২০১৫ সালের মাইলফলক চুক্তিটিকে এর আগে ‘উন্মাদ’ বলে বর্ণনা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বিশ্ব শক্তি ও ইরানের মধ্যকার চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে জেসিপিওএ নামে পরিচিত। চুক্তিতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার শর্তে ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে সম্প্রতি ‘মারাত্মক ত্রুটি’র অভিযোগ তুলে ট্রাম্প চুক্তিটি থেকে বের হয়ে আসতে চাইছেন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রো তিনদিনের সফরে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে যান।
সংবাদ সম্মেলনে ম্যাঁক্রো বলেন, ‘এখন থেকে আমরা ইরানের সঙ্গে নতুন চুক্তির জন্য কার করবো বলে আশা করছি। আঞ্চলিক শক্তি ও ইরানের নেতাদের সঙ্গে একত্রে মিলে আমাদের একটি নতুন চুক্তি করতে হবে। এটাই স্থিতিশীলতা আনার একমাত্র উপায়’। ম্যাঁক্রো বলেন, যেকোনও নতুন চুক্তিতে অবশ্যই ২০২৫ সাল পর্যন্ত ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ রাখা হবে। ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি এবং ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাক ও লেববানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করা থেকে বিরত রাখা হবে।
বর্তমান চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ২০২৫ সালের পর ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি আবারও চালু করতে পারবে। ওয়াশিংটনে আল জাজিরা প্রতিবেদক কিমবারলি হালকেট বলেন, ট্রাম্প ও ম্যাঁক্রোকে দেখে মনে হয়েছে তারা ২০১৫ সালের প্রাথমিক চুক্তিটিকে বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে একমত হয়েছে। হালটকেট বলেন, এনামুয়েল ম্যাঁক্রোর কথায় মনে হয়েছে, ২০১৫ সালের চুক্তিটিকে নতুন বিস্তারিত চুক্তির একটি ভিত্তি হিসেবে নেওয়া হবে। এতে ২০২৫ সালের পরও নিরাপত্তা বিষয়ে নির্দেশনা থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, বিদ্যমান চুক্তিটি দুর্বল ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি সতর্ক করে দেন, যদি ইরান আবারও তাদের পরমাণু কার্যক্রম শুরু করে তাহলে তাদের বিশাল সমস্যার মুখে পড়তে হবে। ট্রাম্প বলেন, ‘ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র একমত হয়েছে যে, ইরানকে কখনও পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া যাবে না আর দেশটির সরকারকে অবশ্যই সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করা বন্ধ করতে হবে’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আপনি মধ্যপ্রাচ্যের যেখানেই যাবেন সব সমস্যার পেছনে ইরানের জড়িত থাকার প্রমাণ পাবেন’।
মঙ্গলবার ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ট্রাম্পকে চুক্তিতে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নইলে করুণ পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। টেলিভিশনে দেওয়া ওই বক্তব্যে রুহানি বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি অনুযায়ী তাদের প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হয়, তাহলে ইরান সরকারও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জাফরি মঙ্গলবার বলেন, জেসিপিওএ থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে গেলে ইরানকেও একই কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চুক্তি প্রত্যাহার করে নেয়, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইরানও চুক্তিটি প্রত্যাহার করবে। সেখানে ইরানের থাকার জন্য আর কোনও চুক্তিই থাকবে না।’