাশি খেলাধুলায় তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ ও তাঁর সরকারের ব্যপক সাহায্য সহযোগিতার কথা সবিস্তারে তুলে ধরেন।
পাশাপাশি রাহীকে নিয়ে এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ ও তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বালাগঞ্জ উপজেলা ক্রীড়া সংন্থার সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক , বোয়ালজুড় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনহার মিয়া বলেন, বীর মুক্তিযুদ্ধা আব্দুল খালিক চৌধুরী ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। তাঁর সুযোগ্য সন্তান আবু জাহিদ চৌধুরী রাহী আমাদের জাতীয় দলের একজন ক্রিকেট বীর। সে শুধু বালাগঞ্জবাসীর নয় দেশবাসীর গর্ব।
যুক্তরাজ্যস্থ প্রবাসী বৃহত্তম সামাজিক সংগঠন বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর এডুকেশন ট্রাস্টের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, লেখক মোহাম্মদ সা’দ মিয়া বলেন, রাহী সুযোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান। আশা করি দেশে জন্য নিজেকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তাঁর উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করছি।
যুক্তরাজ্যস্থ প্রবাসী দেওয়ান আব্দুর রহিম হাইস্কুল এন্ড কলেজ উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও গহরপুর মাদ্রাসাবাজার উন্নয়ন টাস্ট্রের সাধারণ সম্পাদক শহীদ আবুল কালাম সেতু বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে রাহীর পিতার অসামান্য অবদান যেমন কোনদিন হারিয়ে যাবেনা। খেলাধুলার মাধ্যমে রাহী এলাকা তথা দেশবাসীর জন্য যে সাফল্য অদূর ভাবষ্যতে নিয়ে আসবেন তা কখনো ভুলা যাবেনা। প্রবাসীদের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি অকুন্ঠ ভালবাসা ও শুভ কামনা রইলো।
সিলেট জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট জুয়েল আহমদ বলেন, রাহী শুধু আমাদের জামালপুর, বালাগঞ্জ, সিলেটের গর্ব নয়, সে বাংলাদেশের প্রতিভাবান সুর্য সন্তান। জাতীয় ক্রিকেট দলের নিয়মিত সদস্য হয়ে সে নিয়মিত সাফল্য পাক এই শুভ কামনা থাকলো।
স্থানীয় ইউপি সদস্য খন্দকার আব্দুর রকিব বলেন, রাহী আমাদের অহংকার। আশাকরি তাঁর মতো খেলোয়াড় বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবদান রাখবেন।
তাছাড়া স্থানীয় জামালপুর গ্রামের পুর্বের চাতলা মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউনিটি স্পোর্টিং ক্লাব’র নির্বাহী কমিটির সভাপতি এমরানুর রহমান ইমরান। সাধারণ সম্পাদক রাসেল আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আর ও উপস্থিত ছিলেন ও বক্তৃতা করেন বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, সিলেট জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট জুয়েল আহমদ, মোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম সাইস্তা, দেওয়ান বাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. দুদু মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আলী কাঁচা, প্রবাসী বালাগঞ্জ ওসমানীনগর এডুকেশন ট্রাস্টের ট্রাস্টি খিজির আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান, উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি আব্দুল আহাদ, ক্রীড়া সংগঠক আনোয়ার হোসেন আনোয়ার, মো. আসলম খান, ইব্রাহিম আলম খান মামুন, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রশিদুল ইসলাম রাশেদ, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য আইনুর আহমদ রুমন, বালাগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রজত দাস ভুলন, গহরপুর রাইটার্স ক্লাবের সভাপতি মো. জিল্লুর রহমান জিলু, সাধারণ সম্পাদক এসএম হেলাল, সাংবাদিক এমএ কাদির, ফরহান আহমদ চৌধুরী, বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রকিব জুয়েল, দেওয়ান বাজার ইউনিয়ন ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শিরমান উদ্দিন, ক্রীড়া সংগঠক এনামুল হক মকদ্দছ, ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সুহেল আহমদ, যুগ্নসাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা সুহেল বারী, পারভেজ আহমদ, ছাত্রলীগ নেতা শাহাব উদ্দিন, খালেদ আহমদ, ইউনিটি স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ পরিষদের সভাপতি মারুফ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক খালেদ আহমদ, নির্বাহী সদস্য লিটনুর রহমান, মোস্তাক হোসেন দিপু, মো. রিজু মিয়া, রুহেল আহমদ, রুবেল আহমদ মিশু, বুরহান উদ্দিন, মুসাদ্দেক আহমদ, জাবের আহমদ, জাহেদ আহমদ, রাহিম আহমদ, মামুন আহমদ, মুক্তা আহমদ, রেহাদ আহমদ, জাহেদ আহমদ, রাহীম আহমদ, গফফার হোসেন টিপু, জাকির আহমদ, জুয়েল আহমদ প্রমূখ।
এদিকে উক্ত টুর্ণামেণ্টের ফাইনাল খেলায় খালেরমুখবাজারের মীরপুর ইয়াং স্টার ৩২ রানে খাঁপুর ক্রীড়া সংস্থাকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। টুর্নামেন্টের সবক’টি পুরস্কার প্রদান করেন কুয়েত প্রবাসী মো. হেলাল উদ্দিন। ম্যাচে ধারাভাষ্য প্রদান করেন সিলেট জেলা ধারাভাষ্যকার সংস্তার সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন ও নাবিল হায়দার চৌধুরী। আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেন ইমানী চৌধুরী ও শরীফ বিন তাজ।