ঢাকা ১০:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
জমকালো আয়োজনে সিলেটে “কালবেলা”র দ্বিতীয় প্রতিবার্ষিকী পালিত সামাজিক সংস্থা ‘সাফ’ এর নতুন কমিটি গঠন : নয়ন সভাপতি, আকাশ হেলাল সহসভাপতি, রুবেল সাধারন সম্পাদক পাথর ও মানুষ – শ্যামল বণিক অঞ্জন বালাগঞ্জে যৌথ বাহিনীর অভিযান: অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার গহরপুর ছাত্রকল্যাণ পরিষদের কার্যকরী কমিটি গঠিত ছাত্রদের স্যালুট, অভিজ্ঞদের মূল্যায়ন করতে হবে- বিচারপতি নজরুল চৌধুরী ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালো‘অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’ সামাজিক সংগঠন ‘সাফ’ এর উদ্যোগে প্যারিসে ‘বিশ্ব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা দিবস ২০২৪’ পালন বালাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাব থেকে শাহাব উদ্দিন ও জিল্লুর রহমান জিলুকে বহিস্কার প্যারিসে টেপ টেনিস ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত : চ্যাম্পিয়ন সিলেট ফাইটার্স

সড়কে নৈরাজ্যঃ সবার আগে দুর্নীতি থামান

  • আপডেট সময় ০৪:০৫:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অগাস্ট ২০১৮
  • ২৬২ বার পড়া হয়েছে

মোহাম্মদ জাফরুল হাসানঃ দুর্নীতি আজ আমাদের রন্দ্রে রন্দ্রে। দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ান খেতাব পাওয়ার দীর্ঘদিনর পর সে কলঙ্কময় খেতাব থেকে কতটুকু সরে আসতে পেরেছি। নজিরবিহীন দুর্নীতির ফলেই আজ সড়কে মৃত্যুর মিছিল।
দেশে ৩৫ লক্ষ গাড়ি আর ১৯ লক্ষ চালক। হিসেব মতে ১৬ লক্ষ গাড়ির কোনো চালক নেই। তাহলে সেই গাড়িগুলো চালায় কে? একমাত্র দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থার কারণেই আজ বাকি ১৬ লক্ষ চালকের হাতে প্রতিদিন গড়ে ১২ জন নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে। পরিবহণের নৈরাজ্যের কারণে অকালে ঝড়ে পড়ছে সম্ভাবনাময় অনেক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। পরিবারে আশা-আকাক্সক্ষা মুহূর্তের মধ্যে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিচ্ছে পরিবহণের চালক নামের বিবেক-বিবর্জিত মানুষগুলো। তাদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর দরুন সড়কে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মিছিল লম্বা হচ্ছে। কিন্তু তাতে করে রাষ্ট্রের যেন কোন প্রকার মাথা ব্যথা নেই। জবাবদিহিতার কোন বালাই নেই। যে যেভাবে পারছে মানুষকে জিম্মীদশায় পরিণত করে ছাড়ছে।
গজারিয়ায় পায়েলকে বাসের সুপার ভাইজার থেকে শুরু করে হেলপার এবং চালক যেভাবে নৃশংসভাবে নদীতে ফেলে দিল তা সভ্য সমাজে চিন্তা করা যায় না। তাদের পশুর সাথে তুলনা করলেও পশু সমাজের দুর্নাম করা হবে। পশুর আচরণে এতোটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। তারা বিনা কারণে অন্য কোন প্রাণীকে এভাবে হত্যা করে না। তাকে যদি আহত অবস্থাতেও ফেলে যেতো তাহলেও কোন মানবকুলের কারণে সে বেঁচে যেতো। এদিকে আরো ভয়ানকভাবে কুর্মিটোলা ফ্লাইওভারের ঢালে দুই বাসের রেষারেষিতে জাবালে নূর গাড়ির চালক গাড়ির জন্য অপেক্ষারত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর যেভাবে বাসটি উঠিয়ে হত্যা করলো সে নিষ্ঠুরতার কোন হিসাব মিলে না। আহতদের চিৎকারে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে। এর আগে রাজীবের ঘটনাটি দেশের মানুষ এখনও ভুলে যায়নি। বাবা-মা হারা রাজীবের আরো দুটি ভাই ছিল। যারা রাজীবের ভবিষ্যৎ পথের দিকে চেয়ে ছিল। আজ রাজীবের সেই এতিম ভাইগুলো রাজীবকে হারিয়ে যেন আরো এতিম হয়ে গেলো। সেই ঘটনা যদি রাষ্ট্রে যারা ক্ষমতার মসনদে বসে আছে , তাদের মনন জুড়ে যদি সামান্যটুকু রেখাপাত করতে পারতো তাহলে কুর্মিটোলার ফ্লাইওভারের ঘটনা ঘটতে পারতো না।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ মতে, দেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে কিছু টাকা খরচ করলেই হয়। আর এ লাইসেন্সটি পেলে যখন-তখন আপনার ইচ্ছা মতো মানুষ হত্যা করে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে পারেন। বাস্তবতা আজ এতো কঠিন যে, রাস্তায় মানুষ হত্যা করতে যেন কোনো অস্ত্রের প্রয়োজন নেই।
দুর্ঘটনার যে বিবরণ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয় তা থেকে মনে হয় এসব দুর্ঘটনা হয়তো এড়ানো সম্ভব। সড়ক পথে সাধারণ কতগুলি নিয়মকানুন মেনে চললে হয়তো এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটত না। গাড়ি চললে কিছু দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে কিন্তু সেটা যদি দুর্ঘটনা বা এ্যাক্সিডেন্ট না হয়ে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিনত হয়, যদি চালক বা সংশ্লিষ্টদের চরম অবহেলার কারণে এমন ঘটে তা হলে সেগুলিকে হত্যাকাণ্ড বলাই সঠিক হবে।
এবার নজর দেই গত ক’দিন আগের দুর্ঘটনার দিকে। ঘাতক চালকের অসাবধানতা প্রাণ গেলো স্কুল-কলেজ পড়ুয়া দু’জন শীক্ষার্থীর। আচ্ছা, এ দুই শিক্ষার্থীর বাজার মূল্য বিশ লাখ টাকা? যদি তাই হয়, আমি আপনাকে পিষে বিশ লাখ টাকা দিয়ে দিবো। আপনি কি রাজী?অনেকেই এখন এসব দুর্ঘটনার কারণ, প্রতিকারের উপায়, যোগাযোগ ব্যবস্থার বিপর্যয় এসব নিয়ে আলোচনা করেন। অতীতেও বিভিন্ন দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলোচনার ঝড় বয়ে গেছে। সরকার কিছু হুঙ্কার দিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত সবকিছু স্থিমিত হয়ে এসেছে। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই গেছে।
দেশে ট্রাফিক আইন আছে-হুঙ্কার আছে, কিন্তু ট্রাফিক আইনের কোন প্রয়োগ নেই। অনেকেই ট্রাফিক আইনের কোন পরোয়াই করে না। ট্রাফিক সিগনাল অমান্য করে গাড়ি চলে যায়, ট্রাফিক পুলিশ অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।
আইন প্রয়োগের নিষ্ঠা ও সব দেশে মানুষকে তা প্রতিপালনের শক্ত অভ্যাসে পৌঁছে দিয়েছে। হ্যাঁ, তা এক দিনে হয়নি। কিন্তু হয়েছে। আমাদের হচ্ছে না, কারণ আমরা আসলে চাইছি না। বিপরীতে ওই কচু কাটার অভ্যাসটাকেই এমন পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছি প্রশ্রয়ে ও অব্যবস্থাপনায়। যে ‘কচু কাটা’র ধারাবাহিকতায় পরিবহণ খাত আজ পাকা ও পেশাদার খুনির মতো প্রতিদিন বোঁটা থেকে ফুল খসাবার চেয়েও সহজ অবলীলায় মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে রোজ। কতদিন চলবে এমন অব্যবস্থাপনার ভোজ !

লেখকঃ প্রধান প্রতিবেদক- ফ্রান্স দর্পন।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

লক ডাউন পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফ্রান্সে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি

যুক্তরাজ্যে করোনার মধ্যেই শিশুদের মাঝে নতুন রোগের হানা

জমকালো আয়োজনে সিলেটে “কালবেলা”র দ্বিতীয় প্রতিবার্ষিকী পালিত

সড়কে নৈরাজ্যঃ সবার আগে দুর্নীতি থামান

আপডেট সময় ০৪:০৫:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অগাস্ট ২০১৮

মোহাম্মদ জাফরুল হাসানঃ দুর্নীতি আজ আমাদের রন্দ্রে রন্দ্রে। দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ান খেতাব পাওয়ার দীর্ঘদিনর পর সে কলঙ্কময় খেতাব থেকে কতটুকু সরে আসতে পেরেছি। নজিরবিহীন দুর্নীতির ফলেই আজ সড়কে মৃত্যুর মিছিল।
দেশে ৩৫ লক্ষ গাড়ি আর ১৯ লক্ষ চালক। হিসেব মতে ১৬ লক্ষ গাড়ির কোনো চালক নেই। তাহলে সেই গাড়িগুলো চালায় কে? একমাত্র দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থার কারণেই আজ বাকি ১৬ লক্ষ চালকের হাতে প্রতিদিন গড়ে ১২ জন নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে। পরিবহণের নৈরাজ্যের কারণে অকালে ঝড়ে পড়ছে সম্ভাবনাময় অনেক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। পরিবারে আশা-আকাক্সক্ষা মুহূর্তের মধ্যে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিচ্ছে পরিবহণের চালক নামের বিবেক-বিবর্জিত মানুষগুলো। তাদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর দরুন সড়কে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মিছিল লম্বা হচ্ছে। কিন্তু তাতে করে রাষ্ট্রের যেন কোন প্রকার মাথা ব্যথা নেই। জবাবদিহিতার কোন বালাই নেই। যে যেভাবে পারছে মানুষকে জিম্মীদশায় পরিণত করে ছাড়ছে।
গজারিয়ায় পায়েলকে বাসের সুপার ভাইজার থেকে শুরু করে হেলপার এবং চালক যেভাবে নৃশংসভাবে নদীতে ফেলে দিল তা সভ্য সমাজে চিন্তা করা যায় না। তাদের পশুর সাথে তুলনা করলেও পশু সমাজের দুর্নাম করা হবে। পশুর আচরণে এতোটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। তারা বিনা কারণে অন্য কোন প্রাণীকে এভাবে হত্যা করে না। তাকে যদি আহত অবস্থাতেও ফেলে যেতো তাহলেও কোন মানবকুলের কারণে সে বেঁচে যেতো। এদিকে আরো ভয়ানকভাবে কুর্মিটোলা ফ্লাইওভারের ঢালে দুই বাসের রেষারেষিতে জাবালে নূর গাড়ির চালক গাড়ির জন্য অপেক্ষারত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর যেভাবে বাসটি উঠিয়ে হত্যা করলো সে নিষ্ঠুরতার কোন হিসাব মিলে না। আহতদের চিৎকারে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে। এর আগে রাজীবের ঘটনাটি দেশের মানুষ এখনও ভুলে যায়নি। বাবা-মা হারা রাজীবের আরো দুটি ভাই ছিল। যারা রাজীবের ভবিষ্যৎ পথের দিকে চেয়ে ছিল। আজ রাজীবের সেই এতিম ভাইগুলো রাজীবকে হারিয়ে যেন আরো এতিম হয়ে গেলো। সেই ঘটনা যদি রাষ্ট্রে যারা ক্ষমতার মসনদে বসে আছে , তাদের মনন জুড়ে যদি সামান্যটুকু রেখাপাত করতে পারতো তাহলে কুর্মিটোলার ফ্লাইওভারের ঘটনা ঘটতে পারতো না।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ মতে, দেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে কিছু টাকা খরচ করলেই হয়। আর এ লাইসেন্সটি পেলে যখন-তখন আপনার ইচ্ছা মতো মানুষ হত্যা করে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে পারেন। বাস্তবতা আজ এতো কঠিন যে, রাস্তায় মানুষ হত্যা করতে যেন কোনো অস্ত্রের প্রয়োজন নেই।
দুর্ঘটনার যে বিবরণ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয় তা থেকে মনে হয় এসব দুর্ঘটনা হয়তো এড়ানো সম্ভব। সড়ক পথে সাধারণ কতগুলি নিয়মকানুন মেনে চললে হয়তো এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটত না। গাড়ি চললে কিছু দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে কিন্তু সেটা যদি দুর্ঘটনা বা এ্যাক্সিডেন্ট না হয়ে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিনত হয়, যদি চালক বা সংশ্লিষ্টদের চরম অবহেলার কারণে এমন ঘটে তা হলে সেগুলিকে হত্যাকাণ্ড বলাই সঠিক হবে।
এবার নজর দেই গত ক’দিন আগের দুর্ঘটনার দিকে। ঘাতক চালকের অসাবধানতা প্রাণ গেলো স্কুল-কলেজ পড়ুয়া দু’জন শীক্ষার্থীর। আচ্ছা, এ দুই শিক্ষার্থীর বাজার মূল্য বিশ লাখ টাকা? যদি তাই হয়, আমি আপনাকে পিষে বিশ লাখ টাকা দিয়ে দিবো। আপনি কি রাজী?অনেকেই এখন এসব দুর্ঘটনার কারণ, প্রতিকারের উপায়, যোগাযোগ ব্যবস্থার বিপর্যয় এসব নিয়ে আলোচনা করেন। অতীতেও বিভিন্ন দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলোচনার ঝড় বয়ে গেছে। সরকার কিছু হুঙ্কার দিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত সবকিছু স্থিমিত হয়ে এসেছে। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই গেছে।
দেশে ট্রাফিক আইন আছে-হুঙ্কার আছে, কিন্তু ট্রাফিক আইনের কোন প্রয়োগ নেই। অনেকেই ট্রাফিক আইনের কোন পরোয়াই করে না। ট্রাফিক সিগনাল অমান্য করে গাড়ি চলে যায়, ট্রাফিক পুলিশ অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।
আইন প্রয়োগের নিষ্ঠা ও সব দেশে মানুষকে তা প্রতিপালনের শক্ত অভ্যাসে পৌঁছে দিয়েছে। হ্যাঁ, তা এক দিনে হয়নি। কিন্তু হয়েছে। আমাদের হচ্ছে না, কারণ আমরা আসলে চাইছি না। বিপরীতে ওই কচু কাটার অভ্যাসটাকেই এমন পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছি প্রশ্রয়ে ও অব্যবস্থাপনায়। যে ‘কচু কাটা’র ধারাবাহিকতায় পরিবহণ খাত আজ পাকা ও পেশাদার খুনির মতো প্রতিদিন বোঁটা থেকে ফুল খসাবার চেয়েও সহজ অবলীলায় মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে রোজ। কতদিন চলবে এমন অব্যবস্থাপনার ভোজ !

লেখকঃ প্রধান প্রতিবেদক- ফ্রান্স দর্পন।