সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ২৭ দিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রহস্যজনভাবে তার এই নিখোঁজ হওয়া নিয়ে মুখ সৌদি কতৃপক্ষ। এরই মধ্যে ইরান ও রুশ গণমাধ্যম সৌদি যুবরাজ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তবে এসব প্রতিবেদনে নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রের কথা উল্লেখ না করলেও বেশ কিছু পয়েন্টের ভিত্তিতে সৌদি যুবরাজ নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করছে।
রাশিয়ায় স্পুতনিক নিউজ, ইরানের ফার্স নিউজ ও প্রেস টিভিতে এ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ইরানের গণমাধ্যমগুলো দাবি করছে, গত ২১ এপ্রিল রিয়াদের রাজপ্রাসাদে একটি অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়। সেখানেই গোলাগুলি চলার সময় সৌদির প্রভাবশালী যুবরাজ সালমান নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফার্সি ভাষায় প্রকাশিত কাইহান পত্রিকা দাবি করছে, অজ্ঞাত একটি আরব দেশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কাছে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে যুবরাজ নিহত হওয়ার খবরটি পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২১ এপ্রিল সৌদির রাজপ্রাসাদে হামলার সময় যুবরাজ সালমানের শরীরে দুটি বুলেট আঘাত হানে। তিনি হয়তো মারা গিয়েছেন। কারণ ওই ঘটনার পর যুবরাজকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
ইরানের ফার্স নিউজের এক প্রতিবেদনে বলছে, ২১ এপ্রিল রিয়াদের রাজপ্রাসাদ থেকে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা গিয়েছে। যুবরাজ সালমানকে তখন রিয়াদে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের বিমানঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, রিয়াদে বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের প্রাসাদকে ঘিরে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে। খবরে দাবি করা হচ্ছে, সৌদি বাদশা ও তার সন্তান যুবরাজ সালমানকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের নিরাপত্তায় তাদের বিমানঘাঁটির একটি বাঙ্কারে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রেস টিভিতে বলা হয়েছে, ওই ঘটনার পর থেকে সৌদি কর্তৃপক্ষ যুবরাজ সালমানের কোনো ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করেনি। এমননি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এপ্রিলের শেষের দিকে যখন সৌদি সফরে যান তখনও যুবরাজ সালমানকে কোনো ছবিতে দেখা যায়নি। যদিও খবরে বলা হচ্ছে, যুবরাজ সালমান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু সৌদির বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইরের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ছবি ছাড়া কোনো ছবি প্রকাশিত হয়নি।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, যুবরাজ সালমানকে প্রায়শই গণমাধ্যমে দেখা যায়। কিন্তু গত ২৭ দিন আগে রিয়াদে হামলার পর থেকে তিনি গণমাধ্যমে একেবারেই অনুপস্থিত। দীর্ঘ দিন অদৃশ্য থাকায় যুবরাজ সালমানের পরিণতি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিছু সূত্র দাবি করেছে, সৌদি রাজপরিবারের যেসব সদস্য বাদশা সালমানের বিরোধী তারাই ২১ এপ্রিল হামলা চালিয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
আল জাজিরা ও বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, ২১ এপ্রিল রাতের অন্ধকারে সৌদি আরবের রাজপ্রসাদ চত্ত্বরে হঠাৎ গোলাগুলির ঘটনায় দেশটিতে অভ্যুত্থান চেষ্টা চলছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। রাজপ্রাসাদের বাইরে গোলাগুলির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিকট গুলির শব্দ নানা গুঞ্জনের জন্ম দেয়। পরে সৌদি আরবের নিরাপত্তা বাহিনী দাবি করেছে, গুলি করে একটি ড্রোন নামানো হয়েছে। ড্রোনটি খেলনা বলে চিহ্নিত করেছে তারা।
আসলে এটি অভ্যুত্থান চেষ্টা ছিল নাকি এমন সম্ভাবনা ধাপাচাপা দিতেই ড্রোনের নাটক সাজানো হয়েছে- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দেশটির বিভিন্ন মহলে। শুধু সৌদি আরবেই নয় সারা বিশ্বেই এ ঘটনাকে অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রের অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপর সৌদির কয়েকটি স্থানীয় পত্রিকায় বলা হয়, গোলাগুলির সময় বাদশা সালমান নিকটবর্তী মার্কিন ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন।